নুসরাতকে হত্যার কথা স্বীকার করে সিরাজ উদ দৌলার জবানবন্দি


ফেনী: ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা। রোববার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।

জবানবন্দি গ্রহণ শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল সাংবাদিকদের এতথ্য নিশ্চিতি করেন।

তিনি জানান, সিরাজ উদ দৌলা জেলখানা থেকে নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামিমকে নুসরাতের মায়ের করা মামলা তুলে নিতে দিক নির্দেশনা দেন। সে নির্দেশনা অনুযায়ী নুর উদ্দিন ও শমিমসহ অন্য আসামিরা মামলা তুলে নিতে নুসরাতকে চাপ দিতে বলেন। নুসরাত রাজি না হলে তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে নির্দেশ দেন সিরাজ উদ দৌলা।

আলোচিত এ মামলায় আদালতে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে এ পর্যন্ত ৯ আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- মামলার অন্যতম আসামি নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, আবদুর রহিম শরিফ, হাফেজ আবদুল কাদের, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন ও জোবায়ের আহমেদ।

নুসরাতকে হত্যার মামলায় এ পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠি আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, যোবায়ের হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম শরিফ, হাফেজ আবদুল কাদের, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, ইফতেখার হোসেন রানা ও এমরান হোসেন মামুন। মামলায় এজহারভুক্ত আট জনের মধ্যে সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন নুসরাত। এ ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। মামলার পর সিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকেই মামলা তুলে নিতে আসামিপক্ষ নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে। নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন নুসরাত।

এরপর ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাতকে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৮০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঁচ দিন লড়ার পর মারা যান নুসরাত।

নুসরাত হত্যার ঘটনায় সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। গত ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় করা ওই মামলায় অজ্ঞাত আরো চার থেকে পাঁচজনকেকে আসামি করা হয়।