আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন : কৃষক বাজারে উৎপাদিত সবজি আনার আগেই দালালদের সিন্ডিকেট কোন তরকারি কত দাম হবে তা নির্ধারণ করে ফেলছে, আর তাতেই কপাল পুড়ছে কৃষকের। সিন্ডিকেটের নির্ধারিত মূল্যের বাইরে সবজি বিক্রি করতে না পেরে কৃষকরা বাজারে ফেলে চলে যাচ্ছে সবজি, খালি হাতে বাড়ি ফিরছে। এভাবে কৃষক হচ্ছে সর্বশান্ত। এ অবস্থায় কৃষিপণ্যের দরপতন ঠেকাতে ব্যর্থ হলে বিপর্যয় অনিবার্য।
পাইকার ও দালালরা শহরে সবজি নেয়ার পরিবহন ঝুঁকি ও ব্যয়কে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে কৃষকদের নিঃস্ব করে আসছে। গ্রামের ১ টাকার সবজি ঢাকায় ৫০ টাকা। অথচ সে সবজি উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা। তাতেই মুনাফা সহ আসল গিলে খাচ্ছে দালাল ও সড়কে পথে পথে ওৎ পেতে থাকা চাঁদাবাজ।
কৃষিপণ্য পরিবহনে স্থানীয় প্রশাসন সদয় না হলে সারাদেশে কৃষকদের লোকসান হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা। আর এতেই থমকে যেতে পারে এসডিজি লক্ষ্যমাত্র অর্জন, রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি, ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও ডেল্টাপ্লান: ২১০০।
সারাদেশের কৃষক পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত হলে, চলতি মৌসুমে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হবে ও ঘটতে পারে বড় বিপর্যয়, যা দুর্ভিক্ষ বললে কম বলা হবে।
তাই সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করার পাশাপাশি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকরা যৌথভাবে শহরে তাদের পণ্য পাঠালে দালাল ও মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়িয়াদের কৃষকের মুনাফা হাতিয়ে নেয়া বন্ধ হবে। তাতেই কৃষক ফসলের নায্যমূল্য পাবে।
সমগ্র দেশে কৃষিপণ্য মাঠেই পচে যাচ্ছে, যার সচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
দিনাজপুরে কৃষকের নিরব কান্না ঠেকাবে কে?
১১৫৪ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ করা হয়েছে। কৃষকের খরচ ৭ থেকে ৮ টাকা হলেও বাজারে সর্বোচ্চ মূল্য ২.৫০ টাকা। গত ২০১৮-১৯ সালে ১১২১ হেক্টর টমেটো চাষ করে ৫০ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদন হয়েছিল, এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন গতবারের চেয়ে অনেক ভাল হলেও করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনে আটকে গেছে কৃষকের ভাগ্য।
বগুড়া ও জয়পুরহাট
সবজি পেঁকে নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কৃষক তা তুলছেন না। একটি বড় ফুলকপি বা বাধাকপির দাম মাত্র ১ টাকা। টমেটোর কেজি ৫ টাকা, খিরা ৩ টাকা, এক কেজি আলু ৮ টাকা। তাই কৃষকের সবজি তোলার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই কারন একটি ফুলকপি ও বাধকপির উৎপাদন খরচ ১০ টাকার বেশি। এটা ১ টাকায় বিক্রি করার চেয়ে মাঠে থাকা ভালো।
লালমনিরহাট পাটগ্রাম
জমিতে পড়ে আছে কৃষকের সবজি, উপজেলার ৮৭০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে, আবহাওয়া ভাল থাকায় ফলন ও ভাল হয়েছে কিন্তু সারাদেশে সরবরাহ করতে না পেরে ক্রেতার অভাবে সবজি পড়ে আছে ক্ষেতে। বেগুন ২ টাকা, বাঁধাকপি ২ টাকা, শসা ৫ টাকা, পুই শাক ৬ টাকা কেজি দরে তাও খুব কম বিক্রি। অন্যান্য সবজির দাম আরো কম হবার কারণে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
বগুড়া মহাস্থান হাট
বগুড়া শিবগঞ্জে সবচেয়ে বড় পাইকারী হাট মহাস্থান হাট, যা ক্রেতা শূন্য। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে গরু মহিষের খাবার হিসেবে। অন্যান্য সবজি ক্রেতা না পাওয়ার কারনে কৃষকরা হাটে আনাও কমিয়ে দিয়েছে।
রংপুর
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট পরিবহন সংকটে স্থবিরতা নেমে এসেছে রংপুর অঞ্চলের কৃষিতে। মাঠ ভরা সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছে এই অঞ্চলের কৃষকরা। প্রতি মৌসুমে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন সবজি হয় রংপুর কৃষি অঞ্চলে। প্রতিদিন বেগুন, করলা, বরবটি, টম্যাটোসহ নানা শাকসবজি নিয়ে অসংখ্য ট্রাক যেত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এখন পরিবহন সংকটে শাকসবজি বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে মাঠে পড়ে আছে সব ধরনের সবজি।
যশোর জেলা
সারাবছর যশোর জেলায় সবজির আবাদ হয়ে থাকে। বছরে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষিরা বিভিন্ন ধরণের সবজির আবাদ করেন। যা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন। এসব সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে যেয়ে থাকে।
যশোর সাত মাইল
যশোর ৮ উপজেলায় ১৩১৭৫ হেক্টর জমিতে শষ্য উৎপাদন হলেও পথে পথে বাধার কারণে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা আসতে ও যেতে না পারায় প্রতি সপ্তাহের রবি ও বৃহস্পতিবার সমগ্র জেলার সবজি চাষীদের সব সবজি খুবই দাম পড়ে গেছে। বাধাকপি প্রতি পিস ৬ টাকা, লাউ ১০ – ১২ টাকা পিস, বেগুন ৮ টাকা ও ঢেঁড়স ১০ টাকা, সীমিত ১০ টাকা, শষা ৭ টাকা, খিরা ৫ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গদখালীর ফুল চাষে শত কোটি টাকার লোকসান
দেশের সর্ব বৃহৎ পাইকারী ফুলের বাজার যশোরে এই গদখালী। আর এই কারণে গদখালী কে দেশের ফুলের রাজ্য বলা হয়ে থাকে। গদখালীতে আসা ফুলগুলো যশোর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার ৯০ টি গ্রামের প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমিতে চাষ করা হয়।প্রতিবছর ৫ থেকে ৭ কোটি স্টিক ফুল উৎপাদন হচ্ছে এসব মাঠে।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউরা ও ফুলিয়া গ্রামের প্রতিটি মাঠের চিত্রই এমন। শত শত বিঘা জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজি জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ। মনে হবে সুন্দর বাংলাদেশের বুকে এক টুকরো স্বর্গ।
আজ ফুল চাষিরা ফুল কেটে ছাগল-গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। চাষিদের চোখে-মুখে বিষণ্নতার ছাপ ! যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি-পানিসারার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। ফুল চাষে আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ফুলের উৎপাদন হয়েছিলো। কিন্তু করোনা সংক্রমনে লকডাউনের কারনে লোকসান শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি সদর
ফুলছড়ি হাটে কাঁচামরিচ ৫ টাকা, বেগুন ২ থেকে আড়াই টাকা, টমেটো ৫ টাকা, মূলা ২ টাকা, করলা ৮ টাকা, পেঁপে ৬ টাকা দরে প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে । পুলিশ করোনা ভাইরাস সংক্রমন ঠেকাতে বাজারে থেকে থেকে ধাওয়া করে তাই হাটে স্থানীয় লোকজনও আসতে ভয় পায়, তাই ক্ষেতে সবজি পঁচে গেলেও বাজারে এনে কোন লাভ নেই।
বগুড়া গোবিন্দগঞ্জ ফাশিতলা হাট
বেগুন ২.৫০ টাকা, শসা ৩ টাকা, খিরা ২ টাকা, মুলা ১.৫০ টাকা, বরবটি ৮ টাকা, টমেটো ৫ টাকা, কচুর মুখী, ১২ টাকা, গাজর ৫ টাকা,কাঁচামরিচ ৫ টাকা, পটল ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, তাছাড়া ফুলকপি প্রতিপিস ৬ টাকা ও লাউ ও কুমড়া প্রতি পিস ১৫ টাকাতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচিন্ন হবার কারনে। তাতে কৃষকরা সর্বশান্ত হবার পথে যদি সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে ব্যার্থ হয়।
বরগুনা আমতলী
আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কৃষকরা পটুয়াখালী নেবার চেষ্টা করেছিল এলাকাতে দাম পড়ে যাবার কারনে, কিন্ত শাখারিয়া চেকপোস্টে পুলিশের বাঁধার কারনে পটুয়াখালী নিতে না পারায় ৪৫ মন সবজি এলাকাতে এনে সড়কে ফেলে দেয় কৃষকরা। যা আমতলী থানার ওসি হয়ত জানেও না!
পটুয়াখালী গলাচিপা
গলাচিপা উপজেলায় ৬ হাজার ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে, তাছাড়া চর হড়িদেবপুর সহ গোলখালী, কলাগাছিয়া, চিকনিকান্দি, পানপট্টি, রতনদি-তালতলী, গজালিয়া, চরবিশ্বাস ও চরকাজল ইউনিয়ন গুলতেও তরমুজ চাষ করেছেন কৃষকরা।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটাতেও সমুদ্র উপকূলে কালবৈশাখী ও প্রাকৃতিক প্রতিকূল অবস্থায় উৎপাদন করা তরমুজ পেঁকে যাচ্ছে ক্ষেতে। মম্বিপাড়া, মিশ্রি পাড়া, গঙ্গা মতি, কাউয়ার চার, খাজুরা সহ উপকূলের শত শত তরমুজ চাষী জানেনা তাদের কপালে কি আছে!
কুড়িগ্রাম উলিপুর
ক্রেতার অভাবে হাজার হাজার মন টমেটো ক্ষেতেই পঁচে যাচ্ছে, বেগুন, ঢেঁড়স, ঝিঙা, মরিচসহ দাম না পাওয়ায় লোকসানের মুখে কৃষকরা।
রাজশাহী পবা
পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়ন সহ সমগ্র উপজেলায় সারা বছর সবজি উৎপাদন হলেও ১২০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত সবজির ন্যায্য মূল্য না পেলে কৃষকরা সর্বশান্ত হয়ে যাবে।
ঈশ্বরদী (পাবনা)
শুধু ঈশ্বরদীতেই কৃষকরা ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৩০-৩৫ শতাংশ সবজি মাঠে পচছে, তোলার যে খরচ তাও উটবেনা তাই কৃষকের অনিহা। ঢেঁড়স ৭ টাকা, পেঁয়াজ ২০ টাকা, শশা ২ থেকে আড়াই টাকা, ফুল কপি, বাঁধাকপি মূলা পুই শাখ, লালশাখ কেনার লোক নেই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর থেকে পাইকার আসতে ও সবজি নিয়ে যেতে না পারায় বড় ধরনের লোকসানের মুখে কৃষকরা।
নরসিংদী
নরসিংদী থেকেই ৭০ ভাগ সবজি সারা দেশে ও দেশের বাইরে সরবরাহ করা হয় বলে অনুমান করা হয়। অথচ লকডাউনের নামে সড়কপথে সকল যোগাযোগ বিচিন্ন হবার কারণে পথে বসছে কৃষকরা। বেগুন ২ থেকে আড়াই টাকা, সীম ৫ টাকা, শষা ১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও ডাটা, লাউ, কুমড়া বাজারে ফেলে চলে গেছে কৃষক। বেলাবো, বাবৈচা, নারায়নপুর, রায়পুরার জঙ্গি শিবপুর, শিবপুর সদর, সি এন্ডবি বাজার, পালপাড়া বাজার ক্রেতা শূন্য।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল
উপজেলার আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় এবং মাটি অত্যান্ত উর্বরা হবার কারনে যেদিকে চোখ যায় সবজি আর সবজি। সবজির বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাঁসি নেই, চোখে শর্ষেফুল দেখছে যেন। কাকে বিক্রি করবে এ সবজি, কে খাবে, কে ক্ষেত থেকে তুলবে? তারা বুঝে গেছে কপালে কি আছে তাই তারা নির্বাক।
নাটোর পান মোকাম
পান রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় শত কোটি টাকা লোকসান। নাটোরের গোকুলনগর পানমোকাম থেকে গড়ে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার পান বিদেশে যেত। যা স্থানীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে রপ্তানি বন্ধ। সব শ্রমিক বসে বসে দিন পার করছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পান পাঠানো হয়েছিল ঢাকায় কিন্তু বিমান বন্ধ থাকায় সেসব পান ঢাকাই পরে আছে। এতে গোকুলনগড়ের ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে।
রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি
করোনার প্রভাবে পরিবহন ও ক্রেতা সংকটে ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না পার্বত্য অঞ্চলের কৃষকরা। উৎপাদিত সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। দাম না পেয়ে সবজি খাওয়ানো হচ্ছে গবাদিপশুকে। এখানকার অধিকাংশ মানুষই কৃষি পেশায় জড়িত। অনুকূল আবহাওয়ায় উৎপাদনও হয়েছে বেশ ভালো। বাম্পার ফলন হলেও কৃষকদের মুখে হাসি নেই।
বরবটি, কুমড়া, পুঁইশাক, বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়শসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদিত হলেও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। পরিবহন বন্ধ থাকায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে এ সব সবজি। বাজারে নিয়ে গেলেও গ্রাহক সংকটে দাম পাচ্ছেন না তারা। দাম না পেয়ে বাজারেই ফেলে আসছেন শাক-সবজি। অবিক্রীত সবজি খাওয়ানো হচ্ছে গবাদিপশুকে।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা
বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বেগুন চাষিরা হতাশ। চরপলাশ, চরপাকুন্দিয়াসহ উপজেলায় ব্যাপক পরিমাণে সবজির চাষ হয়ে থাকে। চরাঞ্চলসহ উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে কমবেশি সবজির আবাদ করা হয়। এখানকার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রফতানি হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছ।
ঈশ্বরদী, নওগাঁ, ময়মনসিংহ ভালুকা, নীলফামারী, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা, ভোলার চরফ্যাশন, ফেনীর দাগনভূঞা একই করুন চিত্র। সবজি আছে পাইকার ও পরিবহন ব্যাবস্থা বা হিমাগার না থাকায় ভয়াবহ সংকটে কৃষকরা। তারা পুজি হারিয়ে সর্বশান্ত তাই সামনের মৌসুমে হয়ত শষ্য উৎপাদন সিকে উটবে।
অথচ বিশ্বের মধ্যে সবজী উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়। জিডিপিতে বাংলাদেশের কৃষি খাতের অবদান ১৬ শতাংশ। দেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ লোক কৃষি খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট। এই কৃষি উৎপাদনশীলতার একটি ক্ষেত্র হচ্ছে সবজি খাত। সবজি উৎপাদনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় এবং সবজির আবাদি জমি বৃদ্ধির দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। যার কারণে প্রত্যেক মৌসুমে সবজির বাম্পার ফলন হচ্ছে। কিন্তু বাম্পার ফলনের কৃষক খুশি নয়। কারণ সবজির বাম্পার ফলন হলেও কোনো মৌসুমেই সবজির ন্যায্য দাম পায়না কৃষক। পানির দামে বিক্রি হয় কৃষকের কষ্টার্জিত সবজি। চলতি মৌসুমেও সবজির বাজারে ব্যাপকভাবে ধ্বস নেমেছে। দেশের দৈনিকগুলোর কিছু হেডিং প্রত্যক্ষ করলে সবজির বাজারের ধ্বসের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করা যায়।
দৃর্যোগকালীন সময়ে কৃষিপণ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা নেই। নেই স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি। কৃষকের কান্না গ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে পারেনি। এ কারণে পরিবহনসহ নানা সমস্যার কারণে কৃষক পণ্যের দাম পাচ্ছেন না।
এদিকে কৃষক দাম না পেলেও ঢাকায় সবজির দাম অনেক বেশি। এক টাকার ফুলকপি ৫০ টাকা, ৫ টাকার টমেটো ৫০ টাকা, ৩ টাকার খিরা ৪০ টাকা ও ৮ টাকার আলু ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
করোনা এখন মানুষের জীবন-মরণ সমস্যা হলেও এটাকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। কারও মনে মায়া নেই, মৃত্যু ভয়ও নেই। এই সময়ে কেবল বাঙালি জাতিই অস্বাভাবিক মুনাফার চিন্তা করতে পারে।
দেশের একেক অঞ্চলের উৎপাদন ও চাহিদা আলাদা। তাই প্রয়োজনে স্ব স্ব জেলায় জেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি বিপনন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে কৃষিপণ্য বিপনন সমবায় সমিতির মাধ্যমে সমগ্র জেলা থেকে খাদ্য শস্য সংগ্রহ ও বিভাগীয় শহরে কৃষি পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হলে কৃষক যেমন ন্যায্যদাম পাবেন, দেশের নাগরিকরাও ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন। আর বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বেঁচে যেতে পারেন কৃষি ও কৃষক। এ কাজে দেশের একমাত্র ভরসা তরুণ সমাজ এগিয়ে আসলে এই যাত্রায় বেঁচে যাবে কৃষি ও কৃষক।
লেখক : চেয়ারম্যান, সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশ।