মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

সর্বশান্ত হয়েই বিএনপি ছাড়ছেন সামশুল!

প্রকাশিতঃ ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ | ৯:৪৫ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : বিএনপি করে সর্বশান্ত হয়ে এবার বিএনপিই ছেড়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের বনেদী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদাস (এমইবি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সামশুল আলম। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এই সদস্য ইতোমধ্যে বিএনপির রাজনীতি থেকে নিজেকে একপ্রকার গুটিয়ে নিয়েছেন। এখন কেবল ঘোষণা দিয়ে বিএনপি ত্যাগ করার পালা। সামশুল আলমের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে কোতোয়ালী আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন সামশুল আলম। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতাদের কাছে ধর্না দেন। মনোনয়নের প্রাইমারি প্রক্রিয়া হিসেবে নগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের তৃনমূলের ভোটে অংশ নেন। সেই ভোটে তাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য তৃণমূলের ভোটবাক্স ছিনতাই হওয়াসহ ঘটে নানা নাটকীয় ঘটনা। শেষপর্যন্ত আওয়ামী লীগে সামশুলের জায়গা না হলেও কোতোয়ালী আসনে রাতারাতি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে হাজির হন।

৪৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুল ইসলাম বি.এসসি’র কাছে পরাজিত হলেও ঘরে ফিরে যাননি সামশুল। সক্রিয় হন বিএনপির রাজনীতিতে। দুইবছরের মধ্যে একে একে বিএনপির শীর্ষসব পদ কব্জায় নিয়ে আসেন। ২০১০ সালে নগর বিএনপির ৫ সদস্যের কমিটিতে জায়গা পেয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক হন। এরপর কোতোয়ালী থানা বিএনপির সভাপতি এবং কিছুদিনের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য।

জানা যায়, বিএনপির সুদিন আসবে, এমপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন-এই আশায় সরব থাকেন বিএনপির রাজনীতিতে। এসময় বিএনপির অন্যতম ‘ডোনার’ হিসেবেও নিজেকে মেলে ধরেন। রাজনীতিতে ‘ফুলটাইমার’ হতে গিয়ে লাঠে উঠে ব্যবসা। বন্ধ হয়ে যায় ‘দাদা’ মিনারেল ওয়াটার। সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে ‘দাদা’ সয়াবিন তেল এবং ‘বিটুমিন’ ব্যবসা। বাড়ে দেনা, কমে স্টাফ। ছোট হয়ে যায় ব্যবসার সামগ্রিক কলেবর। একপর্যায়ে চেক ডিজঅনার মামলারও আসামী হয়ে আদালতে যেতে হয় তাকে। এরমধ্যেই তিনটি রাজনৈতিক সহিংসতা মামলার আসামী হন তিনি।

সামশুলের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, গত ১০ বছরে নিজের সর্বস্ব দিয়ে যখন-তখন বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। নিজের পকেটের অর্থ ঢেলে নগর বিএনপিতে ‌বড় বড় নেতা বানিয়েছেন। বিনিময়ে বঞ্চনা আর গ্রুপিংয়ের শিকার হয়েছেন। হয়েছেন একের পর এক মামলার আসামী। সবমিলিয়ে তিনি এখন ক্লান্ত, শ্রান্ত।

সূত্রগুলোর দাবি, সামশুল আলম মূলত আওয়ামী পরিবারের সন্তান। কয়েক প্রজন্ম ধরে তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগার। সে কারণে আওয়ামী লীগ থেকেই মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর বিএনপির কয়েক শীর্ষনেতার ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে সেদিন ভুল করেছিলেন। যার মাশুল তিনি এখনো দিচ্ছেন। তার সাজানো-গোছানো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তছনছ হয়ে গেছে। এসব কারণে তিনি আর বিএনপিতেই থাকতে রাজি নন।

এ নিয়ে মঙ্গলবার সকালে সামশুল আলমের সঙ্গে সরাসরি কথা হয় একুশে প্রতিবেদকের। বিএনপি ছাড়ছেন কিনা-সে প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বললেও সামশুল আলম বলেন, ‘পাস্ট ইজ পাস্ট, নাও থিংকিং নিউ সামথিং’। বিএনপি না করলে কি আওয়ামী লীগ করবেন? এ প্রশ্নে সামশুল আলম বলেন, সময় হলে সব জানতে পারবেন। তবে আমি ঘুরে দাঁড়াতে চাই। আই সেল ওভারকাম।’ বলেন সামশুল আলম।

একুশে/এসসি/এটি