ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ভিন্ন সময়ে ভিন্ন আবহাওয়া বিরাজ করে। মৌসুম বদলের সাথে সাধারণত ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রভাব বা প্রকোপ দেখা দিতে পারে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই সময়ে যুক্ত হয়েছে করোনা ভাইরাসের আতংক।
করোনার সাধারণ লক্ষণের সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণের অনেক মিল রয়েছে। আবার ব্যাপক অমিলও রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ও সাধারণ ফ্লু নিয়ে নতুন করে তথ্য প্রকাশ করেছে।
দুই রোগের মিলের জায়গা
বিষয় | করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ | ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস |
কিসের রোগ | শ্বাসতন্ত্রের | শ্বাসতন্ত্রের |
কিভাবে ছড়ায় | ড্রপলেট (মুখ বা নাকনিঃসৃত তরল কণা), বিভিন্ন বস্তু আর সংস্পর্শের মাধ্যমে | ড্রপলেট (মুখ বা নাকনিঃসৃত তরল কণা), বিভিন্ন বস্তু আর সংস্পর্শের মাধ্যমে |
প্রতিরোধের উপায় | হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, বারবার হাত ধোয়া এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা | হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, বারবার হাত ধোয়া এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা |
উপসর্গ | সাধারণ মৃদু সর্দি-কাশি-জ্বর থেকে শুরু করে তীব্র সংক্রমণ | সাধারণ মৃদু সর্দি-কাশি-জ্বর থেকে শুরু করে তীব্র সংক্রমণ |
বিপদজনক | নিউমোনিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ হয়ে রেসপিরেটরি ফেইলিউর, একাধিক অঙ্গ বিকল বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। | নিউমোনিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ হয়ে রেসপিরেটরি ফেইলিউর, একাধিক অঙ্গ বিকল বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। |
দুই রোগের অমিলের জায়গা
বিষয় | করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ | ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস |
লক্ষণ প্রকাশ সময় কাল | ৫-৬ দিন ( কম দ্রুত ছড়ায় ) | ৩ দিন ( মানে দ্রুত ছড়ায় ) |
সংক্রমণ হার | অনেক মানুষের | কম মানুষের |
মূল শিকার | বয়স্ক ও ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা। শূন্য থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ প্রায় হয় না বললেই চলে। কোভিড-১৯-এ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ঝুঁকিতে দেখা গেছে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনি জটিলতাসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় আক্রান্ত এবং যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তারাও ঝুঁকিতে রয়েছে। | শিশুরা ইনফ্লুয়েঞ্জায় শুধু শিশুরাই নয়, অন্তঃসত্ত্বা নারী, বয়স্ক ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, এমন ব্যক্তিরা ঝুঁকিতে থাকে। |
রোগের তীব্রতা | ৮০% মৃদু উপসর্গ ( যা এমনিতেই সেরে যায় ), ৫ % উপসর্গ তীব্র মাত্রার। রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া লাগে। মাত্র ৫%ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে রোগীর ভেন্টিলেটর দরকার হয়। | ৯৫% মৃদু উপসর্গ ( যা এমনিতেই সেরে যায় ), ৩-৪ % উপসর্গ তীব্র মাত্রার। রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া লাগে। মাত্র ১-২% ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে রোগীর ভেন্টিলেটর দরকার হয়। |
মৃত্যুহার | ৩-৪ % | ০.১ % |
কার্যকর ঔষধ বা টিকা | এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত হয়নি তবে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা রয়েছে। | কার্যকর টিকা বা ঔষধ আছে। |
যা করণীয়—
যদি সর্দি-কাশি-জ্বর দেখা দেয়, আতংকিত হবেন না। আপনার করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কোনো ইতিহাস বা ঝুঁকি না থাকে তাহলে আপনি নিরাপদ। এছাড়া আপনি যদি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকায় না থাকেন, তাহলে উদ্বিগ্ন হবেন না। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, প্রচুর পানি ও তরল পান, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ বিশেষ করে ভিটামিন সি টাইপের ফল আর বিশ্রামই আপনার চিকিৎসা।
তবে যদি জ্বর পাঁচ-সাত দিনেও না সারে, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় বা রোগীর দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। আর যদি আপনি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি হন, সম্প্রতি বিদেশফেরত বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গিয়ে থাকেন, তবে উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্র সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা সংস্থা আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করুন।
লেখক: ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া
MBBS ( DMC) MD.MPH.MSc ( Sweden) FRSH ( UK)
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক , জনস্বাস্থ্য বিভাগ
আমেরিকাল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
drbbaruabd@gmail.com