চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর প্রস্তাবের পরই মন্ত্রী হয়েছিলেন প্রয়াত এম এ মান্নান ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
একুশে পত্রিকার আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ভিত্তিক ‘নগরে নির্বাচন’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি। বললেন, এই প্রথম আপনাদের মাধ্যমেই তথ্যটি গণমাধ্যমে জানিয়ে দিলাম।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তখন ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাস। আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। হঠাৎই মনে হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একটু দেখা করা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন একান্ত সচিব (পিএস) উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরীকে ফোন দিলাম। নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। তিনি জানতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী আমাকে চিনেন কিনা। বললাম, আপনি শুধু আমার নামটি বলুন। সাড়ে ১১ টায় এই টেলিফোন কথোপকথনের পর ১টায় ফিরতি ফোনে উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আসতে বলেছেন। দ্রুত চলে আসুন। প্রধানমন্ত্রী তখন সচিবালয়ে অফিস করতেন। আমি সচিবালয়ের কাছেই ছিলাম। আধাঘণ্টা অপেক্ষমাণ থাকার পর প্রধানমন্ত্রীর কক্ষে প্রবেশের অনুমতি মিললো।
দেখা হতেই প্রধানমন্ত্রী বললেন, কী বলবেন বলুন। আমার অনেক কাজ, ব্যস্ততা। আমি বললাম, আমি জানি আপনার অনেক ব্যস্ততা। কিন্তু মনোযোগ না পেলে কী করে বলবো। বললেন, বলতে থাকুন, আমি শুনছি। তখন আমার মনে হলো প্রধানমন্ত্রী হয়তো আমাকে ঠিকমতো চিনতে পারছেন না। তখনই আমি বললাম, দাড়ি রাখার কারণে আপনি বোধহয় আমাকে চিনতে পারেননি। আমি চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও বাঁশখালী থেকে নির্বাচিত তিন তিনবারের সংসদ সদস্য। প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিলেন। বললেন, দাড়ি রাখার কারণে আপনাকে তো চেনাই যাচ্ছে না। এবার আন্তরিকতার ঝাঁপি খুলে দিলেন।
বললাম, চট্টগ্রাম দেশের বন্দরনগরী, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছে, সেই সরকারের মন্ত্রীসভায় চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব নাই। চট্টগ্রামের মানুষ এটি ভালোভাবে নিচ্ছে না। চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে প্রতিদিন এ নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। আপনি খোঁজ নিলেই চট্টগ্রামের মানুষের অসন্তোষ শুনতে পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী তখন বললেন, চট্টগ্রামের মানুষ তো আমাদের ভোট দেয়নি। কী করে মন্ত্রী বানাবো, কাকে মন্ত্রী বানাব। মান্নান সাহেবকে প্রতিমন্ত্রী করলাম। মোশাররফ সাহেব তো হারলেন। উপ নির্বাচনে তাকে আবার এমপি করে এনেছি। জানালাম, ভোট না দিলেও আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। আপনার প্রতি চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা অনেক। তাই, চট্টগ্রাম থেকে কেবল একজন প্রতিমন্ত্রী হলে পোষায় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলেন এবং আমলে নিলেন বলে মনে হলো।
এরপর ৮ দিনের মাথায় মান্নান সাহেব প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী আর ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন হয়ে গেলেন গৃহায়ন, গণপূর্ত এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী। একসঙ্গে দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন তিনি।
মন্ত্রী বানানোর এখতিয়ার সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর। আমি বললেই যে মন্ত্রী বানিয়ে ফেলবেন তা নয়। সময়ের প্রয়োজনে আমি শুধু যৌক্তিকতাটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এবং তারপরই তারা মন্ত্রী হলেন। বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য, মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।
একই সাথে দীর্ঘ ৫২ বছরের রাজনৈতিক পথপরিক্রমা, প্রথম মেয়র হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে দিতে এবং সিটি করপোরেশনের আধুনিক গোড়াপত্তনে কী ভূমিকা রেখেছিলেন, চট্টগ্রামের অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট, কলেজে অনারারি শিক্ষকতাসহ বহু অজানা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর দীর্ঘ আলোচনায়।
প্রিয় পাঠক-দর্শক, আজ (মঙ্গলবার) রাত ৯টায় ইতিহাস-আশ্রিত তথ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানটি দেখতে চোখ রাখুন একুশে পত্রিকার ফেসবুক ও ইউটিউব পেইজে।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10157801502633899&id=672398898
একুশে/এটি