রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

কেন নোবেল ফিরিয়ে দিচ্ছেন বব ডিলান?

| প্রকাশিতঃ ২০ অক্টোবর ২০১৬ | ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

bob-dylanরিফাত মাহমুদ অরন্য: ২০১৬ সালে সাহিত্যে ১১৩তম নোবেল বিজয়ী হিসেবে রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যানের নাম ঘোষণা করা হয়, সংগীত বিশ্বে ‍যিনি বব ডিলান নামে পরিচিত৷ সমগ্র বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করা এই মার্কিন গায়ক ও গীতিকার সংগীত শিল্পী হিসেবে প্রথম নোবেল বিজয়ী৷ রকের দুনিয়ায় বিদ্রোহী সম্রাট, প্রতিবাদী আর বেপরোয়া স্বভাবের ডিলান বরাবরের ন্যায় একটু বেশিই খামখেয়ালি৷ এত বড় প্রাপ্তির পরও ডিলানের নির্বাক অভিব্যাক্তিই তারই উদাহরন৷

ডিলানের উদ্দীপ্ত কিন্তু সুরেলা কন্ঠ যা তিন প্রজন্মকে যুগিয়েছিল যুদ্ধবিরোধী চেতনা সেই সংগ্রামী মানুষটি অবশেষে নোবেল পুরস্কারকে প্রত্যাখান করলো৷ বুধবার রাতে দ্যা গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক তথ্যমতে তিনি এ পুরষ্কার প্রত্যাখান করেছেন ৷ তবে ঠিক কি কারণে তিনি এ পুরস্কার প্রাত্যাখ্যান করেছেন তা এখনও পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি৷ আগামী শনিবার তিনি এ বিষয়ে প্রেস মিটিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানাবেন ৷

আমেরিকার সংগীত ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক মূর্চ্ছনা সৃষ্টির’ জন্য ৭৫ বছর বয়সী রক, ফোক, ফোক-রক, আরবান ফোকের কিংবদন্তি ডিলানকে নোবেল পুরস্কারের জন্য বেছে নেয় রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি ৷ পুরষ্কার ঘোষনার পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও এ ব্যপারে সম্পূর্ন নির্বাক ছিলেন ডিলান ৷ এমনকি রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে আর যোগাযোগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো ৷

গত শুক্রবার কোচেল্লায় ডেজার্ট ট্রিপ ফেস্টিভালে অংশ নেন ডিলান ৷ নোবেল প্রপ্তির ব্যপারে সেদিনও তিনি কোন মন্তব্য করেননি ৷ ওই অনুষ্ঠানে দ্য রোলিং স্টোন ব্যান্ডের সদস্য কিউথ রিচার্ড বলেন, “এই পুরস্কারের জন্য ডিলান ছাড়া অন্য কাউকে ভালো যোগ্য মনে করি না ৷ কিন্তু ডিলান এটি স্বীকার করতে আবারো ব্যর্থ হয়েছে ৷”

নোবেল প্রাপ্তি বিষয়ে ডিলানের এই উদাসীনতায় বিশ্ব জুড়ে গুন্জন উঠেছিলো রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রদান করা এই প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কারটি আদতে ডিলানের মতো নিঃস্বার্থ বিপ্লবী আর সংগ্রামী ব্যক্তির সাথে খাটে না ৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতায় হাতে গিটার নিয়ে যে ডিলান ছিলেন রাজপথের মিছিলে, তিনি সরব ছিলেন বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনে ৷ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে নিউইয়র্কে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ জর্জ হ্যারিসন, রবিশংকরের সঙ্গে তিনিও কাঁপিয়েছিলেন মঞ্চ ৷ সেদিনের অনুষ্ঠানের এক বড় তারকা ছিলেন বব ডিলান ৷ বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার বিপক্ষে, মানবতার পক্ষে সংগীত দিয়ে সংগ্রাম করার এক জলন্ত দৃস্টান্ত বব ডিলান ৷

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখানের ঘটনা এটা প্রথম নয় ৷ ১৯৫৮ সালেও মনোনীত বিখ্যাত রুশ কবি, সাহিত্যিক এবং অনুবাদক বরিস লেয়োনিদভিচ পাস্তেরনায়েক নোবেল প্রত্যাখান করেন, আবার নিজে থেকেই নোবেল অস্বীকারের পক্ষে যুক্তি এবং মানসিক দৃড়তা দেখিয়েছিলেন ১৯৬৪ সালে মনোনীত ফরাসি অস্তিত্ববাদী দার্শনিক, নাট্যকার, সাহিত্যিক এবং সমালোচক জ্যাঁ পল সার্ত্রে ৷ ইতিহাস পাতায় আবার নতুনভাবে লেখা হবে এক ব্যতিক্রমী সাহিত্যিকের আরেকটি নোবেল প্রত্যাখ্যানের ঘটনা ৷