ডা. বিদ্যুত বড়ুয়া : আজ টিংকু ভাইয়ের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। দেখতে দেখতে ৭টি বছর পেরিয়ে গেলো। কিন্তু এখনো মনে হয় না তিনি নেই। আমি বিশ্বাস করি, যে বা যারা টিংকু ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাদের কাছে টিংকু ভাই এখনো দেদীপ্যমান, ভাস্বর। এতো বিশাল হৃদয় ও আধুনিক মানসিকতার মানুষ শুভার্থী, স্বজনদের মাঝে ভাস্বর, জাগরুক থাকবেন তাই স্বাভাবিক। অসীম সাহসী ও অনুপ্রাণিত, উজ্জীবিত করার মতো মানুষ টিংকু ভাই। কোনো কিছুই অসম্ভব না- এই ধ্যান-ধারণা লালন করতেন সবসময়। যে বা যারা তাঁর সংস্পর্শে একবার এসেছেন, তাদের কাছে এই ধারণা সঞ্চারিত করতেন।
‘৯০-এর দশকের ছাত্র আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা; যিনি চলনে-বলনে ও আধুনিকতায় অন্যদের চেয়ে অনন্য ছিলেন। অসম্ভব কর্মীবান্ধব ও বন্ধুবৎসল টিংকু ভাই সহজেই সাধারণ মানুষের আপন হয়ে যেতেন। জটিল বিষয় সহজভাবে কর্মীদের মাঝে সঞ্চালন করতেন সহজেই। ১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কাযর্ক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সাংস্কৃতিক সংগঠন ’উচ্ছ্বাস’-এর মাধ্যমে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগ-এর বার্তা পৌঁছে দেওয়ার সময়ে টিংকু ভাইয়ের অবদান চিরভাস্বর, চির অম্লান।
প্রিয় টিংকু ভাই, আমাদের নবীন-বরণে আপনি বিশেষ অতিথি ছিলেন এবং আপনার বক্তব্য এখনো কানে বাজে। নিজে ড্রাইভ করে এলেন সভাস্থলে, আপনার পাশে বসা ছিলাম আমি-এখনো স্মৃতিপটে অমলিন। মানুষকে উজ্জীবিত করার মতো অসম্ভব ক্ষমতা আপনার। ঢাকার পল্টন, সেগুন বাগিচা ও মগবাজার আপনার বাসা জুড়ে অগণিত স্মৃতি চোখের জলে এঁকে যায় এখনো। শুধু ঢাকায় নয়, চট্টগ্রামে শেঠ বাড়িতে আপনি যেদিন আসতেন হরেক রকমের মাছ রান্না হতো। সমাজ-রাজনীতি আর দেশ নিয়ে আপনার চিন্তা-চেতনা আড্ডাবাজির অংশ ছিল। শুধু নিজের পরিবার-পরিজন নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ও জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি নেতাকর্মীকে নিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার ভাবনা ছিল সদা।
বলাবাহুল্য, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতিতে আজকের প্রতিষ্ঠিত অনেককেই আপনি ’প্রতিষ্ঠিত’ করেছেন। আপনি বেঁচে থাকলে দেশ-জাতি অনেক সমৃদ্ধ হতো। দুর্ভাগা আমরা। ক্ষণজন্মা টিংকু ভাইয়েরা বেশি দিন বাঁচেন না, বেঁচে থাকেন না। টিংকু ভাইকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, তার ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনা বর্তমান প্রজন্মের কাছে সঞ্চালন করতে হবে।
আমরা যারা ঘনিষ্ঠজন ছিলাম, এই দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। বর্তমান দেশের অনেক গুণীজন টিংকু ভাই-এর ঘনিষ্ঠ। তাদের সঙ্গে টিংকু ভাইয়ের কাটানো আড্ডাবাজির স্মৃতি নিয়ে ” স্মারকগ্রন্থ ” বের করার ইচ্ছে। এই জন্য তাঁদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
আপনি ভালো থাকবেন, বেঁচে থাকবেন আমাদের ভালবাসায়। সাংবাদিক পীর হাবিব-এর ভাষায় লিখতে হয় “জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু তোমার মিস্টি হাসি মুখ মনে পড়ে, তোমার থপ থপ করে কথা বলা ও হাটা, আন্তরিকতা ভোলা যায় না।”
লেখক : সাবেক ভিপি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রসংসদ, সাবেক আহ্বায়ক , বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ