করিমনের সাধ ǁ শাহানা ইয়াসমিন

কিশোরী মেয়েটি, দিকহারা ডানপিটে।

দুই বেনীতে দূরন্ত করিমন, ছুটে বেড়ায়, যখন তখন।

সবার বকুনিতে কিছুই যেন আসে যায় না।

ঠোঁটের কোণে লাস্যতা,

রাজহাসের মাঝে জ্বলজ্বলে ধবল এক বক।

দু’পাশে ফসলী জমি, কাশবন, নীল পাহাড়

এলোমেলো বাতাস… সবাই কানে কানে বলে দেয়,

কিশোরীকে তার বেড়ে ওঠার কথা।

তবুও তাচ্ছিল্যের হাসিতে ডানা ঝাপটায় সে।

ভরদুপুরে সবুজ ডালের পাখি আঁতকে ওঠে,

কিশোরী করিমনের লতানো বিকশিত ভাঁজ, অনাগত যৌবনের প্রকম্পনে।

হায়রে অবোধ, বোঝে না, শিশুমন নিয়ে তবুও এপাড়া ওপাড়া করে।

চুলে ভাল করে সুগন্ধী তেল মেখে, চকচকে ফিতায়,

দুই বেনীতে বাহারী গিটঠু দিয়ে,

ওপাড়ার মকবুল চাচার স্টুডিও থেকে অনেক আবদারে ছবি তুলে রেখেছে।

ছোট্ট কিশোরী হতে চায় এমন কেউ যাকে দেখবার জন্যে

ঘরবাড়ি সয়লাব করে মানুষ আসবে।

বন্দর থেকে আসা সংবাদপত্রে তার ছবিটি থাকবে।

করিমনের চুপটি মনের সুপ্ত বাসনাটি,

অন্তরালে কেবল তার পোষা ৫টি মুরগী, ৬টি হাঁস

আর দু’টো তিত পাখির কাছেই ফিসফিসিয়ে বলে।

কত শতবার বইয়ের ফাঁকে লুকিয়ে রাখা

ছবিটি বের করে ওদের দেখিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।

অতঃপর আবার বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে যায় ছবিটি।

একদিন আকাশ কেন যেন থমথমে,

সূর্যটা ঝিমিয়ে পড়েছিল, নিথর… যেন একরাশ চিন্তায় ভার।

সবকিছুকে অগ্রাহ্য করে করিমন খুঁজে বেড়াতে থাকে।

একমুঠো রোদ্দুর, দমকা আনন্দ, রাশি রাশি সুখ।

বাতাসের ধূলি শত চেষ্টায়ও করিমনের পায়ে বেড়ি পরাতে পারে না।

ছুটে চলেছে কিশোরী।

কয়েকটি শ্বাপদ হিংস্র থাবা রাহুগ্রাসের জাল বিছায়।

লেপ্টে দেয় পবিত্রতার মাঝে অপবিত্রতা।

লালসার উলংগ দামামা বাজায় নরম চামড়ায়।

অতঃপর বন্দর থেকে আসা পত্রিকায় বইয়ে ভাঁজে রাখা

ছবিটি বড় বড় হেডলাইনের শোভা বাড়ায়।

সূর্য ডুব দেয় লজ্জায়, অবনত ভোরে করিমন রাশি রাশি মানুষের

উৎসুক দৃষ্টির উপাদান হয়।

কিন্তু করিমনের রক্তাক্ত ঠোঁট নড়ে না।

কেবল শব্দহীন চোখের কোন বেয়ে নোনা জলের ধারা বেয়ে পড়ে।

লেখক পরিচিতি: প্রভাষক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ওমর গণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম।