আগামী ৮ নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দারুণভাবে আবর্তিত হচ্ছেন। তবে আনন্দ-উল্লাসে নয়, চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সর্বস্তরে। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যকার দ্বিতীয় বিতর্কের পর অনেক প্রবাসী নিজেদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। অর্থাৎ নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে আরও জোরালোভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। এ নির্বাচনকে তারাও নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন। বিশেষ করে, কলেজ/ভার্সিটিতে অধ্যয়নরত অথবা চাকরিরত মুসলিম প্রজন্ম আসন্ন নির্বাচনকে ৮ বছর আগের চেয়েও বেশী তাৎপর্যপূর্ণ বলে ভাবছেন।
সোমবার দিনভর প্রবাসীদের এক জরিপে জানা যায় তাদের মধ্যেকার উদ্বেগের তথ্য। ৯০ শতাংশের আশংকা, হিলারিকে জয়ী করতে না পারলে কারো পক্ষেই আর স্বপ্নের আমেরিকায় নিরাপদে বসবাস করা সম্ভব হবে না। তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সকল নাগরিকের সম-অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গিকার করলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত রিপাবলিকানদের কাছে তা দলিত হতে বাধ্য।
এনআরবি নিউজের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ১০% দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভীতকে নড়বড়ে করার একক অধিকার বা ক্ষমতা থাকবে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তাই অযথা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার প্রয়োজন নেই। এ শ্রেণির প্রবাসীরা অবশ্য উল্লেখ করেছেন যে, কংগ্রেসের উভয় কক্ষ যদি ডেমোক্র্যাটদের দখলে এসে যায়, তাহলে ট্রাম্পের পক্ষে ‘যা খুশি তাই করা’ কখনোই সম্ভব হবে না।
৬৫ শতাংশের ধারণা, আসন্ন নির্বাচনে সিনেট ও হাউজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে রিপাবলিকানরা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বারাক ওবামাকেই শুধু বিজয় দেয়নি, একইসাথে কংগ্রেসের উভয় কক্ষই ডেমক্র্যাটদের দখলে এসেছিল। এবারও একজন নারীকে বিশাল বিজয় দিয়ে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণও ডেমোক্র্যাটরা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবে।
‘বিগত কয়েক দশকের অভিজ্ঞতায় সিক্ত হিলারি ক্লিনটনের সাথে ‘মিথ্যুক, চাপাবাজ আর টকেটিভ’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোন তুলনাই হওয়া উচিত নয়’-মন্তব্য ৬০ শতাংশ বাংলাদেশি-আমেরিকানের। তারা জানান, ‘নিজের স্বার্থে বরাবরই কঠোর পরিশ্রমী শ্রমিকদের ঠকাতে অভ্যস্ত এবং এ যাবত কমপক্ষে ৬ বার নিজেকে দেউলে ঘোষণাকারী ব্যক্তি (ট্রাম্প) কীভাবে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন, সেটিও ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। সে তাগিদ থেকেই আমেরিকায় নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে ডেমোক্র্যাট শিবিরের হয়ে কাজ করার পাশাপাশি হিলারির নির্বাচনী তহবিলে সাধ্যমত সহায়তা করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে অবতীর্ণ হবার পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসী, নারী শ্রমিক, মুসলমানদের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য/বক্তব্য দিচ্ছেন। মুসলমানদেরকে আমেরিকায় নিষিদ্ধ করার কথা বারবার বলছেন। নিরাপদ জীবন-যাপনের অভিপ্রায়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর যারা অভিবাসনের মর্যাদা পাননি, এমন সোয়া কোটি বিদেশীকে ঢালাওভাবে বহিষ্কারের কথাও বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব কারণে, অভিবাসী সমাজের মত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ভেতরে ভেতরে টেনশনে রয়েছেন। যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণের পর এতদিন ভোটার হিসেকে তালিকাভুক্ত হননি, তারাও এখন তালিকাভুক্ত হচ্ছেন। ‘মিলিয়ন মুসলমান ভোটার তালিকাভুক্তির’ অভিযানে নেমেছে মসজিদগুলোর কর্মকর্তারা। জুমার নামাজের পর মসজিদের বাইরে টেবিল বসিয়ে ভোটার তালিকাভুক্তির ফরম পূরণ করা হচ্ছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, ‘ইউএস কাউন্সিল অব মুসলিম অর্গানাইজেশন্স’ কর্তৃক এ অভিযান চলছে এবং ৫ লক্ষাধিক মুসলমান ইতোমধ্যেই তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে এই সংস্থার বোর্ড মেম্বার ওসমা আবু ইরশাদ বলেন, ‘আমরা মুসলিম-আমেরিকানদের বলতে চাই যে, আপনারা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের অধিকার বর্জন করতে চান, তাহলে কেউই তা ফিরিয়ে দিতে পারবে না। ভার্জিনিয়া এবং ফ্লোরিডার মত রাজ্যে একটি ভোটেরও মূল্য অপরিসীম। অথচ এ দুটি রাজ্যেই বিপুলসংখ্যক মুসলমান বহু আগেই সিটিজেনশিপ গ্রহণ করেও ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হননি।’
নভেম্বরের নির্বাচনের আগে তারাও ভোটার হয়ে ভোট বিপ্লবে নিজেদের অবস্থানকে জোরালোভাবে উপস্থাপনে সক্ষম হবেন বলে উল্লেখ করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের অন্যতম বৃহৎ ‘বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার জামে মসজিদ’র প্রেসিডেন্ট আলহাজ আবুল হাশেম। তিনি বলেন, ‘আগের যে কোন নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। একইসাথে দুটি ইতিহাস রচিত হবে। একটি হচ্ছে, একজন নারীকে প্রেসিডেন্ট বানানো। আরেকটি হচ্ছে, মুসলিম-আমেরিকানদের জোরালো অবস্থানের স্পষ্ট জানান দেয়া।’