ছাত্রলীগকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে: ওবায়দুল কাদের

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হলে ছাত্রলীগকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৭ সালে আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ। উন্নয়নের মহাসড়কের প্রধান বাধা এই উগ্রবাদ। এই চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে হবে। আমরা উগ্র সাম্প্রদায়িক বাধাকে ক্যাম্পাসে প্রতিহত করব, প্রতিরোধ করব, পরাজিত হবে। এটাই হবে ছাত্রলীগের অঙ্গীকার।

ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তোমাদের মেধা দিয়ে, যোগ্যতা দিয়ে, তোমাদের আচরণ দিয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে ছাত্রলীগকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।’

ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ করে কাদের বলেন, ‘২০১৭ সালের অঙ্গীকার অনুপ্রবেশকারী ও পরগাছামুক্ত ছাত্রলীগ চাই। এই পরগাছা ও অনুপ্রবেশকারীরা হচ্ছে ছাত্রলীগের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। এদের চিহ্নিত করতে হবে। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটি গঠনের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন, পরগাছা দলের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা সৃষ্টি করে। চিহ্নিত কয়েকজন পরগাছার জন্য বদনাম হয় গোটা পার্টির। বদনাম হয় সরকারের।’

ছাত্রলীগকে বিতর্কে ঊর্ধ্বে রাখার বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনাও দেন কাদের। তিনি বলেন, ‘বিতর্কিতদের দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি করা যাবে না। নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি করতে হবে; সেই ধারা শুরু হয়েছে। ত্যাগী কর্মীরা যেন কোণঠাসা না হয়। ছাত্রলীগে যেন পকেট কমিটি কোথাও না হয়। এটা আমি বিশেষভাবে বলছি। আজকে অমুকের এই ভাগ, তমুকের ওই ভাগ। এই ভাগাভাগি করলে ছাত্রলীগের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে।’ দলীয় নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনার এক ভাগ, আরেকজনের আরেক ভাগ। এইজনের এই গ্রুপ। আরেকজনের আরেক গ্রুপ। এই গ্রুপের ভাগাভাগি ছাত্রলীগে চলবে না, চলতে দেওয়া যাবে না।’

ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণার সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আজকে কথায় কথায় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এটা খুব অশুভ প্রবণতা। কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতা। যদি অভ্যন্তরীণ গোলমালের জন্য পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়, সেটার জন্য আমাদের সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা আছে। যে গোলমাল করবে, তাঁকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে হবে। কিন্তু এই অজুহাতে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে অগণিত ছাত্রছাত্রীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সিন্ডিকেটের কাজ নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটও চলবে না। অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণাও চলবে না। এটা যারা করে, তাদের ব্যর্থতা।’

উদ্বোধনী বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর ছাত্রসংসদ নির্বাচনের যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন। শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের ছাত্রসংসদ নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখার জন্য ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নির্বাচন যখন হবে, তখন প্রার্থীরা ভাববেন, আমি যদি খারাপ আচরণ করি, তাহলে ভোটাররা আমাকে নির্বাচনে ভোট দেবে না। সে এমনিতেই সংশোধন হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় জাতীয় নেতৃত্বে নতুন নেতা আসছে না।

ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা।