চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে অর্ন্তকোন্দল নিয়ে বৈঠকে বসেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে আগামী তিন মাসের মধ্যে সব ‘অভ্যন্তরীন কোন্দল’ মিটিয়ে ফেলার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, আর কোনো খারাপ খবরের শিরোনামে ছাত্রলীগকে তিনি দেখতে চান না।
এদিকে বৈঠকে যোগ দেননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু। এর আগে কাদেরের নির্দেশে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তাকে ফোন করে বৈঠকে আসার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু কোন কারণ না জানিয়ে বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন টিপু। এমনকি টিপুকে বারবার ফোন করেও সাড়া পাননি কেন্দ্রীয় নেতারা।
রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর চশমাহিলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় যান কাদের। দেড় ঘন্টা অবস্থানের পর সকাল ১০টার দিকে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোন্দল নিয়ে আলোচনার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছিলেন কাদের। আলমগীর টিপু ছাড়া বাকি তিন ছাত্রলীগ নেতা বৈঠকে হাজির হন। এরা হলেন- নগর ছাত্রলীগের সভাপতি সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রণি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফীন, নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা।
আলাপচারিতার শুরুতেই ওবায়দুল কাদের উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কয়েকদিন পর পর আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অবস্থা হয় কেন? এটাকে কি সঠিক জায়গায় নিয়ে আসা যায়না? জবাবে উপাচার্য বলেন, স্যার, এখন তো সঠিক পথে আছে। কাদের বলেন, কোথায় সঠিক পথে আছে ? এই যে টেন্ডার নিয়ে মারামারি হবে কেন ? আপনি ইলেকট্রনিক টেন্ডার চালু করছেন না কেন ? জবাবে উপাচার্য বলেন, অলরেডি ই-টেন্ডার শুরু হয়েছে স্যার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে উপাচার্য ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্যার, এরা (টিপু-সুজন) আমার সামনে আসলে ঠিক থাকে। কিন্তু বাইরে গিয়ে সামান্য, ছোটখাট বিষয় নিয়ে মারামারি করে। এসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ভিসি সাহেব, আপনি কোন পক্ষ নেবেন না। ছাত্রলীগ কি আপনাকে ভিসি বানিয়েছে ? নাকি ছাত্রলীগ আপনাকে চেয়ারে রাখতে পারবে ? মেয়াদ শেষ হলে ছাত্রলীগ কি আন্দোলন করে আপনাকে রাখতে পারবে?
আলোচনার শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আর দুই বছর বাকি। আমরা নিজেদের মধ্যে সমস্যা সমাধান করে ফেলতে চাই। নির্বাচনের জন্য আমরা ‘অল আউট প্রিপারেশনে’ যাচ্ছি। সেজন্য আমি চট্টগ্রাম দিয়ে শুরু করলাম। আগামী তিন মাসের মধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো মেটানোর পাশাপাশি ছয় মাসের মধ্যে সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করা হবে। এখানে ছাত্রলীগ রিলেটেড কিছু সমস্যা হয়। সমস্যাগুলো যাতে না হয় সেজন্য আলোচনা করেছি। আশা করছি এখানে আমরা এক সাথে কাজ করব এবং একটা টিম ওয়ার্ক গড়ে তুলব।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের সংঘর্ষে জড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে আর খারাপ খবরের শিরোনামে দেখতে চাই না। দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা, অপকর্ম সংশোধন না হলে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিকভাবে দমন করা হবে। নেতৃবৃন্দকে সেই ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দিয়াজ ইফরান চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টিকে ‘কনফিউজিং’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি পরিষ্কার নয়, ফ্যামিলি বলছে হত্যা করা হয়েছে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলছে আত্মহত্যা করেছে। সিআইডির পূর্ণ তদন্ত হওয়ার পর বিষয়টি পরিষ্কার হবে।