চট্টগ্রাম: বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য নিয়ে বসে আছে ৩২টি জাহাজ (মাদারভেসেল)। এসব জাহাজে আছে গম, চিনি, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, ক্লিংকার, কয়লা ও ইউরিয়া সার। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে বন্দর ত্যাগ করতে না পারায় অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হচ্ছে জাহাজ মালিকদের। এতে প্রতিদিন জাহাজ মালিকদের ক্ষতি হচ্ছে সাত থেকে আট কোটি টাকা। আর পণ্যের আমদানি-রপ্তানিকারকদের প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে পাঁচ কোটি টাকার বেশী। এর ক্ষতিকর প্রভাব শিগগিরই দেশের শিল্প-কারখানা ও পরিবহন সেক্টরে দৃশ্যমান হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ খান বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পণ্য নিয়ে ৩২টি জাহাজ বহির্নোঙরে বসে আছে। সবমিলিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে সব পক্ষের। এর ক্ষতিকর প্রভাব দেশের অর্থনীতি পড়বে।
বাংলাদেশ নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে গত সোমবার (২২ আগস্ট) দিনগত রাত ১২টা থেকে চারদফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে নৌযান শ্রমিকরা। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে সব ধরনের পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে নৌপথে শিল্পের কাঁচামালসহ সব ধরনের পণ্য পরিবহন। বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার ঘাট-শ্রমিক।
বাংলাদেশ নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ বশির জানান, সরকার ঘোষিত মজুরি মালিকরা বাস্তবায়ন করাসহ চার দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি মেনে নেওয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।
এদিকে গত ২৬ এপ্রিল নৌযান শ্রমিকদের টানা ১৩ দিন আন্দোলনের কারণে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান জাতীয় স্কেলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দেন। যেখানে সর্বনি¤œ ৯ হাজার ও সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ১০০ টাকা বেতন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মালিক পক্ষ এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে হাইকোর্টে রিট করে। তবে এ রিটের সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। মালিকপক্ষের এই অবস্থানে ক্ষুব্ধ নৌ শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে।
অন্যদিকে জাহাজ মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিভোয়া) একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, গত এপ্রিলে একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রী। শ্রমিকদের বেতন-ভাতার যে হার তিনি ধার্য করে দিয়েছেন- সেটা বাস্তবায়ন করতে গেলে আয়ের বদলে ক্ষতি গুনতে হবে জাহাজ মালিকদের। মন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সব জাহাজ মালিক সেসময় জাহাজ পরিচালনা বন্ধ রেখেছিলেন। তাতেও সরকার কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি। এর প্রেক্ষিতে আমরা উচ্চ আদালতে যাই।
এদিকে ধর্মঘট প্রত্যাহারে নৌমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
মন্ত্রীর কাছে প্রেরিত এক পত্রে তিনি বলেন, সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল ও পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থেকে দেশব্যাপী শিল্পের কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জাহাজ জট এবং কন্টেইনার জট নতুন সঙ্কট তৈরি করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাহাজের টার্ন এরাউন্ড টাইম বৃদ্ধি এবং কন্টেইনারের ওভারস্টের কারণে ডেমারেজ চার্জ, পণ্য আমদানি-রপ্তানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সাধারণ ভোক্তাদের অতিরিক্ত মাশুল গুণতে হবে।