ধর্ষিত তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব, দিনভর অপেক্ষার পর মামলা

প্রতীকি ছবি

পটিয়া প্রতিনিধি : পহেলা বৈশাখে কথিত প্রেমিকের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার সেই গার্মেন্টকর্মীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে ধর্ষক। সেই অনুযায়ী দিনভর অপেক্ষাও করে ধর্ষিতার পরিবার। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো সাড়া না পাওয়ায় অবশেষে নগরের বাকলিয়া থানায় মামলা করে ধর্ষিতার পরিবার।

এর আগে ধর্ষক রিপন নিজেই ধর্ষিতার বড় ভাইকে ফোন করে মামলা না করতে অনুরোধ জানিয়ে ধর্ষিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। অস্বচ্ছল পরিবারটিও সামাজিক মান-মর্যাদার ভয়ে রিপনের সেই প্রস্তাবে রাজি হয়। পাশাপাশি ধর্ষণের শিকার ১৬ বছর বয়সী সেই পোশাক শ্রমিকও রাজি আছেন রিপনকে বিয়ে করতে। ফলে ঘটনার চার দিনেও কোনো মামলা হয়নি।

ধর্ষিতার বড় ভাই একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এতো দিন শুধু আমার বোনের এ ঘটনার জন্য দায়ী রিপনের নাম পরিচয় জানলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বুধবার সকালে আমাকে সে ফোন করে ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আজ সারাদিন অপেক্ষা করার পর তার কোনো সাড়া না পাওয়ায় বাকলিয়া থানায় তিন জনকে আসামি করে মামলা করতে বাধ্য হলাম। আসামিরা হলেন- রিপন, আবদুল মান্নান ও নুর মোহাম্মদ।

এর আগে ধর্ষক রিপন বুধবার সকালে ফোনে একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমি যে অপরাধ করেছি তার জন্য মাফ চেয়েছি তাদের পরিবারের কাছে। মেয়েটির সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল, সে তো খারাপ মেয়ে না আমি সবসময় তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। সে এখন অনেকটা সুস্থ। মেডিকেল হতে রিলিজ হয়ে বাড়িতে আসলে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে তাকে বিয়ে করে আমার ঘরে নিয়ে আসব। বিষয়টি আমি এলাকার চেয়ারম্যানকেও বলেছি।

প্রসঙ্গত, পহেলা বৈশাখের আগের দিন রাতে বৈশাখী মেলায় বেড়াতে যাওয়া ও ব্যাগ কেনার কথা বলেছিলেন তার বোন। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল দশটার দিকে শান্তিরহাট এসে রিপনের সঙ্গে মিলিত হয় ধর্ষণের শিকার কিশোরী। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে তার পূর্ব পরিচিত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাইছার নামের এক কর্মচারী দিদারকে ফোন দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে বলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, তার বোন রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শুয়ে আছে। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয় সন্ধ্যায়। সেখান থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার রাত থেকে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।

পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে জানান, পটিয়ার বিসিক শিল্প নগরের আরফিন টেক্সটাইল গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী। তার সঙ্গে দুমাস আগে পরিচয় একই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক বহনকারী বাসের হেলপার পটিয়ার কচুয়াই ইউনিয়নের শেখ আহমেদের ছেলে রিপন। গাড়িতে যাতায়াতকালে তাদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে তারা পহেলা বৈশাখের দিন নগরের দিকে বেড়াতে গিয়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে। মেয়েটিকে একটি ভ্যানিটি ব্যাগও কিনে দেয় রিপন। পরে প্রচণ্ড তাপদাহ থেকে বাঁচতে বিশ্রামের কথা বলে নিকটবর্তী এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে কৌশলে ধর্ষণ করে সে।

সেখান থেকে তার দুই বন্ধুকে দিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠায় কিশোরীকে। তার ওই দুই বন্ধু সিএনজি অটোরিকশা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে দ্রুত সটকে পড়ে। খবর পেয়ে সেখান থেকে পরিবারের লোকজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। ঘটনাটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় হওয়ায় পটিয়া থানা পুলিশ আর বিষয়টি নিয়ে কাজ করেনি বলে জানান ওসি। তবে সিএমপির কোন এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে সেটিও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না ধর্ষিতার পরিবার, পুলিশ- এমনকি ধর্ষণের শিকার কিশোরীও। পরে ধর্ষণ এলাকা বাকলিয়া থানা এলাকায় চিহ্নিত হলে সেখানেই মামলা হয়।

একুশে/কেএ/এটি