ঝুঁকির মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাঙ্গেরি সফর নিয়ে শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বিকেল ৪টায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হাঙ্গেরি সফর শেষে গত বুধবার রাতে দেশে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সফরে প্রধানমন্ত্রীর বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটিও দেখা দেয়, যা নিয়ে বিমানের ছয় কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিমানমন্ত্রী হিসেবে এ ঘটনার দায় স্বীকারও করেছেন রাশেদ খান মেনন।
হাঙ্গেরি সফরকালে শেখ হাসিনা গত ২৮ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী বুদাপেস্ট পানি সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। এছাড়া শেখ হাসিনা হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ও প্রেসিডেন্ট জানোস এডারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।
হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ড. জানোস এডারের আমন্ত্রণে বুদাপেস্ট পানি সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এটি ছিল বাংলাদেশি কোনো নেতার পূর্ব ইউরোপীয় দেশটিতে প্রথম উচ্চপর্যায়ের সফর।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ত্রুটি কোনো ষড়যন্ত্র ছিল কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিছক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তবে অন্য কিছুও হতে পারে। এ দেশে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলা হয়েছে। সুতরাং আমাদের অনেক কিছুই আমলে নিতে হচ্ছে। তবে বেঁচে আছি এটিই শুকরিয়া। সকলের দোয়া চাইছি। উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই।
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা এয়ার ক্রাফট ক্রয় করা হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলাদা এয়ার ক্রাফট কেনার মতো সময় আসেনি। আলাদা করে বিমান কেনার প্রয়োজন নেই। বিমানে যদি সাধারণ মানুষ নিরাপদ না হয়, তাহলে আলাদা বিমানেও নিরাপদ থাকা যাবে না।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানবিক কারণেই পালিয়ে আসা কিছু মানুষকে আমরা আশ্রয় দিচ্ছি। তবে যারা এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটালেন, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। কয়েকজন উগ্রবাদীর জন্য হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এই উগ্রবাদীদের ব্যাপারে গোয়েন্দারা সতর্ক। তাদের খুঁজে বের করে আমরা মিয়ানমার সরকারের হাতে তুলে দেব।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকেই প্রথম ধাক্কা সামাল দিতে হয় যোগ করে তিনি বলেন, আমরা ওই দেশটির সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছি। বিশ্বকেও আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে দেয়া প্রস্তাব প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, গত নির্বাচনে না এসে তিনি ভুল করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন। কোনো প্রস্তাব দেয়ার আগে তাকে (খালেদার) জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচন করে নির্বাচন কমিশন। তিনি (খালেদা) যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা রাষ্ট্রপতির বিবেচনার বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আলোচনার জন্য আন্তরিক। তার (খালেদা) মৃত ছেলেকে দেখতে বাসায় গেলাম। তবে কোনোভাবেই আমাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দিলেন না। তার মুখে আলোচনার কথা মানায় না।
নির্বাচনে জিতলে ভালো আর হারলে খারাপ বিএনপির এমন মনোভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন ৫ সিটি নির্বাচনে বিএনপি জিতল তখন তারা নির্বাচন কমিশনের কোনো দোষ ধরলেন না। যখন হারলো তখন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। এটিই তাদের চরিত্র। বিএনপির পরামর্শ নিয়েই সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল বলে যোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীসহ সরকার ও দলের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।