রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

‘ইঁদুর ধরতে না পারলে বিড়ালের কী দরকার’

প্রকাশিতঃ ৬ মার্চ ২০১৯ | ৭:১১ অপরাহ্ন

ঢাকা : ইঁদুর ধরতে না পারলে বিড়ালের কী দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

বুধবার (৬ মার্চ) টাঙ্গাইলের জাহালমকে ‘ভুল’ আসামি করার বিষয়টি তদন্তে উঠে এলেও তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি বা জামিন না দেওয়ার ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট এমন মন্তব্য করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা ২৬ মামলায় ভুল আসামি হিসেবে তিন বছর জেলে কাটানো পাটকল শ্রমিক জাহালমের কারাবাসের দায় দুদকের এড়ানোর সুযোগ নেই বলে মনে করে হাইকোর্ট।

আসামি না হয়েও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জাহালমের বিনাদোষে কারাবাসের ঘটনায় মঙ্গলবার দুদক হলফনামা আকারে ব্যাখ্যা দাখিল করে।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর ভুক্তভোগী জাহালমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত।

মামলার শুনানিতে দুদক আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, কেউ চায় না দুদক সম্পর্কে মানুষের ধারণা খারাপের দিকে যাক। তবে দুদককেও পরিচ্ছন্ন (ক্লিন) হতে হবে।

এ সময় দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, চ্যানেল ২৪-এ জাহালমের বিষয়ে রিপোর্ট আসার পর জাহালম যে নির্দোষ সে বিষয়ে দুদক তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। সে তদন্তে জাহালম যে নির্দোষ তা উঠে আসে। তদন্তে দেখা গেছে সে অভিযুক্ত না। তাই আমরা তো বিষয়টি নিয়ে সঠিক পথেই আছি।

আদালত বলেন, চ্যানেল ২৪-এ রিপোর্ট হওয়ার আগে তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) কী করেছেন? দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আপনাদের অনেক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। যে বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে না, সেই বিড়াল থাকার দরকার নেই। জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। আদালত বলেন, আগে অনেকেই দুর্নীতিকে ঘৃণা করতো। কিন্তু এখন এই অবস্থার অবক্ষয় হচ্ছে।

এরপর দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে জাহালমকে নিয়ে আমরা তদন্ত করেছি। আদালত বলেন, আপনারা সেসব তথ্য কী যাচাই-বাছাই করবেন না? আপনারা রিপোর্টে বলছেন, জাহালম ১৮ ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছে। কিন্তু এখন মুখে দুটি ব্যাংককে মামলায় পক্ষভুক্ত করতে চাচ্ছেন?

দুদক আইনজীবী বলেন, আমাদের কাছে মামলার সব ফাইল আছে। একটু সময় দিন, সব আপনাদের দেবো।

আদালত দুদক আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ব্র্যাক ব্যাংকের একজনকে সাক্ষী বানালেন, কিন্তু আসামি করলেন না কেন? আপনারা জাহালমের মামলাটি তদন্ত করেছেন কিনা?’দুদক আইনজীবী বলেন, ‘করেছি। তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে।’

আদালত জানতে চান, জাহালম যে নির্দোষ তা কবে জানতে পারলেন?’জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, ‘চ্যানেল ২৪ থেকে জানার পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তদন্ত করার পর তার নির্দোষের বিষয়ে জানতে পারি।

আদালত বলেন, তদন্ত করে যখন দেখলেন সে নির্দোষ, তখন তাকে প্রসিকিউশন ছেড়ে দিলো না কেন? তদন্তের পর আপনাদের উচিত ছিল তার জামিন দেওয়া। এরপরও মামলার শুনানিকালে আদালতে ও আপনাদের কাছে সে বারবার বলেছে– আমি জাহালম, আবু সালেক না। তারপরও তার জামিনের ব্যবস্থা করলেন না। তাহলে তার বিরুদ্ধে কিসের ভিত্তিতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করলেন? এর দায় আপনাদের নিতে হবে।

আগামী ১০ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে তা আদালতে নিয়ে আসতে দুদককে নির্দেশ দেয়া হয়।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকসহ পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে পক্ষভূক্ত করার আবেদন গ্রহণ করে আদালত জাহালমকাণ্ডে সম্পৃক্ত বাকি ব্যাংকগুলোকেও পক্ষভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে দুদককে।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালমের জামিন আদেশের পর দুদকের আইনজীবী এ বিষয়ে সবিস্তার ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য চার সপ্তাহের সময় নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার আদালতে ব্যাখ্যা দাখিল করে দুদক এই ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায়ী করেন।

একুশে/ডেস্ক/এসসি