মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত আটজন নারী যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। এ ধরনের হয়রানির অভিযোগ উত্থাপনকারীর তালিকা কেবলই দীর্ঘ হচ্ছে। কারণ এবার আরও এক নারী তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছেন। সূত্র : ইন্টারনেট।
এবার তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন ক্যাথি হেলার নামে ৬৩ বছর বয়সী এক নারী। তিনি তার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্তার ঘটনা এতদিন পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। নির্বাচনের আগে এবার তিনি সবার সামনে তা তুলে ধরলেন। ক্যাথি হেলার গণমাধ্যকে বলেছেন, প্রায় ২০ বছর আগে যখন ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয়, তখন ট্রাম্পের দ্বারা তিনি যৌন হয়রানির শিকার হন।
হেলার জানান, ট্রাম্প প্রথম দর্শনেই তাকে কাছে টেনে নেন। জোর করে চুমু দিতে চান। আর এ আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় তার ওপর ট্রাম্প খেপে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প তাকে জোর করে চুমু খেয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন ক্রিস্টিন অ্যান্ডারসন, সামার জেরভস, সাবেক মিস ইউনিভার্স অ্যালিসিয়া মাচাদো, মিস অ্যারিজোনা টাশা ডিক্সন, জেসিকা লিডসসহ বেশ কয়েকজন নারী।
দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের আগে বিতর্ক আর সমালোচনা যেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের পিছু ছাড়ছে না। সম্প্রতি ২০০৫ সালের একটি ভিডিওচিত্র বের হয় যেখানে ট্রাম্প নারীদের নিয়ে চরম অবমাননাকর কথা বলেছেন। সেখান থেকে বিতর্কের শুরু। তারপর একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। আর এ যৌন হয়রানির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন বেশ বেকায়দায় রয়েছেন। যদিও ট্রাম্প সব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। এ প্রসঙ্গে রবিবার এক টুইটবার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব নারী অভিযোগ তুলেছেন তাদের সঙ্গে আমার কোনো কিছু হয়নি। নির্বাচনে আমাকে হারানোর জন্যই এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে। অথচ আমার চেয়ে নারীদের বেশি সম্মান কেউ করে না।’ উল্লেখ্য, আগামীকার (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার, সকাল ৭টা) ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটন সর্বশেষ বিতর্কে মিলিত হবেন।
জরিপে এগিয়ে হিলারি : নতুন দুই জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেছেন ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। এনবিসি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক জরিপে ট্রাম্পকে ১১ পয়েন্ট পেছনে ফেলেছেন তিনি। অন্যদিকে এবিসি/ওয়াশিংটন পোস্ট জরিপে ট্রাম্পকে ৪ পয়েন্টে পেছনে ফেলেছেন হিলারি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। রবিবার এনবিসি নিউজ/ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের জরিপ প্রকাশ করে। এতে হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৪৮ ভাগ আর ট্রাম্পকে ৩৭ ভাগ ভোটার। লিবারটারিয়ান দলের প্রার্থী গ্যারি জনসনকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৭ ভাগ ভোটার। গ্রিন পার্টির জিল স্টেইনকে সমর্থন করেছেন শতকরা ২ ভাগ ভোটার।
এ জরিপে দেখা যায়, ‘এক্সেস হলিউড’ টেপ ফাঁস হওয়ার কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মূল্য দিতে হবে। ওই টেপে তিনি নারীদের অবমাননা করে কথা বলেছেন। এর পরপরই কমপক্ষে নয়জন নারী তাদের মুখ খুলেছেন। তারা বলেছেন, তাদের সম্মতি ছাড়াই ট্রাম্প তাদের জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছেন। তবে নারী ভোটারদের মধ্যে হিলারির সমর্থন অনেক বেশি। ট্রাম্প থেকে হিলারিকে শতকরা ২০ ভাগ বেশি নারী ভোটার সমর্থন করেছেন। তবে পুরুষ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পকে শতকরা ৩ ভাগ বেশি ভোটার সমর্থন করেছেন। শতকরা ৩২ ভাগ ভোটার মনে করেন, নারীদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করা ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
এসব ভোটার মনে করেন, তার উচিত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো। তবে নির্বাচন থেকে তার সরে দাঁড়ানো উচিত নয় বলে মনে করেন শতকরা ৫৩ ভাগ ভোটার। এনবিসি জরিপে হিলারির ভালো সমর্থন পাওয়ার জন্য তাকে তার প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক সহায়তা করেছে। শতকরা ৩১ ভাগ ভোটার বলেছেন, দুটি বিতর্কের পারফরম্যান্স বিবেচনা করে তারা হিলারিকে বেছে নেওয়ার পক্ষে। অন্যদিকে এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে বেছে নেওয়ার পক্ষে শতকরা ১৪ ভাগ ভোটার। জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্পের কারণে ভোটাররা রিপাবলিকানদের ওপর অসন্তুষ্ট। শতকরা ৪৬ ভাগ ভোটার বলেছেন, তারা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্রেটদের হাতে থাকুক এমনটা দেখতে চান। শতকরা ৪৪ ভাগ ভোটার কংগ্রেস রিপাবলিকানদের দখলে দেখতে চান।
অন্যদিকে এবিসির জরিপে হিলারিকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৪৭ ভাগ ভোটার। ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৪৩ ভাগ ভোটার। এ ক্ষেত্রে জনসনকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৫ আর স্টেইনকে ২ ভাগ ভোটার। উল্লেখ্য, প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কের ঠিক আগে এবিসি/ওয়াশিংটন পোস্ট যে জরিপ পরিচালনা করে তা থেকে এ ফলে সামান্য পরিবর্তন আছে। ট্রাম্পের বিতর্কিত টেপ প্রকাশ হওয়ার ঠিক আগে হিলারি শতকরা ৪৬ ভাগ সমর্থন পেয়েছিলেন। ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৪ ভাগ।
এদিকে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার মনে করছেন, ট্রাম্পের টেপ প্রকাশ হওয়ায় তাদের ভোটের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। শতকরা ৩৮ ভাগ ভোটার মনে করেন, ট্রাম্প টেপের বিষয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করায় তার আন্তরিকতা প্রকাশ পেয়েছে। শতকরা ৬৮ ভাগ মানুষ মনে করেন, ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে নারীদের পিছু নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, এনবিসি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের জরিপে অংশ নিয়েছেন মোট ৯০৫ জন ভোটার। এ জরিপ পরিচালনা করা হয় ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। অন্যদিকে এবিসি/ওয়াশিংটন পোস্ট জরিপে অংশ নিয়েছেন মোট ৭৪০ জন ভোটার। এটিও একই সময়ে সম্পন্ন হয়েছে।