আজাদ তালুকদার : বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে কক্সবাজারের রামুর উত্তর খুনিয়া পালং বলির পাড়া সংলগ্ন এলাকায় বরাদ্দের তুলনায় বেশি সংখ্যক গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। এসব গাছ পরিবহনের জন্য পাহাড় কেটে করা হয়েছে রাস্তা। অভিযোগ রয়েছে, এসব বিষয় জানার পরও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বন বিভাগ।
অভিযোগ রয়েছে, গাছ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে স্থানীয় চার ব্যক্তি জড়িত আছেন। বনায়নের গাছ কেটে নেওয়ার জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে স্বত্ত পাওয়া নূর আহমদ ও ছৈয়দ আহমদের সাথে আঁতাত করে ওই চার ব্যক্তি এসব অপকর্ম করছেন।
এরা হলেন- বনায়নের সভাপতি হাজী আব্দুর রহমান, সহ-সভাপতি ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা তোফায়েল আহমদ, সেক্রেটারী ও খুনিয়া পালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী মোকতার আহমদ ও বনায়নের একটি গ্রুপের দলনেতা নুরুল হক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বনায়নের ২০ নং প্লটের গাছ কাটার জন্য টেন্ডারে স্বত্ত্ব পান নূর আহমদ নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু তিনি ২০ নং প্লটের নির্দিষ্ট অংশের গাছ কাটার পর তার পাশের আরো দুইটি অংশের (ওই অংশের জন্য দুইবার টেন্ডার আহ্বান করা যেত) সমপরিমাণ গাছ কেটে নিয়ে যান।
যে গাছগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার মূল্য কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা। এছাড়া পাশের ২১ নং প্লট এর পাশ থেকেও গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে; যার মূল্য কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট ছয় লাখ টাকার গাছ অবৈধভাবে কেটে নিয়ে গেছে নূর আহমদ।
অন্যদিকে ১০১ নং প্লটে গাছ কাটার জন্য টেন্ডারে স্বত্ত্ব পান ছৈয়দ আহমদ। তিনি নির্দিষ্ট অংশের গাছ কাটার পর অবৈধভাবে পাশের কিছু অংশ থেকে গাছ কেটে নিয়ে যান। এসব গাছের মূল্য কমপক্ষে ২ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ২০০৬ সালে বনায়নটি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ১০ বছর পর গাছগুলো কাটা হচ্ছে। ওই বনায়নের উপকারভোগী রয়েছেন ৫০জন। এরমধ্যে চারজন বন বিভাগকে ম্যানেজ করে গাছ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বাকি ৪৬ জন উপকারভোগী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বনায়নের উপকারভোগী স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বরাদ্দের চেয়ে বেশি গাছ কাটার ঘটনা জানার পর গত বৃহস্পতিবার সকালে ১০১ নং প্লট থেকে কেটে আনা ৮৩৪ পিস গাছ আটক করে উপকারভোগীরা।
এরপর ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গত শুক্রবার সকালে বনায়নে যান রাজারকুলের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) আবদুল হাই দেওয়ান। এসময় ৮৩৪ পিস গাছের মধ্যে ৫১৩ পিস তার ১০১ নং টেন্ডারের গাছ নয় বলে এসিএফের কাছে স্বীকার করে ছৈয়দ আহমদ।
এরপর ৫১৩ পিস গাছ থেকে ১১৯ পিস গাছ বিট অফিসে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এসিএফ আবদুল হাই দেওয়ান। এরপর শুক্রবার ৮৫ পিস গাছ বিট অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি গাছ শনিবার নেয়া হচ্ছে।
এদিকে গাছ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) আবদুল হাই দেওয়ান বলেন, ‘১০১ নং লট থেকে ৩৩৩টি গাছ কাটার জন্য এক ব্যক্তিকে আমরা রঙ দিয়ে চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এর বাইরেও আরো কিছু গাছ অবৈধভাবে রঙ দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে। এই কাজটা কে করেছে তা বের করতে তদন্ত চলছে।
তিনি বলেন, একেবারে রঙ দিয়ে চিহ্নিত না করা কিছু গাছও কাটা হয়েছে। রেঞ্জ অফিসার ছুটিতে থাকায় এরকম ১১৯ পিস গাছ বিট অফিসে আনার নির্দেশ দিয়েছিলাম আমি। তবে কোনো গাছই এখনো পাচার হয়নি। সব আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এসব বিষয় ডিএফও স্যার অবগত আছেন। তদন্তের পর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পাহাড়ের গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুনিয়া পালং বিরানব্বইর বাগানের পাশে পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়েছে। এতে বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। পাহাড় কেটে পরিবেশেরও ক্ষতি করা হচ্ছে। বন কর্মকর্তাদের নাকের ডগায় সবুজ পাহাড় ধ্বংস হলেও তারা রহস্যজনকভাবে রয়েছেন নিশ্চুপ।
জানতে চাইলে কক্সবাজার বন বিভাগের ডিএফও আলী আকবর বলেন, গাছগুলো পাহাড় থেকে আনার জন্য সাময়িকভাবে রাস্তা করা হয়েছে জেনেছি। এরপরও বিষয়টা আমি খতিয়ে দেখছি।