পাণ্ডুলিপি

শাহানা ইয়াসমিন : কচি সবুজ রঙের পাতায় পোঁকার আবাস। মিথ্যে আবেগে ফসলী ধানে চিটা। কখনো কবিতার অক্ষরগুলো গোলমেলে শব্দে ছন্দছাড়া অর্থহীন। শিশুর মায়াবী চাহনির জায়গায় আতংকের বাস। সমুদ্র অকারণেই ফুসছে। ভাঙনের শব্দ। পাঁজরের ব্যথাটা ক্ষণে ক্ষণে অসহ্য হয়ে ওঠে। সাদা কাগজে সৃষ্টিশীলতা হাঁসফাস করে।

ধোমড়ানো কাগজ অতপর ঘরের কোণায় বাস্কেটে পরিত্যক্ত হয়ে জমতে থাকে। হাল ছেঁড়ে দেই। হয়ত পৃথিবীকে দেবার ক্ষমতা হারিয়েছি। কলমটাকে নিজের অজান্তেই টুকরো টুকরো করে ছুঁড়ে ফেলি। বুক ঠেলে যতটুকু সম্ভব একটা গভীর নিঃশ্বাস নিলাম। নাহ আজ সব ভুলে নিজেকে অন্যরকম কল্পনায় নিয়ে যাব। মন্দ কী। হলুদ স্বপ্নে বিভোর হতে মন চাইছে। ফেলে আসা অতীতে ডুব দিয়ে নিজেকে না হয় হারালাম। বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরালাম। এমন সময় মুঠো ফোনটা বেজে উঠল। আননোন নাম্বার। স্বপ্নবিলাসে ছেদ। একরকম বিরক্ত হয়েই ফোনটা তুললাম।

‘হ্যালো’- ওপাশে নিশ্চুপ। আবার হ্যালো বললাম, তবুও কোনো সাড়াশব্দ নেই। একটি নিঃশ্বাস। প্রচণ্ডভাবে থমকে গেলাম। মনে হল একটা হার্টবিট মিস করলাম। বললাম, ‘কেমন আছ? এতদিন পর! ভাল আছতো?’

ওপাস থেকে বলে উঠল- ‘কেমন করে বুঝলে? আমাকে এখনো এতটাই মনে রেখেছ?’
বললাম, ‘হুম, অতটাই, যতটা তুমি ভুলতে চেয়েছ আমায়।’

ওপাস থেকে বলে উঠল, ‘আ্মার ওপর অনেক রাগ ক্ষোভ? এতো বছরেও আমাকে ক্ষমা করতে পারলে না।’
আয়েশ করে সিগারেটে একটা টান দিলাম।

বলল, ‘সিগারেট ধরেছ কবে?’

উত্তরে কিছু বলতে বা জানতে ইচ্ছে করল না, কেমন করে বুঝলে আমার ঠোঁটে সিগারেট। কেবল বললাম, ‘তোমার দেয়া ক্ষমতা পুষি। বেশ ভালোভাবেই পরিচর্যা করি। তরতাজা ক্ষতই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে আর বুঝিয়ে দেয় আমি মরিনি। লাইনটা কেটে, ফোনটা অফ করে দিলাম।

ভাঙা কলমটাকে খুঁজছি। ইস ঘরে আর কোনো কলমও নেই। মধ্যরাত। অগত্যা ঐ কলমই ভরসা। কাগজ টেনে নিলাম। ভাঙা কলম দিয়ে অভঙ্গুর কষ্টের আকুতি বেরিয়ে আসতে লাগল। এখন আর ধোমড়ানো কাগজ ডাস্টবিনে ফেলতে ইচ্ছে করে না। টানটান কাগজে ভাঙা কলমে পাণ্ডুলিপি রচিত হচ্ছে।

শাহানা ইয়াসমিন :
শিক্ষক, ওমরগণি এমইএস কলেজ