আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ভূমি অফিসগুলোতে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনোয়ারা ভূমি অফিসে সীমাহীন দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। নামজারি, খাজনা খারিজের নামে অবাধে বেপরোয়া দুর্নীতি চলছে। এছাড়া একজনের নামের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে আরেকজনের নামে নামজারি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
নামজারি ভলিয়মে বইয়ে গরমিল নিয়ে ভূমি মালিকরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন। ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের উৎকাচের দাবি মেটাতে গিয়ে অনেকে সর্বশান্ত হয়েও শেষ রক্ষা পাচ্ছেন না। নথিতে গোপন রাখা হচ্ছে জমির তথ্য।
সরেজমিনে আনোয়ারা উপজেলার কয়েকটি ভূমি অফিসে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারি, খাজনা আদায় ও মিস কেসের নামে চলছে জমজমাট ঘুষ বাণিজ্য। আইন-কানুনের বালাই নেই, মোটা অংকের উৎকাচের বিনিময়ে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে একজনের জমি আরেকজনের নামে নামজারি করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ভুয়া নামজারি কাটতে গিয়ে মিছ কেসের ক্ষেত্রে প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অর্পিত সম্পত্তির নামজারির ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের উৎকোচ।
নামজারির ক্ষেত্রে সর্বসাকুল্যে ১ হাজার ১৭০ টাকা সরকারি ফি নির্ধারিত থাকলেও সেখানে আদায় করা হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। আর ‘ভেজালে’র ক্ষেত্রে আদায় করা হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিনে আনোয়ারার ৫টি তহসিল অফিস ঘুরে দেখা যায়, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম আর জালিয়তির আখড়ায় পরিণত হয়েছে আনোয়ারা ভূমি অফিসসহ তহসিল অফিসগুলো। এখানে প্রতি মাসে কম করে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার মিউটেশন (নামজারি) হয়। প্রতিটি নামজারিতে কম করে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়।
‘খ’ তফসিলের নামজারি হলে ১ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। কেবল এ বাবদই এসিল্যান্ড থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত হাতিয়ে নেন এক থেকে দেড় কোটি টাকা। আনোয়ারায় ইকোনমিক জোন গড়ে উঠার কারণে এখানে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে ভূমি অফিসগুলো।
বৈরাগ এলাকার বাসিন্দা মঈন উদ্দীন জানান, তার জমির সমস্যা সমাধানের জন্য গুনতে হয়েছে ২৫ হাজার টাকা।
পরৈকোড়া এলাকার নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, ডিসিআর সরবরাহ আর খাজনা দাখিলায়ও জোর করে মোটা অংকের ঘুষ আদায় করা হয়। তাছাড়া খাজনা আদায়কালে ঘুষ নেওয়ার জন্য নামজারির ফাইলে ইচ্ছা করে কাঠ-পেন্সিল দিয়ে ছোট্ট করে ‘বিপি’, ‘কাগজের সঙ্গে রেকর্ডের মিল নেই’ কিংবা ‘দখল নাই’ বলে লিখে দেওয়া হয়। যাতে প্রকৃত ভূমির মালিককে বিভ্রান্ত করা যায়।
এ অজুহাতে তহসিল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ আদায় করে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, একই অবস্থা খাজনা দাখিলেও। ঘুষ দিলে খাজনার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়। খাজনা আদায়ের নামে তহসিল অফিসে একপ্রকার লুটপাট চলছে।
এদিকে প্রতিটি তহসিল অফিসে নাম প্রস্তাব, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ ও খাজনা-দাখিলা নিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসা-যাওয়া করে। তাদের অনেকে তহসিল অফিসে প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন।
অন্যদিকে আনোয়ারা খাসখামা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী তহসিলদার হেলাল উদ্দীনের ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও একজন ভুক্তভোগী গোপনে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে হেলাল উল্টো হুংকার দিয়ে বলে, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আমার ভাই একটা ওসি, আমার আত্মীয় বড় নেতা। এসব বলে ভুক্তভোগীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা হেলাল করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে খাসখামা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী তহসিলদার হেলাল উদ্দীন বলেন, ভিডিওটা আমার এক বন্ধু দুষ্টুমি করে করেছে। আমি আনোয়ারায় আর থাকবো না। আমার ভাইদের একটা মান-সম্মান আছে। আমার বিরুদ্ধে শত্রুতামি করছে একদল লোক।
এদিকে বরুমছড়ার তহসিলদার সাখাওয়াত হোসেন, আনোয়ারা সদর ইউনিয়নের সঞ্জীব কুমার দাশ, বটতলী ইউনিয়নের তহসিলদার বিপ্লব দাশ, সহকারী তহসিলদার মনজুরুল আলম, বারখাইন ইউনিয়ন তহসিলদার নাজিম গণির বিরুদ্ধেও বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এসব ‘বড় মিয়াদের’ জ্বালায় অতিষ্ঠ সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণ। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দালালরা এই বড় মিয়াদের দোহায় দিয়ে অবাধে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এ প্রসঙ্গে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জুবায়ের আহমদ বলেন, ভূমি নিয়ে অনিয়মের ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে আমি তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ভূমি মন্ত্রীর নিজ এলাকার ভূমি অফিসেই প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্য!!
ভূমি মন্ত্রীর নিজ এলাকার ভূমি অফিসেই প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্য!! ঘুষ নিচ্ছেন ভূমি অফিসের সহকারী তহসিলদার হেলাল উদ্দীন..আরও দেখুন-https://www.youtube.com/watch?v=eYrtNKvhoT8&feature=youtu.be
Gepostet von একুশে পত্রিকা – Ekushey Patrika am Dienstag, 3. Dezember 2019