দরজা খুললে ইফতি বলে- ভাই দুনিয়া কয়দিনের, কয়দিন বাঁচবো? কোন উদ্ভট কাজ করার আগে এটা ছিল তার ডায়লগ। বলি -আসল কথাটা বল…। বলে -চলেন নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটি ক্যম্পাসটা ঘুরে আসি। তখন আমি ব্যপারটা বুঝে যাই। ইফতি হুমায়ূন আহমেদের কঠিন ভক্ত। আমিও তাঁর ভক্ত কিন্তু ইফতি হচ্ছে ডেডিকেটেড।
তার দাবি সে আমেরিকায় পড়তে এসেছে মূলত হুমায়ূনের ‘হোটেল গ্রেভার ইন’ বইটা পড়ে। সেখানে একটা ঘটনা ছিল নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে একবার হোমকামিং উৎসবে এক স্প্যানিশ আমেরিকান মেয়ে কুইন নির্বাচিত হয়। হুমায়ূনের ভাষায় যার রূপ ফেটে পড়ছে, কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকলে বুকে হাহাকার জমে– মুনীগণ ধ্যান ভাঙি দেয় পদে তপস্যার ফল…। তো এই মেয়ে বিপন্ন নীল তিমিদের বাঁচাতে ফান্ড রেইজিং-এর জন্য কিসিং বুথের আয়োজন করে, বুথের সামনে লম্বা লাইন…. ইফতি সারাদিন স্বপ্নে সেই লাইনে লাইনে কাটিয়ে দেয়।
কিন্তু মিনেসোটায় আমাদের ইউনিভার্সিটিতে এসে দেখে এরকম কোনো ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটে না। এটা কেবল একজন লেখকের কল্পনা মাত্র। তারপরও ইফতির, ধারণা হুমায়ূন যেখানে পড়াশোনা করেছেন সেই নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে গেলে তার প্রিয় লেখকের সান্নিধ্য সে পাবে। নর্থ ডাকোটা ছিল মিনেসোটার কাছেই আমাদের প্রতিবেশি রাজ্য। ইফতি সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। সেখানকার বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের সাথে যোগাযোগ করেছে, তাদের একটা অনুষ্ঠান আছে। আজ রাতে রওনা দিলে কাল সারাদিন থাকা যাবে।
মাঝরাতের ঘুম আমার কাছে তখন আকর্ষণীয়। ইফতিকে বলি- সরি ডুড, আমাকে হেলিকপ্টার দিয়ে টেনে নিলেও আমি যাবো না। স্পিডিং করার জন্য অনেক টিকিট খেয়েছে ইফতি, গাড়ি চালাতে পারবে না তিন মাস। আমাকে বলে- বিপুল ভাই মুনীগণ ধ্যান ভাঙি….
বলি- নো ওয়ে…আমার ধ্যান অনেক আগেই ভেঙে গেছে। তাছাড়া সাধারণ লজিক বলছে কিসিং বুথের ওই মেয়েও এখন দাদী হয়ে গেছে…
পরের দৃশ্য-
মিনেসোটার আই-৯৪ রোড ধরে দুই বাঙালি যুবক মধ্যরাতে রওনা হয়ছে তাদের প্রিয় লেখকের বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তিনি লেখাপড়া করেছিলেন। কেউ হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবে না, সেদিন রাতে ডাকোটা যাবার পথে বৃষ্টি পড়ছিল, একসময় চাঁদও উঠেছিল জ্যোৎস্নাও ছিল…সে সব দিনগুলোতে আমরা অনেক সহজসরল ছিলাম।
হয়তো বৃষ্টি, চাঁদ, জ্যোৎস্না কিছুই ছিল না এসবই ছিল আমাদের হ্যালুসিনেশন!