রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ধনীক শ্রেণীর নির্বাচনে জনমনে শৈত্যপ্রবাহ

প্রকাশিতঃ ৮ ডিসেম্বর ২০১৮ | ২:৫০ পূর্বাহ্ন

 

হাসিনা আকতার নিগার : বিজয়ের মাসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে এমন প্রত্যাশা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের।

আওয়ামী লীগ আর বিএনপির ছায়াতলে এসে সুশীল শ্রেণী রাজনীতিতে যে নতুন মেরুকরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তা এখনো অস্পষ্ট সাধারণ মানুষের কাছে। এর পেছনে যে বিষয়টি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়েছে, তা হলো ব্যক্তিস্বার্থের কারণে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বিশেষ কিছু ব্যক্তি নিজেদের আর্দশকে বর্জন করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সাথে সামিল হয়েছে।

নির্বাচন এলে নমিনেশন পেতে দল ছুটোছুটি নতুন কিছু নয়। তথাপি সুশীল আর মুক্তিযুদ্ধের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এতটা পরিবর্তন সংশয় তৈরি করে জনগণের মনে। মৌলবাদ আর সন্ত্রাসকে তারা নীরব সর্মথন দিয়ে নিজেদের রাজনীতিকে বেসাতিতে তুলেছে।

মনোনয়নপত্র নিতে গিয়ে সারাদেশ দেখেছে টাকা কীভাবে উড়ছে রাজনৈতিক দলগুলোর অফিসে। রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সমাজের নানা পেশার লোক গণহারে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে দেশে নৌকা ছাড়া কিছু নেই। সময়ের ব্যবধানে দেখা গেল রাতারাতি ভোল পাল্টে বঙ্গবন্ধুর আর্দশ জলাঞ্জলি দিয়ে ধানের শীষের আত্মজ হয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে অনেকে।

কিন্তু বিগত এক বছর ধরে আওয়ামী লীগের কাছে জনগণের নতুন কিছু প্রত্যাশা ছিল সাংসদদের নিয়ে। উন্নয়নকে চলমান রাখতে হলে আওয়ামী সরকার দরকার। কিন্তু তৃণমূলে নতুন নেতৃত্ব আসবে এ আশা করেছিল মানুষ। কেননা উন্নয়নের সাথে সাথে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা ক্ষোভ ছিল বিভিন্ন আসনের সাংসদ নিয়ে।

তবে এই বিষয়গুলোকে অনেকটাই উপেক্ষা করে প্রার্থী দেয়া হয়েছে দলের নিজের পছন্দমত। বঞ্চিত প্রার্থী নিয়ে হতাশার সুর রয়েছে এলাকাতে। যার কিছুটা আঁচ করা যায় মাঠের রাজনীতিতে। যদিও দল বলছে প্রার্থী যেই হোক কাজ করতে হবে দলের জয়ের জন্য। দলীয় কর্মীদের এ কথা বোঝানো গেলেও জনগণ তা কতটা শুনবে তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এর কারণ হলো ভোটের সিলের মালিক জনগণ।

নির্বাচনী প্রচারণার রঙ, বাহারি আয়োজনের সাথে প্রার্থীদের আয়ের উৎস হিসাবে যে হিসাব দিয়েছে তা হাস্যকর বলে প্রতীয়মান। কারণ মানুষ আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াসহ গনমাধ্যমের বদৌলতে জানতে পারে প্রার্থীরা কতটা ধনবান। সুতরাং নির্বাচনী ব্যয় দেখে বোঝা যায় কতটা শুভঙ্করের ফাঁকিতে এ ভোটের লড়াই। মূলত ধনিক শ্রেনির এ নির্বাচনে জনগণের মাঝে এখনো এক ধরনের শীতলতা।

২৩ দিন পর নির্বাচন। কিন্তু বিগত ২টি নির্বাচনের জের ধরে মানুষ এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের আস্থার জায়গাটা পাচ্ছে না। প্রশাসনিক বলয়ে নির্বাচন হবে বলে যে কথাটি বাতাসে উড়ছে তার কিছুটা হলেও প্রমাণ মানুষ পেয়েছে প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের বহু রকমের ঘটনার মধ্য দিয়ে।

সার্বিক পরিস্থিতে উন্নয়নের বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ধনিক শ্রেণীর রাজনীতিতে গণতন্ত্র আর জনগণের চাওয়া-পাওয়া তেমন করে নেই বলে ভোট নিয়ে হিম হিম শীতের শৈত্যপ্রবাহ প্রতীয়মান এখন পর্যন্ত৷ আর এর রেশ ধরে আগামীতে সংসদ কতটা শক্তিশালী হবে তা নির্ভর করবে জনগণের ভোটাধিকারের সঠিক প্রয়োগ হলে।

একুশে/এইচএএন/এটি

হাসিনা আকতার নিগার : কলাম লেখক