মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প তার প্রশাসনে কাকে কোন পদে রাখছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। নির্বাচনী প্রচারে রিপাবলিকান পার্টির প্রভাবশালী সদস্যরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর এখন তাদের প্রতি ‘পাল্টা এক হাত’ নেবেন ট্রাম্প, এমনটাই ধারণা করছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো।
তাদের ভাষ্য, প্রচারের পুরো সময় ধরে বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ ছিলেন এমন ব্যক্তিদের মার্কিন প্রশাসন ও হোয়াইট হাউজের শীর্ষপদে আনছেন নতুন প্রেসিডেন্ট। অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মাইকেল ফ্লিনকে নতুন প্রশাসনে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করা হতে পারে বলে ধারণা করছে রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান ফ্লিন, ট্রাম্পের বেশিরভাগ প্রচার সমাবেশে প্রথম বক্তা ছিলেন। পররাষ্ট্র নীতি বিষয়েও ট্রাম্প তার উপর অনেকখানি নির্ভর করেন বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
কংগ্রেসে ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত আলাবামার রিপাবলিকান সিনেটর জেফ সেশনসকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে বলে বুধবার ‘দায়িত্বের পালাবাদল’ সংক্রান্ত এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স। ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের ম্যানেজার ক্যালিয়ানে কনওয়েকে করা হতে পারে ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভের সাবেক স্পিকার নিউট গিংরিচকে চিফ অব স্টাফ পদে দেখা যেতে পারে বলে ধারণা করছে সিএনএন। একই পদে দেখা যেতে পারে নিউ জার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি, নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি কিংবা রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির (আরএনসি) চেয়ারম্যান রিয়েন্স প্রাইবাসকেও। আরএনসির জ্যেষ্ঠ কৌশলবিদ শন স্পাইসারকে দেখা যেতে পারে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র (প্রেস সেক্রেটারি) পদে। অবসরপ্রাপ্ত নিউরো সার্জন বেন কার্সনকে দেখা যেতে পারে শিক্ষামন্ত্রী বা স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী পদে। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো জন বল্টন কিংবা কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড হাসকেও দেখা যেতে পারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে। রিপাবলিকান দলের ‘কৌশলবিদ’ হিসেবে খ্যাত গিংরিচ কিংবা সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ার বব কোর্কারকেও এই পদে দেখা যেতে পারে বলে ধারণা রয়টার্সের।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ টেনেসির রিপাবলিকান সিনেটর কোর্কার ও গিংরিচ দু’জনকেই নির্বাচনী প্রচারের শুরুতে ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। যদিও ওই পদে ইন্ডিয়ানার গভর্নর মাইক পেন্সকেই পছন্দ করেছেন ট্রাম্প।
নতুন প্রেসিডেন্টের যোগাযোগ ব্যবস্থাপক হিসেবে দেখা যেতে পারে তার প্রচার শিবিরের এ সংক্রান্ত জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জেসন মিলার কিংবা মুখপাত্র হোপ হিকসকে। জেসন মিলারকে দেখা যেতে পারে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র হিসেবেও। আর হোপ হিকসের মিলতে পারে ট্রাম্পের উপদেষ্টা পদও।
ট্রাম্প উপদেষ্টা করে নিতে পারেন তার প্রচার শিবিরের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ব্যানন, আরএনসির চেয়ারম্যান রিয়েন্স প্রাইবাস, প্রচার শিবিরের সহকারী ব্যবস্থাপক ডেভিড বসিকেও। গুরুত্বপূর্ণ অর্থমন্ত্রী পদে ট্রাম্প ব্যবসায়ীদের বসাতে পারেন বলে ধারণা করছে সিএনএন।
এক্ষেত্রে তার পছন্দের তালিকায় আছে আইকান এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষ ধনী কার্ল আইকান। এ পদে দেখা মিলতে পারে ডুন ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী ও কো-চেয়ারম্যান স্টিভেন ম্নুচেনকেও। রুডি জুলিয়ানি হতে পারেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা সিআইএ-র পরিচালক। তাকে দেখা যেতে পারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি) হিসেবেও। অ্যাটর্নি জেনারেল পদেও ট্রাম্পের পছন্দে আছেন জুলিয়ানি। এ পদে আসতে পারেন জেফ সেশন কিংবা ক্রিস ক্রিস্টিও।
সিনেটর সেশনসকে দেখা যেতে পারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদেও। একই জায়গায় আসতে পারেন আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো জিম ট্যালেন্ট, অ্যারিজোনার সাবেক সিনেটর জন কাইন কিংবা হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান প্রতিনিধি ডানকান হান্টারকেও।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মুখপাত্র রিচার্ড গ্রেনেল হতে পারেন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত। হাউজ পার্মানেন্ট সিলেক্ট কমিটি অন ইন্টেলিজেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মাইক রজার্সকে দেখা যেতে পারে সিআই পরিচালক হিসেবে।
পছন্দের এসব ব্যক্তিদের বাইরেও ট্রাম্প তার প্রতিষ্ঠান কিংবা ঘনিষ্ঠ অন্যদের নিয়োগ দিয়ে চমকে দিতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে। তবে শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে কোন পদ জোটে তার জন্য আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।