পুলিশের ‘সৌজন্যতা’


মো. সাজ্জাদ হোসেন : গতকাল (বুধবার) সকালে নগরীর আমিন সেন্টারের বিপরীত দিক দিয়ে আমি হেঁটে যাচ্ছি সার্কিট হাউজের উদ্দেশ্যে একটি সরকারি মিটিং-এ। এসময় আচমকা আমার পাশে হাজির হলেন সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত এসপি প্রিয় শরীফ ভাই। উনি জানতে চাইলেন আমি কোথায় যাবো। বললাম, সার্কিট হাউজ। সাথে সাথে গাড়িতে তুলে আমাকে সার্কিট হাউজ নামিয়ে দিলেন। আমার মতো একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মীকে তাঁর মূল্যায়নে আমি আশ্চর্য এবং অভিভূত হয়েছি। এই সৌজন্যতা তিনি না দেখালে কী হতো!

তাঁর সাথে বেশি দেখা হতো চট্টগ্রাম র‌্যাব অফিসে। তখন উনি র‌্যাবের এএসপি (মিডিয়া) পদে কর্মরত ছিলেন। এরপর কত অফিসার এলেন, গেলেন- কে কার খোঁজ রাখে। কিন্তু শরীফ ভাইয়ের এই মহানুভবতায় আমি আশ্চর্য হয়েছি। উনি একদিন ভবিষ্যতে আরো বড় অফিসার হবেন। আমার বিশ্বাস, উনি তখনো আজকের মত আমার সাথে বা পরিচিত অন্যজনের সাথে দেখা হলে এভাবে কুশলাদি বিনিময় করবেন।

আমি এরকম আরো একজন অফিসার দেখেছি বর্তমানে র‌্যাবে কর্মরত চৌধুরী মনজুরুল কবির (অতিরিক্ত ডিআইজি)।

২০০৪ সালে ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ঘটনা ঘটে। সে সময় পুলিশের জন্য বিশাল কর্মব্যস্ততার দিন। ওইদিনই আমার ছোট বোনের বিয়ে অনুষ্ঠান গ্রামের বাড়িতে। উনি তখন চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত। ফটিকছড়ি রাউজানে সন্ত্রাস নির্মূলে যার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। সে সুবাদে উনার সাথে আমার পরিচয়। উনি সমস্ত কাজ সেরে প্রায় সন্ধ্যায় আমার গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়িতে হাজির হলেন, সেদিন আমার মনটা এত বড় হয়েছে যা আমি কখনো ভুলবো না।

আরেকজন কর্মকর্তার কথা না বললে ভুল হবে, উনি হলেন বর্তমান রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার। ২০১৫ সালে তিনি চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার ছিলেন। উনি সীতাকুণ্ডের একজন জনপ্রতিনিধির কাছেই শুনলেন আমার স্ত্রী ক্যান্সার-আক্রান্ত। নিজেই ফোন করে বললেন, আমি যেন অফিসে একটু দেখা করি। ব্যস্ততার কারণে আমি তাঁর অফিসে যেতে পারিনি। সপ্তাহ খানেক পর জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তাঁর সাথে দেখা। আমাকে ইশারা দিয়ে অফিসে যেতে বলেন। আমি অফিসে যাই এবং দুর্গাপূজার পরিস্থিতি নিয়ে একটি বক্তব্য নিই। আসার সময় উনি আমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য মোটা অংকের টাকা ধরিয়ে দিলেন।

আমার আশা, আমাদের সরকারী কর্মকর্তারা জনগণের প্রতি দরদী হবেন এবং সাধারণ মানুষকে ভালোবাসবেন এবং তাদের জন্য কাজ করে যাবেন।

লেখক: চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, বাংলাদেশ টেলিভিশন।