শুধু বিচারক বাড়ালেই মামলাজট কমবে না : প্রধান বিচারপতি

ঢাকা : মামলাজট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বলেছেন, এভাবে চলতে পারে না।

রোববার (২৮ এপ্রিল) আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে একটি মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির বলেন, শুধু বিচারক বাড়ালেই মামলাজট কমবে না। সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে এত মামলা যে ফাইল রাখার মতো পর্যন্ত জায়গা নেই। এক কথায় ক্রিটিক্যাল অবস্থা, এভাবে চলতে পারে না।

মামলাটির পক্ষে বিপক্ষে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, গতকাল (২৭ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে জিআইজেডের উপস্থাপন করা সুপ্রিম কোর্টের মামলার নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেখে আমি প্রায় বিব্রত। এত মামলা! এভাবে চলতে পারে না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মামলাজট নিরসন বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সকল বিচারপতিদের নিয়ে বসব। সবাইকে বলব যে, এ অবস্থায় কী করবেন আপনারা দেখেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে প্রায় ৫ লাখ ২৫ হাজার মামলা বিচারাধীন। যা ১৯৮২ সালে ছিল মাত্র ২৫ হাজার। আর আগাম জামিনের আবেদনগুলো যদি নিষ্পত্তি না করা হতো তাহলে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মামলার পরিমাণ ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেত।

সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটি ও জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন বাংলাদেশ (জিআইজেড) শনিবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘মামলাজট নিরসন ও বিচার প্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি, বিচার বিভাগের কাঠামোগত উন্নয়ন সংক্রান্ত’ বিষয়ে একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মামলাজট নিয়ে বক্তব্য দেন।

শনিবার নীরিক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় বিচারক কম থাকলেও শুধু এর সমাধানেই মামলাজট কমবে না।

মামলাজট নিরসন ও বিচার প্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ উন্নত অনেক দেশে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে অধিকাংশ মামলা নিষ্পত্তির উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশেও সেই প্রক্রিয়া অনসুরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি বলেন, বিচারক সঙ্কট, অবকাঠামোগত অপ্রতুলতাকে মামলাজটের অন্যতম কারণ মনে হলেও শুধুমাত্র বিচারক বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে এ অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, এর থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সঠিক মামলা ব্যবস্থাপনা, যা নিশ্চিত করতে আমাদের দুটি ধাপে কাজ করতে হবে। প্রথমত, প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় মামলা দায়েরের হার কমানো এবং দ্বিতীয়ত, মামলা দায়েরের পর প্রতিটি পর্যায়ে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রুত সময়ে মামলা নিষ্পত্তি করা।

বিচারাধীন মামলার তুলনায় বিচারকের অপর্যাপ্ততার চিত্র তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি ওই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বাংলাদেশে প্রতি দশ লাখ লোককে মাত্র ১০ জন বিচারক বিচারিক সেবা দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ১০৭, কানাডায় ৭৫, ব্রিটেনে ৫১, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১, ভারতে ১৮ জন।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটা পিছিয়ে সেই চিত্রও শনিবারের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির একটি নিরীক্ষা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মামলা পারস্পরিক বোঝাপড়া বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। এবং সেখানে বড়জোর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মামলা নিষ্পত্তি হয় আদালতে। আর আমাদের দেশে চিত্র ঠিক এর বিপরীত। এদেশে কেবল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়ে থাকে বোঝাপড়া বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে। আর ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয় আদালতে।

একুশে/ডেস্ক/এসসি