চমেকের ‘মুমূর্ষু রোগী’ বেড ছেড়ে নগরভবনে!

আকমাল হোসেন : ভীড় ঠেলে হঠাৎ মেয়রের কক্ষে প্রবেশ করেন চল্লিশোর্ধ এক ব্যক্তি। তাকে দেখেই মেয়রের প্রশ্ন- “কে আপনি, কেন এসেছেন?” তখন ওই ব্যক্তি উত্তর দেন- তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি আছেন। এ কথা শুনে মেয়রের চক্ষু চড়কগাছ! মেয়র বললেন- ‘হাসাপাতালে না থেকে এখানে কী?’

জবাবে লোকটি জানান, ‘আমার হার্নিয়ার অপারেশন করাতে হবে। আইসিইউ বেড দরকার। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে বেড দিবে না। তাই আপনার কাছে আসলাম। আপনি একটু সুপারিশ করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে আইসিইউতে বেড দিবে।’

এ কথা শুনে মেয়রসহ কক্ষে অবস্থানরত সকলের মাঝে হাসির রোল পড়ে যায়। তখন লোকটিকে মেয়র বললেন, ‘আপনাকে দেখে তো কোনোভাবেই মুমূর্ষু মনে হচ্ছে না। তাহলে আপনার আইসিইউ বেড কী দরকার। আপনার থেকে আরো খারাপ অবস্থার রোগীদের দরকার আইসিইউ বেড। এসময় স্মিত হেসে মেয়র বলেন, ‘হাসপাতালের বেড ছেড়ে আপনি এখানে। সাংবাদিকরা জানলে তো নিউজ করে দিবে।’

পরে মেয়র তার ব্যক্তিগত সচিব রায়হান ইউসুফকে ডেকে বলেন, ‘দেখো তার নাকি আইসিইউতে বেড লাগবে। তুমি একটু ব্যাপারটা যাচাই করে আমাকে জানাও।’

এসময় মেয়র কক্ষে অভ্যাগতদের সঙ্গে শেয়ার করেন বিষয়টি। বলেন, দেখুন কী অবস্থা! হাসপাতালের সব ফাইল নিয়ে এ লোক আমার কাছে চলে এসেছেন বেড বেড চাইতে। হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ জানলে তো তাকে বেরই করে দিবে।

সোমবার (১২ নভেম্বর) দুপুর ৩টার দিকে নগর ভবনে মেয়র কার্যালয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

পরে এ বিষয়ে জানতে মেয়রের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) রায়হান ইউসুফের সঙ্গে একুশে পত্রিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লোকটির নাম জসিম উদ্দিন। তিনি মেডিকেলের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪ নম্বর বেডে ভর্তি আছেন। এক আত্মীয়ের সাথে মেয়র মহোদয়ের কাছে এসেছেন এই ভেবে যদি মেয়রের কাছে নিজের অসুস্থতা দেখিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করা যায় তাহলে হয়তো তার একটা আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা হবে।

পরে আমি মেডিকেলের এক সার্জারি চিকিসকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি তার হার্টেরও সমস্যা আছে। তাই তিনি অপারেশন করানোর আগে আইসিইউ বেড নিশ্চিত করতে চেয়েছেন যাতে তার জীবন সংকটে না পড়ে। বলেন রায়হান ইউসুফ। এসময় লোকটির চিকিৎসার ব্যাপারে ফলোআপ করবেন বলে জানান মেয়রের পিএস।

সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে টেলিফোনে একুশে পত্রিকার কথা হয়। তিনি বলেন, হ্যাঁ মজার কাণ্ডই ঘটে গেলো আজ। লোকটিকে আমি চিনি না। হাসপাতালের বেড ছেড়ে সোজা তিনি কেমন করে যেন আমার কার্যালয়ে হাজির। আমি তো অবাক। পরে রায়হানকে দায়িত্ব দিয়েছি বিষয়টি দেখার জন্য।

নগরে একজন মানুষের বেড দরকার, তাও কি আপনাকে দেখতে হবে-এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, কী আর করা! সবাই তো বোঝে না। অনেকেই আমার কাছে ছুটে আসেন সমাধানের আশায়। আমি মানুষের সেবাতেই আনন্দ খুঁজে পাই। তাই সাধ্যমতো সেবা করার চেষ্টা করি। এতে কেউ উপকৃত হলে, নিজেকে সুখী মনে হয়।

একুশে/এএস/আরএইচ/এটি