শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

স্বর্গীয় প্রেমের অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

প্রকাশিতঃ ২৩ অগাস্ট ২০১৯ | ৫:৩৯ অপরাহ্ন

হাসিনা আকতার নিগার : সনাতন ধর্মের একমাত্র পূর্ণবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ শুভ আবির্ভাব তিথি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথিকে কেন্দ্র করেই শুভ জন্মাষ্টমী উৎসব। দ্বাপর যুগের সন্ধিক্ষণে পাশবিক শক্তি যখন সত্য, সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই অসুন্দর, অসুর ও দানবীয় পাশবিক শক্তিকে দমন করে মানবজাতিকে রক্ষা এবং শুভ শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ণবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পৃথিবীতে আবির্ভাব সম্পর্কে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদগীতায় উল্লেখ রয়েছে-

‘যদা যদাহি ধর্মস্য গ্লানি ভবতি ভারত।
অভ্যূত্থানম ধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম।
ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে।’

[জ্ঞানযোগ ৭/৮]

অর্থাৎ ‘হে ভরত, যখনি পৃথিবীতে অধর্ম বেড়ে যায় তখনই আমি অবতীর্ণ হই, অবতীর্ণ হয়ে সাধুদের রক্ষা দুষ্টের বিনাশ ও ধর্ম সংস্থাপন করি।’

দ্বাপর যুগের শেষদিকে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন এবং ধর্মরক্ষার লক্ষ্যে মহাবতার রূপে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব ঘটেছিল।

সমগ্র ভারতবর্ষে যখন হানাহানি, রক্তপাত, সংঘর্ষ, রাজ্যলোভে রাজন্যবর্গের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ তথা পৃথিবী যখন মর্মাহত, ঠিক সেই সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের যুগ সন্ধিক্ষণে তাঁর আবির্ভাব অনিবার্য হয়ে পড়ে। ঘোর অমানিশার অন্ধকারে জন্মগ্রহণ করায় কৃষ্ণের গায়ের রং শ্যামল, অন্য অর্থে ধূসর, পীত বা কালো।

শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব বৃত্তান্তের পটভূমি একটু ভিন্ন ধরনের। সেটা দ্বাপর যুগের ঘটনা। মগধের অধিপতি জরাসন্ধ ছিলেন এক রাজ্যলোভী রাজা। তিনি ১৮ বার মথুরা আক্রমণ করে ব্যর্থ হন। আর সেই ব্যর্থ রাজা জরাসন্ধ গ্লানিতে অস্থির-উন্মাদ হয়ে শেষে আশ্রয় নেন এক কুটকৌশলের। মথুরার রাজা উগ্রসেনের পুত্র অত্যাচারী কংসকে নিজ দলে ভিড়িয়ে তার নিজের দুই মেয়েকে কংসের সাথে বিবাহ দেন হীনস্বার্থ হাসিলের জন্য।

কংসের সিংহাসন লাভের দুর্বিনীত আকাঙ্ক্ষার ফলে জরাসন্ধের সাথে এই আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন হয়। ফলে জরাসন্ধ ও কংস দুজনেই অনেকাংশে বলশালী হয়ে উঠেন। অন্যদিকে তাদের এই উত্থানে মথুরাবাসী উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন। কারণ মথুরাবাসী ছিল অত্যন্ত দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও শান্তিপ্রিয় জনগোষ্ঠী। বিশেষকরে যাদবরা তাদের চিরশত্রু জরাসন্ধের সঙ্গে কংসের এ আত্মীয়তার বন্ধনকে মনে মনে ধিক্কার জানান। মনেপ্রাণে তারা হয়ে ওঠেন আরো বিদ্রোহী।

এদিকে ক্ষমতালোভী কংস পিতা উগ্রসেনকে বন্দী করে মথুরার সিংহাসন দখল করেন। তখন আত্মীয়-স্বজন বিশেষকরে যাদবকূল বিদ্রোহী হয়ে উঠে। এ অবস্থায় তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ প্রশমনের কৌশল হিসেবে কংস যাদবকূলের শুর সেনের পুত্র, বিশ্বস্ত বন্ধু বসুদেবের সাথে নিজ বোন দেবকীর বিবাহ দেন। কিন্তু ক্রমে কংসের আশা দুরাশায় পরিণত হয়।

সদ্য পরিণীতা বোন দেবকীকে বসুদেবসহ রথে করে নিয়ে যাবার সময় কংস এই দৈববাণী শুনতে পান – ‘তোমার এই বোনের অষ্টম সন্তানই হবে তোমার মৃত্যুর কারণ।’ মৃত্যুর আশংকায় ভীত কংস সে সময়ই দেবকীকে হত্যা করতে উদ্যত হলে বসুদেব কংসকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, দেবকীর উদরে যে সন্তান জন্ম নেবে তাকে তিনি কংসের হাতে তুলে দেবেন। এ কথায় আশ্বস্ত হয়ে কংস বোন দেবকীকে তখন হত্যা করা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু বোন ও ভগ্নীপতিকে তক্ষুনি কারাগারে নিক্ষেপ করতে দ্বিধাবোধ করেননি।

এর দশ মাস দশদিন পর দেবকী এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। সঙ্গে সঙ্গে কংসের হাতে তুলে দেন বসুদেব তার সদ্যজাত সন্তানকে। শিশুটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে কংসের হাত একটুও কাঁপেনি। এভাবে বসুদেব-দেবকীর আরও ছয়টি সন্তান একে একে কংসের নিষ্ঠুর নির্মমতার শিকার হন।

এদিকে গোকুলে বাস করতেন বসুদেবের প্রথমা স্ত্রী রোহিনী। তার উদরে জন্ম নেয় আরেক পুত্রসন্তান। নাম তার বলরাম। একে একে দেবকীর সাতটি সন্তানকে হত্যার পর মৃত্যুর চিন্তায় উৎকন্ঠিত কংস তখন আরো দিশেহারা। এরপর দেবকী অষ্টম বারের মত সন্তানসম্ভবা হলে কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো কঠোর করা হয়।

অন্যদিকে সাতটি সন্তান হারিয়ে শোকে কাতর কারারূদ্ধ দেবকী-বসুদেব দম্পতি। তারা কংসের হাত থেকে সন্তানকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বরের শরণাপন্ন হন। সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের সেই যুগসন্ধিক্ষণে তারা শুরু করেন বিষ্ণুর বন্দনা। দেবতা বিষ্ণু এই সন্তান হারানোর শোকে কাতর মাতা-পিতার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারেননি। ফলে ধরণীর অত্যাচারিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় ব্যথিত হয়ে এবং অরাজকতার দিনের অবসান করতে ভাদ্র মাসের অষ্টমী তিথির কৃষ্ণপক্ষের গভীর অন্ধকার রাতে চারদিক আলোয় উদ্ভাসিত করে আবির্ভূত হন পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ যুগ অবতার।

কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপের মধ্যেই দেবকী কারাপ্রকোষ্ঠে অষ্টম সন্তানের জন্ম দিলেন। বসুদেব দেখতে পেলেন নবজাতক শিশুটি চার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা এবং পদ্ম ধারণ করে আছেন। সারা দেহে শোভা পাচ্ছে নানা রকম মহামূল্যের মনিমাণিক্য খচিত সব অলংকার। বসুদেব তিনি বুঝতে পারলেন জগতের মঙ্গলার্থে পূর্ণব্রহ্ম নারায়ণই জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের ঘরে। মর্তের বুকে আবির্ভাব ঘটেছে শ্রীকৃষ্ণ মহাবতারের।

বসুদেব করজোড়া প্রণাম করে তার বন্দনা শুরু করলেন। সেই সময় বসুদেব ও দেবকী দৈববাণী শুনতে পান, ‘আমি জনি, আপনারা আমাকে নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত এবং কংসের ভয়ে ভীত। তাই আমাকে এখান থেকে গোকুলে নিয়ে চলুন। সেখানে নন্দ এবং যশোদার ঘরে একটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। আমাকে ওখানে রেখে তাকে এখানে নিয়ে আসুন।’

এ দৈববাণী শুনে শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বসুদেব কারাগার থেকে বের হবার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু বুঝতে পারছিলেন না কারাগারে এত প্রহরীর উপস্থিতির মধ্যে তিনি কীভাবে নবজাতককে নিয়ে বের হবেন। আর এই ঘোর কৃষ্ণরাতের অন্ধকারে কোন পথেই বা যাবেন।

অন্যদিকে গোকুলে নন্দ এবং যশোদার সন্তানরূপে যিনি জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন ভগবানের অন্তরঙ্গ শক্তি যোগমায়া। যোগমায়ার প্রভাবে কংসের প্রাসাদের প্রহরীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কারাগারের দরজা আপনা আপনি খুলে যায়। সে রাত ছিল ঘোর অন্ধকার। কিন্তু যখন বসুদেব তার শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে বাইরে এলেন তখন সবকিছু দিনের আলোর মত দেখতে পেলেন। আর ঠিক সেই সময় গভীর বজ্রনিনাদের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো প্রবল বর্ষণ। বসুদেব যখন শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বৃষ্টির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ভগবান শেষসর্পরূপ ধারণ করে বসুদেবের মাথার উপরে ফণা বিস্তার করলেন। বসুদেব যমুনা তীরে এসে দেখলেন যমুনা নদীর জল প্রচণ্ড গর্জন করতে করতে ছুটে চলেছে। কিন্তু এই ভয়ংকর রূপ সত্ত্বেও যমুনা বসুদেবকে যাবার পথ করে দিলেন।

এভাবে বসুদেব যমুনা পার হয়ে ও একে একে নানা বাধা অতিক্রম করে গোকুলে নন্দ মহারাজের ঘরে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন সমস্ত গোপগোপীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন। এই সুযোগে তিনি নিঃশব্দে যশোদার ঘরে প্রবেশ করে শ্রীকৃষ্ণকে সেখানে রেখে যশোদার সদ্যজাত শিশুকন্যাটিকে সঙ্গে নিয়ে কংসের কারাগারে ফিরে এলেন। দেবকীর কোলে শিশুকন্যাটিকে তুলে দিলেন বসুদেব। এভাবে বসুদেব নিজেকে আবারো শৃংখলিত করলেন, যাতে করে কংস বুঝতে না পারে রাতের অন্ধকারে কারাগারের অভ্যন্তরে ইতিমধ্যে কী ঘটে গেছে। যদিও পরবর্তীতে কংস বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

এদিকে মাতা যশোদার কোলে বড় হতে থাকে শ্রীকৃষ্ণ। এর মাঝে কংস নানাভাবে শ্রীকৃষ্ণকে খুঁজে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু তার সব চক্রান্তই ব্যার্থ হয়ে যায়। কংসের অত্যাচারে নিপীড়িত মানুষ মুক্তির আশায় কানু তথা কৃষ্ণের অনুসারী হয়ে উঠে। ক্রমান্বয়ে ধরণীর নিপীড়িত মানুষেরা কংসবধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। কংসবধের জন্য মথুরায় আয়োজন করা হয় মল্লক্রীড়ার। এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় কৃষ্ণ ও বলরামকে। এ মল্লক্রীড়ায় উপস্থিত হন আশেপাশের রাজ্যের অন্যান্য রাজন্যবর্গও।

অন্যদিকে কৃষ্ণবধের অলীক আশায় কংস তখন আত্মহারা। ক্রীড়া প্রাঙ্গণের সামনে পাগলা হাতি রাখা হয় কৃষ্ণকে পিষে মারার জন্য। বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে কংস চানুর ও মুষ্টিক নামে দুই খ্যাতিমান ও অত্যন্ত বলবান মল্লবীরকে কৃষ্ণ হত্যার জন্য সেখানে উপস্থিত করেন। কিন্তু অন্তর্যামী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসের সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেন। কৃষ্ণের মুষ্ঠির আঘাতে নিহত হয় কংসের সেই হাতি, মুষ্ঠিক ও চানুর। হতভম্ব কংস উপস্থিত নিজ রাজন্যবর্গ, সেনদল ও সহচর সহ সবাইকে তার পক্ষে অস্ত্রধারণ করতে বলেন। কিন্তু কেউই সেই আবেদনে সাড়া দিলেন না। তখন নিরুপায় কংস যুদ্ধনীতি লঙ্ঘন করে অস্ত্র নিয়ে নিজেই শ্রীকৃষ্ণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। অবশেষে কৃষ্ণের লৌহ মুষ্ঠির আঘাতে কংসকে ভূমিতলে শয্যা নিতে হয়।

শ্রী কৃষ্ণের দর্শন, প্রেমের বাণী তথা কর্মকাণ্ড মানব সমাজকে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাইতো শুধু দুষ্টের দমনই নয় এক শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি বছর শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন তথা জন্মাষ্টমী সনাতন ধর্মাবল্বীদের মাঝে নিয়ে আসে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এক শুভ আনন্দময় বার্তা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদগীতার উদগাতা ভাগবান শ্রীকৃষ্ণ অরাজকতায় আচ্ছন্ন পৃথিবীতে অবতরণ করে কংস, জরাসন্ধ ও শিশুপালসহ বিভিন্ন অত্যাচারিত রাজাদের বধ করেন। ধ্বংস করেন সকল অশুভ শক্তিকে। প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মরাজ্যের। আর এভাবেই শ্রীকৃষ্ণ অরাজকতার হাত থেকে কলুষমুক্ত করেন পৃথিবীকে। অরাজকতার স্থলে মানবপ্রেমের অমিত বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেন।

গীতাতে স্বয়ং ভগবান ‘শ্রীকৃষ্ণ’ অর্জুনকে বলেছেন, ‘আমি জন্মহীন, অব্যয় আত্মা, ভূতগণের ঈশ্বর (শাসক, নিয়ন্তা, স্রষ্টা) হয়েও নিজ প্রকৃতিকে (অনির্বচনীয় মায়াশক্তিকে) আশ্রয় করে আত্মমায়ায় জন্মগ্রহণ করি।’

ভক্তরা তাঁকে যে নামে ডাকেন সেই নামেই তিনি সাড়া দেন। যেভাবে তাঁকে পেতে চান, সেভাবেই তিনি ধরা দেন। তাই তো তিনি দেবকী ও বসুদেবের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে কংসের কারাগারে তাদের সম্মুখে আবির্ভূত হয়েছিলেন পুত্ররূপে, ‘শ্রীকৃষ্ণ’ নামে।

মূলত ‘পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলন’ই হলো শ্রীকৃষ্ণের বাণীর মূল বিষয়। তাই তো তিনি নিজ ভক্তদের কাছে হয়ে আছেন ‘প্রেমাবতার’।

হাসিনা আকতার নিগার : কলাম লেখক