চট্টগ্রাম : রাত তখন সাড়ে ১০টা । কাদেরী কিবরিয়ার দরাজ গলায় রাবীন্দ্রিক সুর একশ’ স্কয়ার ফিটের কক্ষটি জুড়ে। পিসিতে বাজছে ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু’, ওপার বাংলার শিল্পী ইমান চক্রবর্তীর- ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না’। এক অসাধারণ রাবীন্দ্রিক সুর, পরিবেশ সঙ্গী করে চুল কাটছিলেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
আহামরি কিছু নয়, মোটামুটি মানের সেলুন, নাম ‘হেডমাস্টার’। এটি নগরের সাব এরিয়া পার হয়ে আন্দরকিল্লা যেতেই সিপিডিএল প্যারাগন সিটির নিচতলায়। দেড়শ’ থেকে দুশ’ টাকায় এখানে চুল কাটা যায়। আর সেই সেলুনেই চট্টগ্রাম এলে চুল কাটেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
ব্যস্ততার জন্য সময় মতো চুল কাটতে পারেন না মন্ত্রী। সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম এসে যোগ দেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের গণসংবর্ধনায়। অনুষ্ঠান শেষ করে দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের বাসায় যান। আগত দর্শনার্থীদেরকে বাসায় সময় দেন। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বৈঠক করেন দলের নেতাকর্মীদের সাথে। এরপরই মনে হলো চুলটা বেশ বড় হয়েছে। দেড় মাস আগে কেটেছিলেন চুল।
ভাবলেন, এ ফাঁকে চুল কাটার কাজটা সেরে ফেললে মন্দ হয় না। বাকি দর্শনার্থীদের থেকে ছুটি নিয়ে এক দৌড়ে ছুটলেন সেলুনে। তার আগে মন্ত্রীর স্টাফরা নিশ্চিত হয়েছেন সেলুনটি খোলা আছে এবং যে ‘নরসুন্দর’-এর কাছে চুল কাটেন তিনি (রাশেদ) আছেন।
কিন্তু চুলকাটার দোকানেও যেন নিস্তার নেই। খবর নিয়ে কোনো কোনো দর্শনার্থী সেখানে গিয়েও ভিড় করেন। ফিস ফিস করে মিটিয়ে নিচ্ছেন প্রয়োজন। কিন্তু আশ্চর্য, তাতে এতটুকুও বিরক্ত হচ্ছেন না মন্ত্রী।
সেলুনটিতে মানুষের আনোগোনায় এর মধ্যেই চাউর হয়েছে ড. হাছান মাহমুদ এখানে চুল কাটতে এসেছেন। এরপর শুরু হয় আশপাশের কৌতূহলী মানুষের উকিঝুঁকি। বাইরে থেকে গ্লাস ভেদ করে অনেকেই দেখলেন মন্ত্রীর চুলকাটার দৃশ্য। তাতে বিস্মিত কেউ কেউ।
একই মার্কেটের নিচতলার আব্দুর রহিম নামের এক দোকানদার বললেন, মন্ত্রী-এমপি কিংবা দেশের বড় বড় মানুষগুলো যেখানে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় যান চুল কাটাতে, ঘরের মধ্যেই সেলুন গড়ে তুলেন; সেখানে সরকারের এতবড় একজন মন্ত্রী চুল কাটতে এলেন একটি নরমাল সেলুনে, একেবারে সাদামাটাভাবে। দামি কোনো সেলুনে না কাটান, মন্ত্রী ইচ্ছা করলে সেলুন ওয়ালাকে ঘরে ডেকে নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাও করেননি।
সাধারণ মানুষের এমন কৌতূহল সম্পর্কে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, খুব নামিদামি সেলুনে চুল কাটার ইচ্ছা আমার কখনো নেই। এটা আমার কাছে বাহুল্য, অতিরঞ্জন মনে হয়। তাই সবসময় আমি ছোটখাটো সেলুনে চুলকাটতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ঘরে ডেকে হয়তো চুল কাটার কাজটি সারতে পারি। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, সাধারণ মানুষ যেভাবে সেলুনে গিয়ে চুল কাটে আমিও সেভাবে কাটবো।
তাছাড়া মৃদু সুরে রবীন্দ্র সংগীত শুনে শুনে চুল কাটতে আমার ভালোই লাগে। এই যে একটা সুরের পরিবেশ, রাবীন্দ্রিক-দর্শন এটা তো আর ঘরের মধ্যে পাওয়া যাবে না। যান্ত্রিকতা আর ব্যস্ততার মাঝে চুলকাটার নাম করে হলেও অন্তত কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যাবার চেষ্টা করি।-বলেন তথ্যমন্ত্রী।
‘হেডমাস্টার’ হেয়ার ড্রেসারের কাটিং মাস্টার রাশেদ তো মহাখুশি এতবড় একজন মানুষের চুল কাটতে পেরে। চুলকাটা শেষে নিজ থেকেই মন্ত্রীর মাথা মাসাজ করেন তিনি। মন্ত্রীর ঘারে-কপালে আলতু টিপে দিতে ভোলেন না রাশেদ। চুল কাটতে কাটতে সেলুনের পাশের স্টাফটি মন্ত্রীর হাত আর আঙুল মাসাজ করতে চাইলে মন্ত্রী না করেন না। বরং উৎসাহ দেন।
রাশেদ বলেন, আমি অনেক ভাগ্যবান। এর আগেও দু’বার আমি মন্ত্রী মহোদয়ের চুল কেটেছি। চুলকাটা শেষে শুধু আমাকে নয়, সেলুনের অন্যান্য স্টাফের জন্যও তিনি বখশিস দিয়ে যান। আমাদের সেলুনে মন্ত্রী চুল কাটতে আসেন, ভাবতে অনেক ভালো লাগে, গর্ব হয়। বলা চলে, ওনি আবার কবে চুল কাটতে আসবেন সেদিনের জন্য আমরা সবাই অপেক্ষায় থাকি। – যোগ করেন ‘নরসুন্দর’ রাশেদ।
তথ্যমন্ত্রীর ঢাকার ব্যক্তিগত সহকারি (পিএ) কাইছারুল আলম বলেন, মন্ত্রী মহোদয় ঢাকাতেও চুল কাটেন ধানমন্ডি ৬/এ-এর একটি নরমাল সেলুনে। চুলকাটার মানুষকে আমরা বাসায় ডাকতে চাইলে তিনি বারণ করেন। বলেন, দরকার নেই, আমি নিজেই যাবো। সেলুনে বসে চুলকাটার মজাই আলাদা।
একুশে/এটি