চট্টগ্রাম : আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে চীন ও বিদেশের বিভিন্ন মহলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করার প্রতিদান হিসেবে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সুনীল কান্তি বড়ুয়ার ছেলে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেয়া বিপ্লব বড়ুয়া যুক্তরাজ্যের উল্ভারহ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। যুক্তরাজ্যের সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে বার ভোকেশনাল কোর্স (পিজিডিএল), যুক্তরাজ্যের কল টু দ্যা বার ‘দ্যা অনারেবল সোসাইটি অব গ্রেস ইন’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া আগের কমিটিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সহ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ঘোষণাপত্র উপ পরিষদ (জাতীয় কাউন্সিল ২০১৬), অভ্যর্থনা উপ পরিষদ (জাতীয় কাউন্সিল ২০১৬) এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবারের জাতীয় কাউন্সিলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ থেকে কাউন্সিলরও ছিলেন।
এর আগে ছাত্রজীবনে সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সাতকানিয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক, সাতকানিয়া থানা ছাত্রলীগের এডহক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এমনকি দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রলীগ সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন বিপ্লব বড়ুয়া। ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় কমিটির সদস্য।
১৯৯২-১৯৯৪ রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন উদীয়মান আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। ১৯৮৮ সালের ১২ই এপ্রিল সাতকানিয়ায় জামাত-শিবিরের সশস্ত্র হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। এরপর ১৯৯৪ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের হামলায় আহত হন। পরে ১৯৯৬ সালে বাংলা একাডেমির বইমেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আগমন প্রতিহত করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন।
২০০২ সালে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করার অভিযোগে খালেদা জিয়ার জোট সরকার বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা বিভাগের প্রযোজক পদ থেকে বে-আইনীভাবে চাকরিচ্যুত করে বিপ্লব বড়ুয়াকে।
ভয়াবহ ২১ আগস্ট বোমা হামলার পর লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিধানের জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের কাছে পত্র প্রেরণ করে দলের দুঃসময়ের ভূমিকা রাখেন বিপ্লব।
বিতর্কিত ১/১১ এর সময়ও রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ২০০৭ সালের ১/১১ এর পরবর্তী সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে ব্রিটিশ সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন লাভের জন্যে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বিশেষ করে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের কাছে ই-পিটিশন প্রদানে অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন চট্টগ্রামের এই কৃতি সন্তান।
২০০৮ ও ২০১৪ সালে নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেন্টারে অন্যতম সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ সফরকারী বিদেশী সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে যোগাযোগ ও সহযোগিতা প্রদান করেছিলেন নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে।
চীনের সাথে দল ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে প্রশংসিত হন। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে চীন সফর করেন। এর পরের বছর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনূর্ধ্ব ৪০ নেতাদের নিয়ে প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে চীন সফর করেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাথে চীন সফরে যান বিপ্লব বড়ুয়া।
২০১৬ সালের জুন মাসে সিআরআই-এর প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবেও চীন সফর করেন। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৪ দলের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে চীন সফর করেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের আমন্ত্রণে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দের সফরকালে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের সাথে চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তোলেন এই নেতা।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) এর সাথে বিভিন্ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সদ্য ঘোষিত দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া বিপ্লব বড়ুয়া।
যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায়ের পর সারাদেশে জামাত-বিএনপি পরিচালিত সাম্প্রদায়িক হামলার বিবরণী বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের দূতাবাসে উপস্থাপন এবং এই নিয়ে জেনেভায় জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা এবং তাইওয়ানে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করে প্রশংসা কুড়ান চট্টগ্রামের এই মেধাবী সন্তান।
শুধু তাই নয়, ব্যারিস্টার বিপ্লব ২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ পল্লিতে হামলার পর রামুতে একটানা ১০ দিন অবস্থান করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ শান্তি সম্মেলন অয়োজনে সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করেন তিনি।
২০১১ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এ সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৯৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের অবৈতনিক গাইড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্যারিস্টার বিপ্লব ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ জুবায়ের-এর প্রধান নির্বাচনী এজেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হন।
বিভিন্ন সামাজিক ও অরাজনৈতিক সেবামূলক সংগঠনের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন আওয়ামী লীগের এই তরুণ নেতা। বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ বৌদ্ধ জাতীয় সুরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব, বাংলাদেশ মানবাধিকার ও পরিবেশ আন্দোলনের সহ-সভাপতি, ড. বুদ্ধপ্রিয় সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এলমনাই এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এলমনাই এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালি বৌদ্ধদের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং একমাত্র ব্রিটিশ কোয়ালিফাইড ব্যারিস্টার। ২০০৯ সাল থেকে তার একক উদ্যোগে নিয়মিতভাবে জাতীয় শোক দিবস এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন হয়।
আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে ত্যাগী, বিদগ্ধ, কর্মমুখর এই নেতার অন্তর্ভূক্তিতে আনন্দের বন্যা বইছে তার জন্মস্থান লোহাগড়াসহ সমগ্র চট্টগ্রামে। রাজনীতি সচেতনদের মতে, আগামীর আধুনিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের পাশাপাশি দলকে শক্তিশালী করতে একটি মেধাবী, জ্ঞাননির্ভর কাফেলা তৈরির বিকল্প নেই। চট্টগ্রামের সন্তান ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াই হতে পারেন সেই কাফেলার তরুণ তুর্কি, পরিশুদ্ধ রাজনীতির অন্যতম ধ্রুবতারা।