সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

কর্ণফুলীতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কিশোর অপরাধ

প্রকাশিতঃ ২৫ এপ্রিল ২০২০ | ১০:৫৭ অপরাহ্ন


জিন্নাত আয়ুব, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : কর্ণফুলীতে এক সপ্তাহের মধ্যে দুইটি খুনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন কিশোর অপরাধীকে আটক করেছে র‌্যাব-পুলিশ। কর্ণফুলীতে দিন দিন বাড়ছে কিশোর অপরাধীদের সংখ্যা। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি, চুরি, ছিনতাই ও যৌন নিপীড়নের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। কিছু অপরাধীকে মামলায় চালান দিয়ে আদালতে পাঠানো হলেও বয়স বিবেচনায় জামিন পেয়ে আবারও অপরাধে জড়াচ্ছে তারা। এতে কিশোর অপরাধীরা পুলিশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, বাসা-বাড়িতে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধে সম্পৃক্ত হচ্ছে কিশোর অপরাধীরা। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে মাদক কারবারিরা কিশোরদের ব্যবহার করছে মাদক পরিবহনের কাজে। আর টাকার লোভে কিশোররাও মাদক কারবারিদের ফাঁদে পা দিয়ে অপরাধে জড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে এসব কিশোরদের কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে মাদক কারবারেও।

পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলার মধ্যে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করেও অনেক কিশোর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উপজেলায় পাড়া-মহল্লার বাসা-বাড়িতে চুরি, ছিনতাই ও ইভটিজিংসহ নানা অপরাধের দায়ে প্রায়ই এসব কিশোর অপরাধীদের আটক করে পুলিশ। কিছু অপরাধীকে আদালতের নির্দেশে সংশোধনের জন্য সমাজ সেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশ আটক কিশোরদের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়। আর পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও অপরাধ করে বেড়ায় তারা। এতে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কিশোর অপরাধীদের। ফলে বিপাকে পড়েছে পুলিশ।

রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধে জড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন হায়দার বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না বলেই অপরাধ এবং অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরাধ জগৎ থেকে কিশোরদের ফিরিয়ে আনতে তাদের পরিবারকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ জাগিয়ে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।

চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র আইনজীবী সালাহ্উদ্দীন লিপু বলেন, কিশোরদের দিয়ে অপরাধ করানো খুব সহজ। আর যারা অপরাধ করছে তারা একেবারেই নিম্ন পরিবারের। যেহেতু বয়স কম তাদেরকে আদালত থেকে জামিন দেয়া হয়।

কর্ণফুলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, আইন দিয়ে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কী কারণে কিশোররা অপরাধে জড়াচ্ছে সেটি আগে খতিয়ে দেখতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পারিবারিক বঞ্চনা, নিম্ন আর্থ-সামজিক ব্যবস্থা এবং সঙ্গ দোষে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তারা।

তিনি বলেন, বাবা-মাসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কিশোর অপরাধ দমন সম্ভব। তবে এই সপ্তাহে কর্ণফুলীতে যে দুইটা খুন হয়েছে সেখানে কিশোররা জড়িত থাকলেও বিষয়গুলো পূর্ব শত্রুতা ও পূর্বের ঘটনার জেরে কিশোরদের পরিবারের মদদে এই হত্যাকাণ্ড গুলো ঘটে।