সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১

হাটহাজারীতে তথ্য গোপন করে খতিয়ান, সংশোধনে গড়িমসি!

প্রকাশিতঃ ৩ এপ্রিল ২০১৯ | ৪:৩১ অপরাহ্ন


চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফটিকা এলাকায় তথ্য গোপন করে জমির ভূয়া খতিয়ান করা হয়েছে। তদন্তে পাওয়া গেছে এ তথ্যের সত্যতা। উক্ত খতিয়ানটি যথাযথ হয়নি উল্লেখ করে সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাটহাজারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর প্রতিবেদন দিয়েছেন সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মো. নুরুল আবছার। তবে প্রায় আড়াই বছরেও উক্ত খতিয়ানটি বাতিলপূর্বক সংশোধন করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উত্তরাধিকার ও ক্রয়সূত্রে ফটিকা মৌজার ৬২৮ নম্বর আরএস খতিয়ানে ১২৮৭২ দাগে ও ৩০৬৫ নম্বর বিএস খতিয়ানে ১২৭৩০ দাগে ৮০ শতক জমির মালিক হন মিন্টু লাল চৌধুরী ও যীশু কুমার চৌধুরী। উক্ত জমির বিষয়ে তাদের স্বত্ব ঘোষণা ও বিএস খতিয়ান ভুল ও অশুদ্ধ ঘোষণা নিয়ে হাটহাজারী সহকারী জজ আদালত ও চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে।

মামলা দুটি চলমান থাকা অবস্থায় সরকারী আদেশে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আপীল ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়। পরবর্তীতে খ তপশীলভুক্ত সম্পত্তি বাতিল করে সরকার গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শুদ্ধ তপসীলের আলোকে সর্বশেষ বিএস খতিয়ানে অর্পিত অবমুক্তি আদেশ রেকর্ড করে খতিয়ান সংশোধন ও নামজারীর জন্য হাটহাজারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আদালতে মামলা করেন মিন্টু লাল চৌধুরী ও যীশু কুমার চৌধুরী। মামলাটির নম্বর ৫৩/২০১৪। এরপর ফটিকা এলাকার অপু চৌধুরী আপত্তি জানালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা খারিজ করে দেন।

পরবর্তীতে অপু চৌধুরী ও তার মা তথ্য গোপন করে হাটহাজারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আদালতে মামলা করে বিএস নামজারীর ৭৬৩৮ নম্বর খতিয়ান সৃজন করেন। অন্যদিকে অপু চৌধুরী ও তার মা স্বত্ব ঘোষণা ও বিএস খতিয়ান সংশোধনের জন্য আরেকটি মামলা করলেও সেটা বর্তমানে বিচারাধীন আছে। আদালতে অপু চৌধুরীর স্বত্ব ঘোষণা ও বিএস খতিয়ান ভুল ও অশুদ্ধ ঘোষণার মামলা সম্পর্কে তথ্য গোপন করে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তর্কিত নামজারী ৭৬৩৮ সৃজন করার বিষয়টি জানতে পেরে এর বিরুদ্ধে মিছ মামলা (১৫/২০১৭) করেন মিন্টু লাল চৌধুরী ও যীশু কুমার চৌধুরী। উক্ত মিছ মামলা তদন্ত করে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুরুল আবছার প্রতিবেদন দেন; যাতে অপু চৌধুরীর বিএস নামজারীর ৭৬৩৮ নম্বর খতিয়ান সঠিক হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে অপু চৌধুরীর ক্রমাগত হুমকি-ধমকির কারণে হাটহাজারী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন যীশু কুমার চৌধুরীর মা। এ ছাড়া স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন জানিয়ে হাটহাজারীর সহকারী জজ আদালতে অপু চৌধুরীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়। মামলা নম্বর ২৫৭/১৬। তাছাড়া অপু চৌধুরীর সাথে বায়না, আমমোক্তার সৃজন, কেনা-বেচা থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর দৈনিক পূর্বকোণে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ২০১৭ সালের ১২ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান মিন্টু লাল চৌধুরী ও যীশু কুমার চৌধুরী। এ প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের আইজিপিকে একই বছরের ২৩ মার্চ চিঠি দেন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. মমতাজ উদ্দিন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মিন্টু লাল চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সালে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা নুরুল আবছার লিখিতভাবে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানিয়েছেন অপু চৌধুরীর নামজারী খতিয়ানটি সঠিক হয়নি। খতিয়ানটি সংশোধন করতে তিনি উক্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। এরপর থেকে খতিয়ানটি বাতিল করার জন্য আমরা অসংখ্যবার ভূমি অফিসে গিয়েছি। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একাধিক কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে দায়িত্বপালন করেছেন। তারা সবাই এ বিষয়ে কালক্ষেপণ করে আসছেন। অন্যদিকে এতকিছুর পরও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২০১৭ সালের ২ মার্চ কিছু ভূমিদস্যু নামে অপু চৌধুরী বায়না দলিল (নম্বর ৮১২) করেন।

আরেক ভুক্তভোগী যীশু কুমার চৌধুরী বলেন, মিথ্যা মামলা করে সুবিধা করতে পারবেন না বুঝতে পেরে ভূমি অফিসের লোকজনকে প্রভাবিত করে ও তথ্য গোপন করে জমির নামজারী খতিয়ান সৃজন করেছেন অপু চৌধুরী। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে জোরপূর্বক সম্পত্তি দখলের জন্য পাঁয়তারা করছেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইতোমধ্যে ভুয়া খতিয়ানের ভিত্তিতে জমিটি বিক্রি করে দিতে অপু চৌধুরী হাটহাজারীর একটি বড় রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বায়নাও করেছেন। উপজেলা ভূমি অফিস, তফসিল অফিসে নানা অনৈতিক পন্থায় এ জমি বিক্রির পায়তারা করছে। এমন অবস্থায়  উপজেলা ভূমি অফিস তথ্য গোপন করে সৃজন করা খতিয়ানটি বাতিলে গড়িমসি করার মাধ্যমে জালিয়াতকারিদের পক্ষ নিচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে অপু চৌধুরী বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে আমি ২০ গন্ডা জমি পাবো। কিন্তু বিএস খতিয়ানে ১৭ গন্ডা থাকায় আমি উক্ত পরিমাণ জমির নামজারী খতিয়ান সৃজন করেছি। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই।

সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মো. নুরুল আবছারের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গটি তুলে ধরা হলে অপু চৌধুরী হেসে জবাব দেন, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা নুরুল আবছারই আমাকে নামজারী খতিয়ানটি সৃজন করে দিয়েছিলেন। এখন তিনি কেন উল্টে গেলেন আমি জানি না।

এ প্রসঙ্গে জানতে হাটহাজারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সম্রাট খীসার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে রিসিভ করেননি। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে সংশ্লিষ্ট নথিসহ যোগাযোগ করা হলে তিনি একুশে পত্রিকাকে জানান, অর্পিত ৪৮৬/১৫ নম্বর মামলাটি রেজিস্টারে অনুমোদিত হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।