রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

মাদ্রাসা ছাত্র বলাৎকার : অভিযুক্ত মাওলানা ধরাছোঁয়ার বাইরে

প্রকাশিতঃ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ৫:১০ অপরাহ্ন

bolatkar চট্টগ্রাম : এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে বলৎকার করেও মাওলানা জমির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি আইনের আওতায় আসেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত মাওলানা জমির উদ্দিন (৩০) পাঁচলাইশ থানাধীন শুলকবহর আবদুল হামিদ রোডের এম সিরাজ মসজিদের ইমাম ছিলেন। ঘটনার পর মসজিদ কমিটি তাকে বরখাস্ত করে। তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার আশিয়া গ্রামের মৃত হাফেজ আনোয়ারের ছেলে।

অন্যদিকে ভুক্তভোগী ১৫ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থী শুলকবহর মাদ্রাসার ছাত্র। ঘটনার পর ‘আর’ আধ্যাক্ষরের ওই কিশোর মাদ্রাসা থেকে বিতাড়িত হয়। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়।

অভিযোগ রয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন সময় শুলকবহর মাদ্রাসার ওই ছাত্রকে বলাৎকার করেছেন মাওলানা জমির উদ্দিন। পাশের এম সিরাজ মসজিদ কম্পাউন্ডের রুমে এসব ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের দাবি- লোকলজ্জা ও সঙ্কোচের কারণে কিশোরটি কাউকে কিছু বলতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত মলদ্বারে ক্ষত হওয়ায় স্বজনদের জানাতে বাধ্য হয় কিশোরটি। বিষয়টা জানাজানির পর পুলিশ মসজিদে গেলে মুসল্লিদের একটি পক্ষ অভিযুক্তের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করে। এমনকি শুলকবহর মাদ্রাসার প্রভাবশালী এক শিক্ষকও অভিযুক্তের পক্ষ নেয়। এতে পালানোর সুযোগ পায় অভিযুক্ত ব্যক্তি। পরে মসজিদ কমিটি ওই ইমামকে চাকুরিচ্যুত করেন।

এদিকে ঘটনার সময় মসজিদের মুয়াজ্জিনের দায়িত্বে ছিলেন মাওলানা শাহ আলম। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনা একেবারে সত্য। বিষয়টা জানাজানি হওয়ার পর অলিখাঁ মসজিদের সাবেক ইমাম ক্বারী আনোয়ার সাহেব প্রতিবাদ করেন। তিনি সেসময় বলেছিলেন, জমিরকে ইমাম হিসেবে মেনে নামাজ পড়া উচিত হবে না।’

সাবেক মুয়াজ্জিন শাহ আলম বলেন, ‘বলাৎকারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইমাম জমির ও ক্বারী আনোয়ার সাহেবের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে আনোয়ার সাহেবের উপর হামলা করার জন্য লোক ভাড়াও করেন মাওলানা জমির। মার্চ মাসের শুরুর দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পরও মাওলানা জমিরকে আটক করেনি। এতে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান তিনি।’

কিশোর মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকারের বিষয়টি এখন ধামাচাপা পড়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন মসজিদটির সাবেক মুয়াজ্জিন শাহ আলম।

স্থানীয় একটি সূত্র বলেন, দিনের পর দিন এক কিশোরকে ধর্ষণ করে পার পাওয়া জমির উদ্দিনের এ ঘটনা এলাকার লোকজনও তেমন জানতে পারেনি। তিনি কোরআনে হাফেজ এবং মসজিদের ইমাম হওয়ায় মুসল্লি ও মসজিদ কমিটি বিষয়টি গোপন রেখেছেন।

বলাৎকারের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাওলানা জমির উদ্দিন বলেন, ‘এটা মিথ্যা অভিযোগ। আসল সত্য ঘটনা হলো, তৎকালীন মুয়াজ্জিন শাহ আলম মসজিদের মোমবাতি ও অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করেছিল। জিয়া নামের এক ছেলে মসজিদের কোয়ার্টারে ভাড়া থাকতো; নানা কারণে তাকে বের করে দিয়েছিল মসজিদ কমিটি। এছাড়া ক্বারী আনোয়ার সাহেবের সাথে আমার কিছু বিষয় নিয়ে মতবিরোধ ছিল। সবমিলিয়ে তাদের শত্রুতে পরিণত হই আমি। তাদের ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়েছি আমি।’

এ ঘটনার জেরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘একদিন রাতে মোতোয়াল্লী সাহেবকে নিয়ে আমার বাসায় আসেন ক্বারী আনোয়ার সাহেব। তাদেরকে নাকি কেউ খবর দিয়েছিল যে, আনোয়ার সাহেবকে মারার জন্য আমি লোক এনে বাসায় রেখেছি। কিন্তু তারা বাসায় এসে কাউকে পেলেন না সেদিন। ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়ার পরপরই মসজিদ ছেড়ে যাওয়ার জন্য মোতোয়াল্লী মো. বেলাল সাহেবকে আমি বলেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, এখনই যাওয়ার দরকার নেই। আমি বললে তখন যাবেন। এরপর তিনি যখন বলেছেন, তখনই আমি মসজিদ ছেড়ে চলে আসি। পরে মুয়াজ্জিনকেও বিদায় করে দেয় মসজিদ কমিটি। ’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অলিখাঁ মসজিদের সাবেক ইমাম ক্বারী আনোয়ার বলেন, ‘এটা অনেক আগের বিষয়; ঘটনা তখনই মীমাংসা হয়ে গেছে। এখন এসব কথা উঠছে কেন? ইমাম জমিরকে না রাখার বিষয়ে মুসল্লিরা আপত্তি তুলেছিল। পুরো বিষয়টা আমি জানি না।’

ইমাম জমিরকে সরানোর ক্ষেত্রে আপনার একটা ভূমিকা ছিল। তাই এ বিষয়ে আপনার কাছে জানতে চাওয়া- এমন কথা বলতেই তিনি বলেন, ‘ এটা মুসল্লিদের ব্যাপার। তার ব্যাপারে একটা কথা উঠার পর অনেকে মসজিদে নামাজ পড়তে চাননি। এটা নিয়ে আমি কিছু জানি না।’

ভুক্তভোগী ছাত্রকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বহিস্কার করেছিল কি না, ওই ছাত্রকে নিয়ে পুলিশের কাছে কেউ গেছে কিনা জানতে চাইলেও তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুলকবহর আবদুল হামিদ রোড এম. সিরাজ মসজিদের মোতোয়াল্লী মো. বেলাল বলেন, একেবারে মিথ্যা। অপবাদ। জমির হুজুর হকের পথে ছিলেন, সেজন্য একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে ছিল। জমির হুজুর কওমী আকীদার হওয়ায় সুন্নিরা তার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। সুন্নীদের সাথে তিনি কম মিশতেন। এজন্য তারা একটি গুজব রটিয়ে মসজিদ থেকে বের করার ষড়যন্ত্র করে।

শুলকবহর আবদুল হামিদ রোডের এম সিরাজ মসজিদের সাবেক ইমাম মাওলানা জমির উদ্দিনের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তদন্ত করতে সেসময় ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন পাঁচলাইশ থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই রাজু আহমেদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকমুখে খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে বলাৎকারের প্রমাণ বা আলামত পাইনি। এমনকি এ ঘটনা নিয়ে ভুক্তভোগী বা তার স্বজনদের পক্ষ থেকে কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগও করেনি।’

তিনি বলেন, ‘ওই মসজিদটিতে কমিটি নিয়ে বিরোধ আছে। এছাড়া ইমাম জমির উদ্দিনের সাথে কারো কারো দ্বন্ধ আছে। এরপর তার ব্যাপারে কিছু কথা ছড়িয়ে পড়ার পর; এলাকার অনেকেই তার পিছনে নামাজ পড়তে চাচ্ছিলেন না। এ ইস্যুতে এলাকার মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়ে। তাই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য, ওই ইমামকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়। এরপর তিনি চলে যান।’