চট্টগ্রাম : বিচারাধীন কোনো মামলা বা বিচার কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিশুর নামপরিচয় প্রকাশ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ; আর সেই কাজটিই করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে।
‘ইউএনও রাঙ্গুনিয়া’ নামে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসিয়াল আইডি থেকে শনিবার দুপুরে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এতে ১৪ বছরের শিশুরটির নাম-ঠিকানা, কোন শ্রেণীতে পড়ে- এসব উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি স্ট্যাটাসটিতে দুটি ছবিও যুক্ত করে দেয়া হয়; যাতে বাল্যবিবাহের শিকার ভুক্তভোগী শিশুটিকে দেখা যাচ্ছে।
এতে লেখা হয়েছে, ‘বালিকা, তোমার সাহসিকতায় মুগ্ধ! …., ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী, বয়স ১৪ বছর,….। সকাল ১০ টায় প্রধান শিক্ষক ফোন করে জানালেন যে স্যার, ছাত্রী আমার কাছে এসে কান্না করছে মা-বাবা তাকে বিয়ে দিচ্ছে। আগামীকাল তাকে ফেনী নিয়ে যাবে। বিদ্যালয় হতে মেয়ে, প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। ফলাফল : মোচলেকা নিয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ।’
শনিবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উক্ত স্ট্যাটাসে ৩৮৬ জন রিয়েক্ট দিয়েছেন, ৭৫ জন কমেন্ট করেছেন। উক্ত কাজের জন্য সবাই ইউএনওকে ফেইসবুকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত শিশু আইন, ২০১৩ এর ৮১ ধারার ১ উপ-ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিচারাধীন কোনো মামলা বা বিচার কার্যক্রম সম্পর্কে প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো শিশুর স্বার্থের পরিপন্থী এমন কোন প্রতিবেদন, ছবি বা তথ্য প্রকাশ করা যাইবে না, যাহার দ্বারা শিশুটিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শনাক্ত করা যায়।
একই আইনের ২ উপ-ধারায় উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, মেয়েটা তো ভুক্তভোগী নয়। তাকে সাজাও দেয়া হয়নি। সে অপরাধীও না। তার সাহসিকতাকে এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে মেয়েটি যদি অপরাধী হতো, তাহলে তার ছবি প্রকাশ ঠিক হতো না। ক্লাস সিক্সের একটা বাচ্চা মেয়ে বিষয়টা বুঝতে পেরে একটা সাহসী কাজ করেছে, শিক্ষকের মাধ্যমে প্রতিকার চেয়েছে। আগামীকাল ফেনীতে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আমি বিয়ে বন্ধের ব্যবস্থা নিয়েছি।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য ইউএনওকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু তিনি আত্মপ্রচারের মোহে মোহিত হয়ে আইনের গুরুতর ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন, দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন। আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতে তিনি আরো যত্নবান হবেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। যদি ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যারা এ ধরনের বাল্যবিবাহ বন্ধ, শিশু ভিকটিমদের বাঁচানোর কাজটি করবেন তারা দ্বিতীয়বার ভুলটি করবেন না।