একসময় ইন্টারনেট এতটা ব্যবহারবান্ধব ছিল না। মানুষকে কষ্ট করে ইন্টারনেটে যেতে হতো। তখন ইন্টারনেটের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে এত বেশি দুশ্চিন্তারও কিছু ছিল না। কিন্তু আধুনিক কালের উচ্চগতির ওয়াই-ফাই বা সামাজিক যোগাযোগের যুগে শিশু থেকে বৃদ্ধরাও ইন্টারনেটে আসতে পারছেন। অনলাইনে কেনাকাটা, আর্থিক লেনদেন, সামাজিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে নানা কাজ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বিপদ। তাই ইন্টারনেটের কিছু বিষয়ে মানুষকে আগের চেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। ইন্টারনেট নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কির তথ্য অনুযায়ী, সাতটি বিষয়ে মানুষকে এখন বেশি সচেতন থাকতে হবে। এ বিষয়গুলো সহজ হলেও মানুষকে বোকা বানাতে এগুলো ব্যবহার করা হয়।
১. মুক্ত ওয়াই-ফাইয়ের ওপর ভরসা করা
মুক্ত ওয়াই-ফাই বা বিনা মূল্যের ওয়াই-ফাই পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়া ঠিক নয়। মুক্ত ওয়াই-ফাইয়ের ওপর আস্থা রাখলে ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে। অনেক সময় সাইবার দুর্বৃত্তরা পরিচিত নেটওয়ার্কের নাম দিয়ে ওয়াই-ফাই হটস্পট তৈরি করে রাখে। কোনো নেটওয়ার্ক পরিচিত হলেও তাতে আর্থিক লেনদেন, কেনাকাটা করা ঠিক হবে না। এ ছাড়া যেসব সাইটে লগইন করার দরকার পড়ে, সেগুলোয় উন্মুক্ত ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে বিশ্বাস করে ঢোকা ঠিক হবে না। সম্ভব হলে ভিপিএন ব্যবহার করুন।
২. সহজ, অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার
পোষা প্রাণীর নাম, জন্মদিন, পারিবারিক নামের মতো সহজে অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ডগুলো অনিরাপদ। যে পাসওয়ার্ড সহজে ধারণা করা যায় না, এমন জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। সহজে মনে রাখতে পারেন, কিন্তু অন্যরা সহজে ধরতে পারবে না, এমন কৌশলী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
৩. পাসওয়ার্ড পুনর্ব্যবহার
হয়তো জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলেন, কিন্তু কোনো এক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার ফলে ওই পাসওয়ার্ড হাতছাড়া হতে পারে। তাই একই পাসওয়ার্ড আবার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৪. ই-মেইলে আসা লিংকে ক্লিক
ই-মেইলে নানা প্রলোভন দেখানো মেইল আসতে পারে। আবার অনেক মেইলে নানা অফারের লিংক আসে। মেইলে অপরিচিত কিংবা পরিচিত কোনো উৎস থেকে আসা লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। কোনো স্প্যাম বা ফিশিং ই-মেইলের লিংকে ক্লিক করলেও এমন কোনো সাইটে চলে যেতে পারেন, যেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ম্যালওয়্যার ডাউনলোড হতে পারে। এমনকি এমন কোনো ভুয়া সাইটে চলে যেতে পারেন, যা দরকারি পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিতে পারে। এসব লিংকে ক্লিক করলে স্প্যামার বুঝতে পারে, কেউ ফাঁদে পা দিয়েছে। ই-মেইলে আসা লিংকের মতোই ফেসবুকে লাইক সংগ্রহ করে—এমন লিংকগুলোয় ক্লিক করা থেকেও বিরত থাকুন। আইফোন জেতার অফার কিংবা কোনো নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে মন্তব্য বা শেয়ার করতে যেসব লিংকে বলা হয়, সেগুলো এড়িয়ে যেতে হবে।
৫. কারও সঙ্গে লগইন তথ্য আদান-প্রদান না করা
যত ঘনিষ্ঠ হোক না কেন, অনলাইনের লগইন তথ্য আদান-প্রদান না করাই ভালো। কারও কাছে লগইন তথ্য থাকলে অ্যাকাউন্ট বেহাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৬. অবস্থানগত তথ্য অনলাইনে না জানানো
অনেকেই কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে বা বাড়ির বাইরে থাকলে ফেসবুক-টুইটারে জানিয়ে দেন। অবস্থানগত তথ্য অনলাইনে জানিয়ে দেওয়ার ফলে দুর্বৃত্তদের অসৎ উদ্দেশ্য পূরণে সুবিধা হতে পারে। কোথাও বেড়াতে গেলে বিশ্বস্ত বন্ধুদের জানাতে পারেন, তবে তা ইন্টারনেটের পুরো দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিলে নানা ঝুঁকি বাড়ে।
৭. সামাজিক যোগাযোগের সাইটের ডিফল্ট সেটিংস রেখে দেওয়া
এখন অনেক মানুষ ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইট ব্যবহার করেন। এ ধরনের সাইট ব্যবহারের সময় প্রাইভেসি সেটিংস নিয়মিত পরিবর্তন করা উচিত। নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সময় অন্তত পাঁচ মিনিট প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা সেটিংস নিয়ে কাজ করুন। যাঁদের অনলাইন অ্যাকাউন্ট আছে, তাঁরা প্রতি মাসে প্রাইভেসির বিষয়টি একবার পরিবর্তন করুন। ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইনে কোনো কিছু পোস্ট করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন। অপরিচিত কারও কাছে ব্যক্তিগত তথ্য তুলে দেওয়ার আগে একটু ভাবনা অনেক ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। তথ্যসূত্র: জিনিউজ।