সাঈদীর মুক্তির জন্য বৈঠক, সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া কে এই রকি বড়ুয়া?

চট্টগ্রাম : যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তি চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন নুরুল কবির নামের সীতাকুণ্ডের এক মাদ্রাসাঅধ্যক্ষ।

সোমবার (৪ মে) রাতে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের খবর মঙ্গলবার সকালে একুশে পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সাঈদী ইস্যুতে এর চেয়েও ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দেওয়া রকি বড়ুয়াকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অঞ্চলের মানুষ। অনেকে একুশে পত্রিকার সাথে যোগাযোগ করে ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি তাকে গ্রেপ্তারে প্রশাসনের নির্লিপ্ততার প্রশ্ন তোলেন।

তাদের প্রশ্ন, সাঈদীর মুক্তির দাবিতে দুই লাইনের একটি স্ট্যাটাস দিয়ে কেউ যদি গ্রেপ্তার হন, তাহলে সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদী এবং সাঈদী অনুসারী বিতর্কিত ইসলামী বক্তা তারেক মনোয়ারের সাথে সাঈদীর মুক্তির জন্য রুদ্ধদ্বার বৈঠক, এরপর ফেসবুকে তা প্রচার করে সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া রকি বড়ুয়া একমাসেও গ্রেপ্তার হয় না কেন? তার খুঁটির জোর কোথায়? কী তার নেপথ্য শক্তি- এসব প্রশ্ন এখন সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মানুষের মুখে মুখে।

জানা যায়, গত ১ এপ্রিল মধ্যরাতে লকডাউন পরিস্থিতিতে লোহাগাড়ার চরম্বা ইউনিয়নের বিবিবিলা বড়ুয়া পাড়ায় এসে জনৈক রকি বড়ুয়ার সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন যুদ্ধাপরাধে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পুত্র মাসুদ সাঈদী, মাওলানা তারেক মনোয়ার ও কয়েকজন জামায়াত নেতা।

বিতর্কিত ইসলামী বক্তা, সাঈদীর যোগ্য উত্তরসুরী খ্যাত তারেক মনোয়ার ও আজহারী ওয়াজ মাহফিল করে বলেছেন, ‘ঘরে ঘরে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী বেরিয়ে আসবে। এখন আর তীর ধনুকের যুগ নেই, এখন একে ফোরটি সেভেনের যুগ।’ এটি প্রচ্ছন্ন নয়, প্রকাশ্যে হুমকি দাবি করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদ অধিবেশনে এ নিয়ে কথা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তৃতা দেন এক সংসদ সদস্য। একই কারণে ২০১৯ সালের নভেম্বরে কুমিল্লায় তারেক মনোয়ারের ওয়াজ নিষিদ্ধ করে প্রশাসন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সেই বিতর্কিত তারেক মনোয়ার এবং সাঈদীপুত্রের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সহায়তায় সাঈদীকে মুক্তির বিষয়ে রাতভর বৈঠক করেন রকি বড়ুয়া। তারা রকির বাড়িতে রাতে খাওয়াদাওয়া করেন এবং বৈঠক শেষে সকাল ৮টায় সড়ক পথে ঢাকা ফিরে যান। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সাথে তোলা বৈঠকের ছবি পোস্ট দেন রকি বড়ুয়া।

এরপর স্থানীয়দের মনে শুরু হয় নানা প্রশ্ন ও কৌতূহল। দুই লাখ টাকার কম কম হলে তারেক মনোয়ার যেখানে ওয়াজ করতে যান না, সেখানে লকডাউন সময়ে রকি বড়ুয়ার বাড়িতে তারেক মনোয়ার ও সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদীর কাজ কী?

স্থানীয়দের এমন কৌতূহলের জবাবে রকি বড়ুয়া বলে বেড়ান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সহযোগিতায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে জেল থেকে বের করার জন্য এই বৈঠক। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরো্ধ করতে নরেন্দ্র মোদির সাথে তার কথা হয়েছে বলেও স্থানীয়দের কাছে বলে বেড়ান রকি বড়ুয়া। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মুক্তির জন্য যুদ্ধাপরাধীদের সুহৃদ, সতীর্থদের সাথে বৈঠকের ছবি ফলাও করে প্রচার করে সাধারণ মানুষের মাঝে নিজের ক্ষমতা ও শক্তির পরিধি বোঝানোর চেষ্টা করেন রকি বড়ুয়া।

আপনার ডর-ভয় নেই, স্থানীয়দের এমন জিজ্ঞাসায় রকি বড়ুয়ার ‘থোরাই কেয়ার’ ভাব! তিনি বিশাল ভাবসাব নিয়ে স্থানীয়দের বলেন, প্রশাসনের লোকজন ফোন করেছিল, তাদেরকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি এটা আমার ইন্টারনাল ব্যাপার। আপনারা এ বিষয়ে মাথা ঘামাবেন না। এরপর আর কেউ মাথা ঘামায়নি। শুধু তাই নয়, তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর, তার কথায় সরকার ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা উঠবস করেন বলে প্রায় বলে বেড়ান রকি বড়ুয়া। কাউকে গোণার সময় তার নেই- এমন দম্ভোক্তির একটি ভিডিও স্থানীয়দের হাতে হাতে ঘুরেছিল কিছুদিন আগে।

স্থানীয়দের অভিমত, রকি বড়ুয়ার ক্ষমতা বটে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মুক্তির জন্য বৈঠক করে গর্বের সাথে প্রকাশ্যে যিনি বলে বেড়ান, কেউ তার কেশগুচ্ছ ছিঁড়তে পারে না মর্মে হুংকার ছাড়ার পরও বহাল তবিয়তে থাকেন রকি বড়ুয়া, উল্টো এমপি, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও তাকে সমীহ করেন বলে চাউর আছে, সেখানে রকি বড়ুয়ার কিছুই হবে না।

এমন প্রতিষ্ঠিত ধারণার মাঝেই শনিবার (২ মে) চরম্বা ইউনিয়নের জনৈক ওসমানের যৌথ মালিকানাধীন পুকুর থেকে জোরপূর্বক মাছ তুলে নিতে গিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেন রকি বড়ুয়া। নির্বিচারে মাছ নিধনে পুকুরের আরেক অংশীদার মহিউদ্দিন বাধা দিলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে সংশ্লিষ্টদের জিম্মি করেন রকি বড়ুয়া। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে এই জিম্মিদশার অবসান হলেও এরপর রকি বড়ুয়া নিজেই নিজের বৌদ্ধমন্দির ভাঙচুর করে নিজেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এ সংক্রান্ত নাটকের দুর্বল স্ক্রিপটের ফোনালাপের অডিও ফাঁস হলে রকি বড়ুয়ার একের পর এক অপরাধের বিষয়গুলো নতুন করে সামনে উঠে আসে। সেই সাথে জোরালো হয় তার শাস্তির দাবি।

রকির খায়েস : মৎস্য মারিব পরের পুকুরে, খাইব আমি সুখে

সেদিনের জিম্মিদশার বর্ণনা দিয়ে লোহাগাড়া চরম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসহাব উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে জানান, রকি বড়ুয়ার অদ্ভুত সব সখের মাঝে মাছ ধরা একটি বড় সখ। নিজের পুকুর না থাকলেও মাছ ধরে ভক্ষণ করতে সমস্যা হয় না তার। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে যে পুকুরই পছন্দ হবে সেখানেই তিনি প্রথমে বড়শি এবং পরে ৩-৪ টি হাতজাল দিয়ে বস্তায় বস্তায় মাছ তুলে গাড়ির ব্যাকডালায় করে নিয়ে যান। ভারত-কানেকশন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মন্ত্রী-এমপি, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্কের নিত্যনতুন গল্প তৈরি করে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া জুড়ে ছড়ি ঘোরান, তৈরি করেন একচ্ছত্র আধিপত্য। রকি বড়ুয়া বাড়িতে থাকলে পুলিশ গিয়ে টহল দেয়, কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা খোঁজ নেয়। বলেন আসহাব উদ্দিনসহ স্থানীয় অনেকে।

আসহাব উদ্দিন জানান, প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে সম্পর্ক থাকার ফলে প্রশাসনের লোকদের দিয়ে পুকুর মালিকের কাছে বড়শি ফেলার ’বার্তা’ পাঠান রকি বড়ুয়া। সাথে খাবার-দাবারের ব্যবস্থা, খাতির-যত্ন করতেও বলে দেওয়া হয় উপর থেকে। এভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করে লোহাগাড়া-সাতকানিয়ায় খুব কম পুকুরই আছে, যেখানে নির্বিচারে মৎস্যনিধন করেননি রকি বড়ুয়া। দেখা গেলো, যে পুকুরে মাছ ধরতে গেলেন সেই পুকুরটি কারো কারো জীবিকার একমাত্র মাধ্যম, পুকুরের মাছ বিক্রির টাকা দিয়েই চলে সংশ্লিষ্টদের জীবন। মালিকপক্ষের ’বোবা কান্না’ ছাপিয়ে ভোর থেকে রাত পর্য়ন্ত নির্বিচারে চলে সেই পুকুরে রকি বড়ুয়ার মৎস্যনিধন। বুক ফেটে গেলেও কারো কিছু বলার সাহস নেই। যত্নআত্তি দিয়ে বড় করা মৎস্যবধ-এর দৃশ্যটাই কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে হয় তাদের।

ডেটলাইন ২ মে : মৎস্যনিধনে বাধা, জিম্মিদশা, মন্দির ভাঙচুরের নাটক

‘শনিবার (৩ মে) চরম্বা ইউনিয়নে জনৈক ওসমানের পুকুরে একই কায়দায় মাছ ধরতে যান রকি বড়ুয়া। কিছুক্ষণ বড়শি দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টার একপর্যায়ে সহযোগীদের নিয়ে ৩-৪ টি জাল দিয়ে পুরো পুকুর চষে বেড়ান রকি বড়ুয়া। এক পর্যায়ে জামাই আদরে স্থানীয় কুদ্দুস রেস্টুরেন্টে ব্যবস্থা করা দুপুরের খাবার খেতে যান রকি বড়ুয়া। ওই সময় রকি বড়ুয়ার বাকি সহযোগীদের গিয়ে এভাবে মাছ নিধন না করতে অনুরোধ করেন যৌথ পুকুর মালিকের আরেক ভাই মহিউদ্দিন।

দুপুরের খাবার খেতে আসা রকি বড়ুয়া টেলিফোনে এই কথা শুনে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন। এই তল্লাটে তাকে বাধা দেওয়ার মানুষও আছে তাহলে? সেই বীরপুরুষটা কে, একবার দেখিয়ে দিতে চান রকি। ক্ষোভের আগুনে জ্বলে ওঠা রকি বড়ুয়া স্থানীয় নাফারটিলা চৌমুহনী বাজারে গিয়ে লোক জড়ো করেন। জরুরিভিত্তিতে তলব করেন চরম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসহাব উদ্দিনকে; যার সাথে বাধা দেওয়া মহিউদ্দিনের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বিদ্যমান।

আসহাব উদ্দিন বলেন, রকি বড়ুয়া ফোন করে জানান, আমাকে এখনই নাফারটিলা বাজারে যেতে হবে। আমি বলি, আমি লুঙ্গি পরে বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছি। শরীরটা একটু ক্লান্ত। আর কিছুক্ষণ পরই ইফতার। ইফতার সেরে দেখা করি? কিন্তু রকি বড়ুয়া মানতে নারাজ। এখনই যেতে হবে বলে জানান। উপায় না দেখে সেই অবস্থায় বাজারে ছুটে যাই। যাওয়ার পর রকি বড়ুয়া বলেন, মহিউদ্দিন তার সাথে বেয়াদবি করেছে। এখনই যেন তাকে (মহিউদ্দিন) রকি বড়ুয়ার পায়ে ফেলি।

আসহাব উদ্দিন জানান, যুদ্ধংদেহী অবস্থা দেখে রকি বড়ুয়াকে আমি বলি, ভাই, আপনি মাথা ঠাণ্ডা করে বাড়ি যান। আমার উপর আস্থা রাখুন। আপনাকে কথা দিচ্ছি, ইফতারের পর মহিউদ্দিন ও তার অভিভাবকদের নিয়ে আপনার কাছেই যাব। সেখানে বসেই বিষয়টির সুরাহা হবে। প্রয়োজনে মহিউদ্দিন আপনার কাছে ক্ষমা চাইবে। তাতে রাজি হয়ে রকি বড়ুয়া ও তার সহযোগীরা চলে যান। এদিকে আমি বাড়ি ফিরে আসি। ইফতারের পর শুনতে পাই রকি বড়ুয়ার বাড়ির কাছে ইটভাটায় নিয়োজিত আমার একটি এসকেভেটর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে চাচ্ছে রকি বড়ুয়ার লোকজন।

সাথে সাথে তাকে ফোন দিয়ে বলি, দয়া করে আমার এসকেভটরের কোনো ক্ষতি করবেন না। আমরা তো আপনার কাছে আসছিই। এরপর স্থানীয় মেম্বার নজির, কালূ, মহিউদ্দিনের এক আত্মীয়সহ আমরা পাঁচজন রকি বড়ুয়ার বাড়িতে যাই। যাওয়ার আগে শুনতে পাই, বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোন করে লোকজন জড়ো করা হচ্ছে। তাই মহিউদ্দিনকে আমরা সাথে নিয়ে যাইনি। আর নিয়ে যাইনি কেন সে কারণে শত শত লোকের সামনে আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। রকি বড়ুয়ার একটাই কথা, মহিউদ্দিনকে হাজির করা না হলে পরিণতি খুব ভয়াবহ হবে।

আসহাব জানান, এই অবস্থায় মহিউদ্দিনকে নিয়ে আসার জন্য আমাদের সাথে আসা দুইজনকে আবারো পাঠিয়ে দিই। তারা পৌঁছে ফোন করে জানান, এমন পরিস্থিতিতে মহিউদ্দিন আসতে রাজি নয়। এই কথা শোনে আমরা তিনজনকে জিম্মি করে মারধর করতে থাকে রকি এবং তার লোকজন। রাউজানের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়াও যোগ দেয় রকির সাথে।

আসহাব উদ্দিন বলেন, মুহূর্তের মধ্যে পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যায়। মনে হচ্ছিল এই রাতই আমাদের শেষ রাত। অনন্যোপায় হয়ে রাত প্রায় দেড়টার দিকে ফোন করে এমপি নদভী সাহেবের হস্তক্ষেপ কামনা করি। তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান। এর আগে লোহাগাড়া থানার ওসি দফায় দফায় রকি বড়ুয়াকে ফোন করে আমাদেরকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় রাত ৩টার দিকে রকি বাহিনীর জিম্মিদশা থেকে আমরা মুক্ত হই। এই ঘটনায় পুলিশ রকি বড়ুয়ার উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং পরদিন সকাল ১১টায় আমরা দুইপক্ষকে থানায় হাজির হতে বলা হয়।

আসহাব উদ্দিন জানান, রকি বড়ুয়ার জিম্মিদশা থেকে মুুক্তিলাভের পর বাড়ি ফিরে সেহেরি খেয়ে সাথে সাথে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল ৮টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মারধর এবং জখমের চিকিৎসা করি। এরমধ্যেই শুনতে পাই রকি বড়ুয়ার বাড়ির সামনে অবস্থিত বিবিবিলা বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার নাটক। ভোর চারটার দিকে স্থানীয় কায়সার হামিদ, কায়সারের ভাই এবং শহীদ নামের একজনকে মোবাইল ফোনে মন্দির ভাংচুরের জন্য রকি বড়ুয়ার ডেকে আনা এবং ভাঙচুরের পর ফোনালাপের তিনটি অডিও স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হয় ঘটনার পর। মূলত সেই অডিও, ফোনালাপ সবার কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে রকি বড়ুয়ার মন্দির ভাঙচুরের নাটক। এই ঘটনায় উপর মহলকে দিয়ে চাপ সৃষ্টিপূর্বক রকি বড়ুয়া তার বাবাকে বাদি করে থানায় দুইজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। – বলেন আসহাব উদ্দিন।

সিগন্যাল পেলেই রকি বড়ুয়াকে ধরবো : ওসি লোহাগাড়া

এই ঘটনার পর ধিকৃত, নিন্দিত হওয়ার পাশাপাশি গত ৬দিন ধরে রকি বড়ুয়ার নানা অপকর্মের বিচারের দাবিতে সোচ্চার এলাকাবাসী। একইসাথে সাঈদীপুত্রের সঙ্গে বৈঠক করে আস্ফালন করা রকির অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে ভুক্তভোগীরা ফাঁস করছেন তার জারিজুরি।

এ প্রসঙ্গে লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন একুশে পত্রিকাকে জানান, মাছ-নিধনের প্রতিবাদে উদ্ভুত পরিস্থিতি, মারধরের ঘটনা এবং বৌদ্ধমন্দির ভাঙচুরের বিষয়ে থানায় মামলা, পাল্টা মামলা হয়েছে। আমরা দুটি মামলাই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। মামলার সুষ্ঠু তদন্তে আপনারা গণমাধ্যমকর্মীদেরও সহযোগিতা চাই। যেই অপরাধী হোন তাকে আমরা আইনের আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর।

সাঈদীপুত্রের সাথে বৈঠকের বিষয়টি জানেন কিনা, জানলে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জবাবে ওসি জাকির হোসেন বলেন, হ্যাঁ, বিষয়টি আমরা জানি। তবে ফেসবুকে দিয়ে প্রচার করার বিষয়টি আমার জানা নেই। ঊর্ধ্বতন মহলে সাঈদীপুত্রের সাথে বৈঠকের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। সিগন্যাল পেলেই তাকে ধরবো আমরা।

 

রকি বড়ুয়ার শক্তির উৎস কী?

অনুসন্ধান ও একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৪০ বছর বয়সী রকি বড়ুয়া আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে দিল্লীতে পাড়ি জমান। রঙ কাপড় পরে ভিক্ষু সেজে সেখানে জগৎজ্যোতি বিহারে আশ্রয় নেন তিনি। বিহারটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ধর্মবীর পাল (রাজ্যসভার সদস্য) এর সাহচর্যে থাকার সুবাদে বিজেপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী-এমপি এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সাথেও ছবি তোলার সুযোগ হয় তার।

জানা যায়, বাংলাদেশে এসে সেই ছবিগুলোকে পুঁজি করা শুরু করেন রকি। প্রচার করতে থাকেন দিল্লীর রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার- সবার সাথে তার দহরম-মহরম, অন্তরঙ্গতা। সেগুলো শুনে এবং দেখে এলাকার লোকজন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অনেকেই সমীহ করতে থাকেন রকি বড়ুয়াকে। প্রতিষ্ঠিত হয়, লোহাগাড়ার রকি বড়ুয়ার অনেক ক্ষমতা ভারতে। প্রধনামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তাকে যথেষ্ট সম্মান করেন। শুধু তাই নয়, তার ক্ষমতার পরিধি বিস্তৃত বাংলাদেশ পর্যন্ত।

এসব ছবি প্রদর্শন করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সাথেও গড়ে উঠে তার সুসম্পর্ক। তাদের সহযোগিতায় ছবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে, যে ছবিগুলো ভারতে প্রদর্শিত হওয়ার পর সেখানকার মানুষও রকি বড়ুয়াকে ক্ষমতাধর মানুষ হিসেবে ভাবতে থাকে।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-এমপিদের সাথে ছবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ছবি, বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের সঙ্গে সুসম্পর্ক পুঁজি করে মনোনয়ন নিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে রকি বড়ুয়া তার পেছনে ঘুরিয়েছেন অন্তত ডজনখানে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। এজন্য কারো কারো কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা গ্রহণেরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

তার আদ্যোপান্ত জানে এমন এক ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একুশে পত্রিকাকে বলেন, বিভিন্ন সময় রকি বড়ুয়া নিজেকে বাংলাদেশে ভারতের এজেন্ট দাবি করে। রকি বড়ুয়া আমাদের কাছে বলে বেড়ান, ভারত তাকে বাংলাদেশ পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কী করতে চায়, মিয়ানমার থেকে কেন মানুষ এখানে চলে এলো, মিয়ানমার কী করতে চায় এসব দেখভালের দায়িত্ব নাকি ভারত তাকে দিয়েছে।

রকি বড়ুয়াকে কাছ থেকে দেখা এমন এক ব্যক্তি দুঃখপ্রকাশ করে একুশে পত্রিকাকে বলেন, রঙ কাপড় প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর জীবনে একবার পরতে হয়, অর্থাৎ শ্রমন হতে হয়। কিন্তু যিনি একবার ভিক্ষু হয়ে গায়ে রঙ কাপড় জড়াবেন, তিনি আর সেই কাপড় খুলতে পারেন না। জাগতিক বিলাসব্যসন, ভোগবিলাসের উর্দ্ধে চলে যান তিনি।

তিনি বলেন, রকি বড়ুয়া বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কলংক। তিনি রঙ কাপড়টি ক্ষণে ক্ষণে খোলেন আর পরেন। বাংলাদেশে থাকলে তিনি প্যান্টশার্ট পরেন, আর ইন্ডিয়া গেলে রঙ কাপড় ধারণ করেন। দিল্লিতে তিনি একটি আশ্রমের বড় ভান্তের তত্ত্বাবধানে থাকেন। ওই ভান্তে প্রয়াত হবার পর সেই মন্দিরটি দখল করেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে তাদেরকে রঙ কাপড় পরিয়ে জাপান, চীন, আমেরিকাসহ বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রে পাঠাতে থাকেন। ভান্তে সাজিয়ে আদামপাচারের বিষয়টি ধরা পড়লে ভারত সরকার তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দেয়। বাতিল করে ভিক্ষু পরিচয়ে করা পাসপোর্টটি।

অভিযোগ রয়েছে, সেই থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করে বিলাসী জীবন যাপন করছেন রকি বড়ুয়া। চট্টগ্রাম শহরে তার বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, ঢাকায় অ্যাপার্টমেন্টে। বিয়ে করেছেন অনেক আগে। তিন সন্তানসহ স্ত্রীকে রেখেছেন কক্সবাজারের বিলাসী ফ্ল্যাটে। ভারত সরকারের সাথে কথিত সম্পর্কের গালগল্প ছড়িয়ে প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে সেই সম্পর্ককে এখন তিনি পুঁজি করছেন। সেই পুঁজিতে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় গড়ে তুলেছেন বিশাল বাহিনী, ত্রাসের রাজত্ব, একচ্ছত্র আধিপত্য। যত্রতত্র মৎস্যনিধন, বালুর মহাল ও জমি দখলসহ এমন কোনো কাজ নেই, রকি বড়ুয়া করছেন না।

সাতকানিয়া লোহাগাড়ার এক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে একুশে পত্রিকাকে জানান, তার বেশভূষা, চলাফেরা এমন যে, বড় বড় মানুষও তাকে সমীহ করে চলেন। এক এমপি তো একবার ফোন করে তার কাছে আশ্রয় খোঁজেন। এমপির ফোনালাপের অডিও রকি বড়ুয়া তাকে শুনিয়েছেন জানিয়ে ওই সংবাদকর্মী বলেন, এমপি সাহেব তাকে রকিদা সম্বোধন করে বলছেন, ‘আপনি তো জানেন, আমার যিনি মুরুব্বী, অভিভাবক তিনি মারা গেছেন। এখন আপনিই আমার মুরুব্বী, আমাকে একটু দেখবেন, আমার প্রতি খেয়াল রাখবেন।’

একজন এমপি কেন রকি বড়ুয়ার প্রতি এতটা আড়ষ্ট – এই প্রশ্নে তিনি জানান, এমপি সাহেব একবার দিল্লী গিয়েছিলেন রকি বড়ুয়ার সাথে। রকি বড়ুয়ার কল্যাণে সেখানে পাওয়া স্পেশাল সম্মান, প্রটোকলে রীতিমতো মুগ্ধ সেই এমপি। সেই থেকে রকি বড়ুয়া যা বলেন, তাই করেন সেই এমপি। যদিও সেই এমপি এখন রকি বড়ুয়াকে পাত্তা দেন না।

রকি বড়ুয়া মস্তবড় প্রতারক : ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া

লোহাগড়ার সন্তান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সাথে প্রসঙ্গ তুলতেই রকি বড়ুয়ার কর্মকাণ্ডে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ ঝারেন তিনি।

একুশে পত্রিকাকে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, রকি বড়ুয়া একজন মস্তবড় প্রতারক। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল একদিন আমাকে ফোন করে জানান, গুলশানে এক ব্যক্তিকে মনোনয়ন নিয়ে দেওয়ার কথা বলে তার বাড়ি দখল করে নিয়েছে রকি বড়ুয়া।

বুলবুল ভাইয়ের কাছে আমার নামও বিক্রি করে সে। আমি বলেছি, তাকে ধরে যেন পুলিশে তুলে দেওয়া হয়। পরে মামলা-মোকর্দমা করে অনেক হয়রানির পর বোধহয় বাড়িটা দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এরপর নিজেকে ভারত সরকারের ঘনিষ্ঠ দাবি করে হাজীগঞ্জের এক এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মনোনয়ন নিয়ে দেওয়ার প্রলোভনে ২০ লাখ টাকা দাবি করে সে।- বলেন ব্যারিস্টার বিল্পব বড়ুয়া।

তিনি বলেন, ছোটকালে অভাবের তাড়নায় বৌদ্ধ ভিক্ষু সেজে সে ভারতের একটা আশ্রমে আশ্রয় নেয়। সেখানে একজন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ধর্মীয় গুরুর কাছে থাকতো, যিনি রাজ্যসভারও সদস্য, যাকে প্রধানমন্ত্রীও চিনতেন। বিজেপি যেহেতু একটু রিলিজিয়াস দল, সেই দলের নেতারা ওই আশ্রমে যাওয়া-আসা করতেন। সেই যাওয়া-আসার মাঝে রকি বড়ুয়া হয়তো কিছু ছবিটবি তোলে। আর সেগুলোই সে হাতিয়ার করে চলছে, নিজেকে ‘র’-এর এজেন্ট দাবি করে।

‘সে ভারত গেলে লালকাপড় পরে। বাংলাদেশে এলে পরে প্যান্টশার্ট। ভারতীয় হাই কমিশনে ঢুকে লালকাপড় পড়ে। বের হয়েই সেই কাপড় সে ফেলে দেয়। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে।’ – যোগ করেন ব্যারিস্টার বিপ্লব।

রকি বড়ুয়া মূলত ফটোব্যবসায়ী : আমিনুল ইসলাম

রকি বড়ুয়ার ব্যাপারে সাতকানিয়ার সন্তান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, কী বলবো তাকে নিয়ে। আমি যতদূর জানি, সে আপাদমস্তক একজন প্রতারক। দীর্ঘদিন ইন্ডিয়ায় থেকে প্রতারণার বিদ্যাটা চমৎকারভাবে রপ্ত করেছে সে। মানুষকে মনোনয়ন নিয়ে দেয়, এই করে দেয়, সেই করে দেয়-কত যে কাহিনী!

সে মূলত একজন ফটোব্যবসায়ী। তার যে গুরু ছিল সেই গুরুর কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেতেন। সেই সুবাদে মোদির সাথে সে কয়েকটা ছবি তোলে। এখানে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কীভাবে যেন ছবি একটা তোলে ফেলে। আর এই ছবিগুলোই এখন তার ব্যবসার বড় পুঁজি। – বলেন আমিনুল ইসলাম।

গুলশানে সন্দ্বীপের এক লোকের বাড়ি দখল করতে চেয়েছিল : মঞ্জরুল আহসান বুলবুল

রকি বড়ুয়ার প্রতারণা, বাড়িদখলের ইস্যুতে কথা হয় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, দেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জরুল আহসান বুলবুলের সাথে।

তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান কানেকশন বলে-টলে ওই লোক (রকি) সন্দ্বীপের কাতার প্রবাসী এক লোকের গুলশানের বাড়িতে থাকতে গিয়ে একপর্যায়ে সেই বাড়িই দখল করে নিতে চায়। আমি কাতার বেড়াতে গেলে ওই লোকের সাথে পরিচয় আমার।

বাড়ি দখলের চেষ্টা করলে ভদ্রলোক আমাকে বিষয়টি জানান। আমি কয়েকজনকে এব্যাপারে ফোনও দিয়েছিলাম। ভদ্রলোকেরও জানাশোনা ছিল অনেকের সাথে। ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার নামও বিক্রি করেছে সে। পরে বিপ্লবকে ফোন দিয়ে জানতে পারি আসল ঘটনা।

বুলবুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত সামরিক সচিব জয়নাল আবেদীনের সহযোগিতায় পরবর্তীতে বাড়িটি উদ্ধার হয় বলে জেনেছি। যতটুকু জানি, ওই লোক জয়নাল আবেদীন সাহেবকে বেশ ভয় পেতো। তিনি বেঁচে থাকতে এলাকায়ও যেতে পারতেন না রকি বড়ুয়া।

সাঈদীকে দিয়ে জামায়াত ভাঙতেই এই বৈঠক, দাবি রকি বড়ুয়ার

দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে মুক্ত করে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামীর প্রাণ সাঈদীকে দিয়েই জামায়াত ভাঙার কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদী ও তারেক মনোয়ারের সাথে বৈঠক করেছেন জানিয়ে রকি বড়ুয়া একুশে পত্রিকাকে বলেন, এখানে গোপনীয় কিংবা লুকোচুরির কিছু নেই। আমি প্রকাশ্যে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে তাদের সাথে বৈঠক করেছি। আপ্যায়ন করিয়েছি। আবার এলাকাবাসীকে সাথে নিয়েই তাদেরকে বিদায় দিয়েছি।

সাঈদীকে আপনি কীভাবে মুক্ত করবেন কিংবা আপনাকে এই দায়িত্ব কে দিয়েছে -এমন প্রশ্নে রকি বড়ুয়া বলেন, এখানে কেউ কাউকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয় নয়। আমি এই দেশের একজন নাগরিক, সেই হিসেবে আমি সরকারের অংশ। সরকারের অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারকে সহযোগিতা করছি। সরকারের উচ্চপর্য়ায়ে এবং ভারতের মন্ত্রী-এমপিদের সাথে আমার যে সম্পর্ক সে কারণে সাঈদী সাহেবের লোকজন মনে করেছেন যে, আমাকে দিয়েই এই কাজ হবে, এবং সেই কারণেই এই লকডাউনের মধ্যে তারা আমার বাড়িতে ছুটে এসেছেন। হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে কথা হয়েছে। তারা আমার বাড়ির মন্দির পরিদর্শন করেছেন, ভান্তের সাথে ছবি তুলেছেন।

২০১৫ সালে তার বাড়ির বৌদ্ধ বিহারে ভারতের তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রীসহ ৯জন মন্ত্রী-এমপি এসেছেন জানিয়ে রকি বড়ুয়া বলেন, আমি এই লোহাগাড়ার সন্তান। লোহাগাড়ার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি তাদেরকে ভালোবাসি। সেই কারণে ভারতের বড় বড় মানুষগুলোকে এখানে নিয়ে আসি। এ কারণে একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে পেছনে লেগেছে জানিয়ে রকি বলেন, বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা তারই অংশ।

স্থানীয় এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন নদভীর প্রশ্রয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তার মন্দিরে সেদিন পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে দাবি করে রকি বড়ুয়া বলেন, একসময়ের জামায়াত নেতা, এমপির আস্থাভাজন মৌলভী হেলাল ও জালাল ড্রাইভার আমার মন্দিরে হামলা চালিয়েছে। হামলার আগে এবং পরে এমপি ও এমপির স্ত্রীকে বারবার ফোন করেও না পেয়ে সর্বোপরি তাদের নীরবতা প্রমাণ করে বিহারে হামলায় তাদের ইন্ধন আছে।

রকি বড়ুয়া বলেন, আমাদের এমন দুর্ভাগ্য যে, এমন একজন এমপি পেলাম যাকে আমরা মন্দিরে ডাকলে পাই না, বিহারে ডাকলেও পাই না। অথচ একসময় আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতেন না এমপি সাহেব। আমি ফোন দিলে রিং পড়ার সাথে সাথে ধরতেন এবং কোনো কারণে ধরতে না পারলে ব্যাক করতেন। প্রয়োজন হলে পায়ে ধরে, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে চিনে না-এমনই চরিত্র এমপি সাহেবের।-বলেন রকি বড়ুয়া।

মানুষের পুকুর থেকে জোরপূর্বক মাছ নিধনের অভিযোগ অস্বীকার করে রকি বলেন, প্রশ্নই আসে না জোর করার। এলাকার মানুষ আমাকে সম্মান করে, ভালোবাসে। তারা স্বসম্মানে কোথাও মাছ ধরতে নিয়ে গেলে সেখানে যাই। ওদিনও আমার এক বন্ধুর আগ্রহে তার মামার পুকুরে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। খাবার-দাবারের ব্যবস্থাসহ তারাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবকিছু আয়োজন করেছে। মহিউদ্দিন নামে পুকুর মালিকের এক ভাই মাঝপথে মাছ ধরা নিয়ে বেয়াদবি করায় আমার খুব খারাপ লেগেছিল। এজন্য আসহাব উদ্দিনই কথা দিয়েছিলেন মহিউদ্দিনকে আমার বাড়িতে এনে মিলিয়ে দেবেন, মাফ চাইবেন। পরে মহিউদ্দিনকেও আনলেন না। মাফও চাওয়া হয়নি। উল্টো আসহাব উদ্দিন ও নজির মেম্বারকে আটকে রেখেছি বলে বদনাম ছড়িয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। অথচ আসহাব উদ্দিন নিজেই ওসিকে আমার ফোন থেকে বলেছেন আমি তাকে আটকে রাখিনি।

আসহাব উদ্দিনদের উদ্ধারের নামে পুলিশ আসলো, সাথে নিয়ে আসলে শত শত লোক। আমরা সবাই বাড়িতে চলে যাওয়ার পর সেই লোকগুলোর সহযোগিতায় মৌলভী হেলাল, জালাল ড্রাইভার বিহার ভাঙচুর করলো। আর বললো আমিই ভাঙচুর করেছি।

কায়সার হামিদ ও তার ভাইকে ভোর রাতে টেলিফোনে জরুরি তলব বিহার ভাঙচুরের জন্য নয়, বিহার ভাঙচুর কারা করেছে সে ব্যাপারে তথ্য জানার জন্যই মূলত কায়সার হামিদ ও তার ভাইকে ডাকা হয়েছে বলে দাবি করেন রকি বড়ুয়া। তিনি বলেন, আমার বিহার আমি ভাঙচুর করাবো, বিশ্বাস হয়?

দীর্ঘদিন ধরে আমার মা-মাসি, জাত, ধর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে গালাগাল করে আসা মৌলভী হেলালই এই ঘটনা ঘটিয়ে্ছে, যা সুষ্ঠু তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে জানান রকি। তবে এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা আসহাব উদ্দিনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান তিনি। চট্টগ্রামস্থ সহকারী ভারতীয় হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জিকে এ ব্যাপারে নালিশ দিয়েছেন বলেও জানান রকি বড়ুয়া।

রঙ কাপড় পরিয়ে আদমপাচারের কারণে ভারতীয় দূতাবাস তার পাসপোর্ট ও ভিসা বাতিল করার ব্যাপারে রকি বড়ুয়া বলেন, এটি মিথ্যা কথা। কত ধরনের কথাই এখন আমার বিরুদ্ধে বলা হবে! এসময় গুলশানে বাড়ি দখলের চেষ্টা এবং মনোনয়ন পাইয়ে দেবার নাম করে টাকা দাবির বিষয়গুলোও অস্বীকার করেন রকি বড়ুয়া। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের আজকের অবস্থান ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তার অবদান আছে বলে দাবি করেন রকি বড়ুয়া।

রকির ব্যাপারে কথা বলবেন না এমপি নদভী

এ ব্যাপারে বুধ ও বৃহস্পতিবার বার বার স্থানীয় সাংসদ ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবারই তার মোবাইলে ফোনে রিং হয়, কিন্তু তিনি ধরেন না।

তবে তার প্রেস ও উন্নয়ন বরাদ্দের সমন্বয়কারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল গনি সম্রাট একুশে পত্রিকাকে বলেন, রকি বড়ুয়ার ব্যাপারে এমপি মহোদয় কথা বলবেন না। তার আচরণে এমপি সাহেব অসন্তুষ্ট। তার অন্যায় কাজের প্রশ্রয়দাতা হতে পারেননি বলে, রকি বড়ুয়া এখন এমপি সাহেবের বিরুদ্ধে বলছেন। কার নির্দেশে সেদিন বিহারে ভাঙচুর হয়েছে, দেশ-বিদেশের মন্ত্রী-এমপিদের নাম ভাঙিয়ে কথায় কথায় এলাকায় কে ত্রাস সৃষ্টি করেন, জবরদখল করেন, সাধারণ মানুষের পুকুর থেকে মৎস্যনিধন করেন তা প্রশাসন, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবাই জানেন। বলেন আবদুল গণি সম্রাট।