সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

ভোটাররা চান পোর্ট কানেক্টিং রোডের দ্রুত সংস্কার, চমকপ্রদ আশ্বাস প্রার্থীদের

প্রকাশিতঃ ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ | ৯:৫৭ অপরাহ্ন


জাহিদ হাসান : চট্টগ্রাম নগরের উত্তর পাশে অবস্থিত ২৫নং রামপুর ওয়ার্ড। উক্ত ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা পোর্ট কানেক্টিং রোডের বেহাল দশা। এই রোডের সংস্কার কাজ ২০১৭ সালের শেষ দিকে শুরু হলেও নানা জটিলতায় এখনো শেষ হয়নি। ফলে দুই বছর ধরে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রামপুর এলাকার বাসিন্দারা।

সাধারণ ভোটারদের অভিযোগ, পোর্ট কানেক্টিং রোড সংস্কারের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। অন্যদিকে বর্তমান কাউন্সিলর এস এম এরশাদ উল্লাহ বলছেন, এ সমস্যায় তিনি নিজেও ‍ভুক্তভোগী। তার দাবি, সিটি করপোরেশনের নানা জটিলতায় এখনো পোর্ট কানেক্টিং রোডের কাজ শেষ না হলেও এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, শিক্ষার মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।

এদিকে ঢাকার আদলে প্রথমবারের মত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন চালু হওয়ায় প্রার্থীদের মাঝে বেড়েছে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার লড়াই। নিজেদের দলের যোগ্য প্রার্থী প্রমাণ করার যথাসাধ্য চেষ্টায় রয়েছেন তারা।

জানা গেছে, নগরের সবুজবাগ, আই-ব্লক, ওয়াপদা কলোনি, এইচ-ব্লক, বড় পুকুর পাড়, কে-ব্লক, ওয়াপদা, ঈদগাহ এলাকা নিয়ে গঠিত এই ওয়ার্ডটির মোট ভোটার সংখ্যা ৪০ হাজার।

গরিব-দু:খি মানুষদের সহযোগিতা করে আসছেন দাবি করে সাবেক এ কাউন্সিলর বলেন, আমি আমার ব্যবসার একটা অংশ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করে আসছি। বিশ্বাস না হলে আপনি (প্রতিবেদক) আমার এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। কমিশনার না হলেও আমার যে ব্যবসা তা দিয়ে আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাবো যতদিন আমি বেঁচে থাকবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নয়াবাজার মোড়ের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে একুশে পত্রিকাকে বলেন, নয়াবাজার মোড়ের আবর্জনার ভাগাড়ের কারণে ব্যবসা যায় যায় অবস্থা। যিনিই নির্বাচিত হয়ে আসুন, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তিনি কাজ করবেন, এটাই আমার প্রত্যাশা।

তিনি বলেন, পোর্ট কানেক্টিং রোডের কারণে এই রোডের শতাধিক ব্যবসায়ীর ব্যবসায় মন্দা চলছে। তবে শুধুমাত্র জনপ্রতিনিধিদের দোষ দিলেও হবে না। এলাকার মানুষজনকেও সচেতন হতে হবে। কাউন্সিলর তো এলাকার উন্নয়নে কাজ করছেন, তবে মানুষকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

২৫ নং ওয়ার্ডের ভোটার সাকিল আহমেদ বলেন, এই ওয়ার্ডে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ সরুগলি আর খেলার মাঠ সংকট ছাড়াও শিশু কিশোরদের জন্য নেই তেমন বিনোদনের ব্যবস্থা। নিচু এলাকা হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতাও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে পুণরায় মনোনয়ন পেতে চান ২৫নং রামপুর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এস এম এরশাদ উল্লাহ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস ছবুর লিটন।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়বেন বলে জানান লিটন। ২০১০ সালে নির্বাচিত হলেও ২০১৫ সালে নির্বাচিত হতে পারেননি তিনি। তবে এবার নির্বাচিত হলে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে মডেল ওয়ার্ড হিসেবে রামপুরকে গড়ে তুলবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন আব্দুস ছবুর লিটন।

অন্যদিকে, বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ওমর মিয়া। তবে একই ওয়ার্ডে নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ মোহাম্মদ চৌধুরীরও প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে।

শহীদ মোহাম্মদ চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। নির্বাচনের যে অবস্থা তাতে আমি মনোনয়ন চাইবো কিনা ভাবছি। দল থেকে আমাকে নির্বাচন করার কথা বলা হলেও আমি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলে জানাবো।

অন্যদিকে ১১, ২৫, ২৬ সংরক্ষিত মহিলা আসনে পুণরায় মনোনয়ন পেতে চান বর্তমান কাউন্সিলর জেসমিনা খানম। এছাড়া এ বছর নির্বাচনি লড়াইয়ে নামছেন মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক হুরে আরা বিউটি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান রাধারাণী দেবী (টুনটুমুন)।

বর্তমান কাউন্সিলর জেসমিনা খানম একুশে পত্রিকাকে বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়নের কাজ করেছি। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য আবারও নির্বাচন করতে চাচ্ছি। আলোকসজ্জা, কালভার্ট, বয়স্কভাতা, নির্যাতিত নারীদের নিয়ে কাজ করবো। আমি যেহেতু তিনটা ওয়ার্ডের দায়িত্বে তাই মশক নিধন কর্মসূচি ছাড়াও এলাকার বাচ্চাদের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা করবো। খেলাধুলার মধ্যে থাকলে বাচ্চারা মাদক থেকে দূরে থাকবে।

২৫ নং রামপুর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস এম এরশাদ উল্লাহ একুশে পত্রিকাকে বলেন, রাস্তাঘাট, ডাস্টবিন নিয়ে যে সমস্যা ছিলো তার সমাধান করেছি। এখন কাঁচা রাস্তার কাজগুলো চলমান আছে। প্রায় ২১ কোটি টাকার কাজ চলতেছে।
জাইকার অর্থায়নে ছয় কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কিছু নিন্মাঞ্চলে জলাবদ্ধতা আছে, তবে মহেশখালটা যদি ড্রেজিং করা হয় তাহলে জলাবদ্ধতা কমে যাবে বলেও জানান তিনি।

এস এম এরশাদ উল্লাহ বলেন, পোর্ট কানেক্টিং রোড সিটি করপোরেশনের কাজ হলেও আমাদের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে তা হচ্ছে না। কোনো কাউন্সিলরকে তদারকির কাজ দেয়া হয়নি। তবে পোর্ট কানেক্টিং রোডের কাজ দ্রুত শেষ হোক তা আমরাও চাই।

২২ বছর ধরে মহল্লা কমিটির দায়িত্ব পালন করে আসা বর্তমান এই কাউন্সিলর একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমার এলাকাটি ছোট ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যেদিকে সুযোগ হচ্ছে সবুজায়নের চেষ্টা করেছি। পোর্ট কানেক্টিং রোড হয়ে গেলে দুই পাশে সবুজায়নের চেষ্টা করবো। আমি আসার পর রাস্তাঘাটের ৭০ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে তিনটি স্কুল করেছি। ছোট ছোট নালা ছিল, সেগুলো স্লাব দিয়ে বড় করেছি। আামি ইচ্ছা করে নির্বাচন করতে চাই না, যদি মানুষ চায় আমি নির্বাচন করবো।

এদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ওমর মিয়া একুশে পত্রিকা বলেন, ২০০৫ ও ২০১০ সালে আমি নির্বাচন করেছি। যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের ইঙ্গিত পাই আমি বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবো। সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো ইঙ্গিত তো আমরা পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, আমাদের এ এলাকাটি জলাবদ্ধতাপূর্ণ একটা এলাকা। অসৎ ব্যবসায়ীরা রয়েছে এ এলাকায়, যদি নির্বাচিত হই তাদের উচ্ছেদ করবো। মাদক, সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে কাজ করবো। দীর্ঘদিন ধরে পোর্ট কানেক্টিং রোড নিয়ে মানুষ ভোগান্তিতে আছে। আমি নির্বাচিত হলে সবুজায়ন করে মানুষের ভোগান্তি নিরসনে কাজ করবো।

রামপুর ২৫ নং ওয়ার্ড মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস ছবুর লিটন একুশে পত্রিকাকে বলেন, মাদক এবং জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করবো। জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ চলছে সেটাই এখন দেখার বিষয়, যেহেতু আমি ৫ বছর ছিলাম না। তাই আমি নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতার বর্তমান অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিবো। মুখে গ্রিনসিটি, ক্লিনসিটি নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। মানুষ শুধু গাছ কাটছে, গাছ লাগাচ্ছে না।

একুশে/জেএইচ