চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবে যে জুয়ার আসর চলে, সেটার প্রমাণ দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব সামশুল হক চৌধুরী।
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেছেন, ‘আবাহনী ক্লাবের জুয়ার আসর ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু দীঘল (আবাহনী ক্লাবের জুয়ার আসরের নিয়ন্ত্রক যুবলীগ নেতা) কেন, নেপথ্যে আরো অনেক সিনিয়র লোকজন সেখানে জড়িত। এখন সব বন্ধ থাকবে।’
একইদিন ‘চট্টগ্রামেও যুবলীগ নেতার মদদে জুয়ার আসর’ শিরোনামে একুশে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনে সিএমপি কমিশনারের উক্ত বক্তব্য উল্লেখ করা হয়।
সিএমপি কমিশনারের উক্ত বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব সামশুল হক চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘উনি (সিএমপি কমিশনার) তো বক্তব্য দিয়েছেন। শুধু বললে তো হবে না। প্রমাণ দেখাতে বলুন। সিনিয়র লোকদের নাম বলতে বলুন। সিএমপি কমিশনার চট্টগ্রাম ক্লাব, সিনিয়র ক্লাবে কেন অভিযান চালান না? এগুলোতে জুয়া খেলা হয় না? তাস খেলা হয় না?’
এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে আইস ফ্যাক্টরী রোডে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, হালিশহরে আবাহনী ক্লাব এবং সদরঘাটে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে র্যাব অভিযান চালায়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রে অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনটি ক্লাবেই জুয়ার আসর বসানোর আলামত পাওয়া গেছে। তবে মধ্যরাতে র্যাবের পাঠানো এক ক্ষুদেবার্তায় বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে ক্যাসিনোর আইটেম পাওয়ায় নিয়মিত মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। বাকি দুইটিতে যা পাওয়া গিয়েছে তা দিয়ে জুয়ার বিষয় প্রতিষ্ঠিত করা যায় না।
রোববার রাতে টেলিফোনে একুশে পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে সেখানে (আবাহনী ক্লাব) কী পেয়েছে? মদের বার পেয়েছে? ক্যাসিনো পেয়েছে? কিছুই তো পায়নি। চার প্যাকেট তাস পেয়েছে। এ ধরনের তাস তো আমার বাসায়ও থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ যথাযথভাবে না মেনে চট্টগ্রামের ক্লাবগুলোতে এই অভিযান হয়েছে দাবি করে সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী, ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের দমন করতে। প্রধানমন্ত্রী তো আর বলেনি যে ছোট ছোট ক্লাবগুলোকে বন্ধ করে দাও। ছোট ছোট প্লেয়িং ক্লাবগুলোতে অভিযান করার দরকার কী? তাদেরকে ডেকে বলে দিলে হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘চার ঘণ্টা ধরে অভিযান। কিন্তু কিছুই পাওয়া গেল না। আমাদের তো মান-সম্মান আছে। আবাহনী ক্লাবের সভাপতি এমপি লতিফ সাহেব, মহাসচিব আমি। আমাদের ভাবমূর্তি তো ক্ষুণ্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাব ঐতিহ্যবাহী ক্লাব, আন্তর্জাতিক একটি ক্লাব। আপনি তো তাদেরকে বেইজ্জতি করতে পারেন না।’
আবাহনী ক্লাবে তাস খেলা থেকে আয়ের চিত্র তুলে ধরে মহাচিব সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি খবর নিয়েছি, ক্লাবের মধ্যে তারা ‘বোর্ড মানি’ দেয়। ৮-৯ জনে খেললো, ২ হাজার, ৩ হাজার টাকা হবে। এগুলো দিয়ে তারা ক্লাবের খরচ চালায়। এগুলোই হয়। এখন এগুলোকে যদি জুয়া আর ক্যাসিনো বানিয়ে ফেলেন… আপনারা সাংবাদিকরা এগুলোকে ক্যাসিনো মনে করছেন। ২০-৩০ বছর ধরে আপনারা সাংবাদিকরা এসব দেখেননি? এগুলো তখন লেখেননি কেন?’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি ক্যাসিনো ব্যবসার বিরুদ্ধে। আমি মাদকের বিরুদ্ধে। অনলাইনে জুয়ার বাজি ধরে, আমি এগুলোর বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন খেলার জন্য ২০ কোটি টাকা দেবেন। এগুলো তো ক্লাবকে দেওয়া হয় না। ফেডারেশনকে দেওয়া হয়। ক্লাবগুলোকে তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’