মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

রেলের ৮ম শ্রেণী পাশ কর্মচারীর পকেটেই ৯ কোটি টাকা!

প্রকাশিতঃ ২৫ জুন ২০১৯ | ৫:৫৬ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : ২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৮ম শ্রেণী পাস সনদ দিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের চিফ পার্সোনাল অফিসে যোগদান করেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মিশ্রিপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে অলি উল্লাহ ওরফে সুমন (৩৫)। আট হাজার টাকা বেতনে যোগ দিয়ে বর্তমানে বেতন পান সাকূল্যে ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু তার তার চলাফেরা, বেশভুষা রাজকীয়।

অনুসন্ধানে অলি উল্লাহ সুমনের দুটি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৯ কোটি কোটি টাকা লেনদেন দেখে স্বয়ং বিস্মিত দুদক কর্মকর্তারাও। তিনি সোনালী ব্যাংক রেলওয়ে বিল্ডিং শাখার হিসাবে ২০১০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত লেনদেন করেছেন ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ৭ হাজার ৪৮৭ টাকা এবং ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, স্টেশন শাখার হিসাবে ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত লেনদেন করেন ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৪৮১ টাকা ৫০ পয়সা।

জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত এই অস্বাভাবিক লেনদেনের দায়ে অলি উল্লাহ ওরফে সুমনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর সিএমপির কোতোয়ালী থানায় দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারি পরিচালক শরীফ উদ্দিন মামলা দায়ের করেন এবং তিনি নিজেই মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন।

দুদকের তদন্তে দেখা যায়, চাকরি দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অংকে টঙ্গী, কিশোরগঞ্জ, পাহাড়তলী, ধামরাই, ঈশ্বরদী, গাইবান্ধা থেকে তার দুটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে উল্লেখিত টাকা গ্রহণ করেন অলি উল্লাহ সুমন। এছাড়া নগদেও বিভিন্ন লোকজন থেকে চাকরি দেয়ার প্রলোভনে টাকা গ্রহণ করেছেন বলে তথ্য পায় দুদক। ময়মনসিংহ পৌরসভা এলাকায় নিজের নামে ২৪ লাখ টাকায় ৫ শতাংশ জমি কেনা ছাড়াও নামে-বেনামে, স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদের হদিস পেয়েছে দুদক।

এরপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে নগরের আগ্রাবাদ বাদামতল থেকে অলি উল্লাহ সুমনকে গ্রেফতার করে দুদকের একটি টিম। টিমে নেতৃত্ব দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। এদিকে, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফিউদ্দিনের আদালতে প্রেরণের পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

দুদক, চট্টগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ লাভলু একুশে পত্রিকাকে বলেন, গ্রেফতারের পর পরই তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আসামির পক্ষে কেউ জামিনের আবেদন করেননি।

দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারি পরিচালক শরীফ উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারি দাবি পরিদর্শক মো. অলি উল্লাহ ওরফে সুমনকে গ্রেফতার করেছি। প্রায় ৯ কোটি টাকা লেনদেন হওয়া তার দুটি হিসাবে এখন কোনো টাকা নেই। টাকাগুলো উত্তোলন করে তিনি কোথায়, কোন কাজে লাগিয়েছেন তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। একই সাথে চাকরির প্রলোভনে মানুষের কাছ থেকে অর্থগ্রহণের কাজে তার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কিনা তাও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

একুশে/এসসি/এটি