রাকীব হামিদ : নামকরা তারকা হোটেল দি পেনিনসুলা চিটাগাংয়ের গাড়ি পার্কিংয়ে নেই পর্যাপ্ত জায়গা। সীমিত জায়গায় গাড়ি পার্কিং-এর পর মূল সড়কেও রাখতে হয় অতিথিদের গাড়ি। এতে করে হোটেলের নিজস্ব গাড়ি রাখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ভরসা তাই চট্টগ্রামের জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জায়গা। কোনো ধরনের ভাড়া ছাড়াই অবৈধভাবে সরকারি জায়গায় গড়ে তুলেছে নিজস্ব পার্কিং ও গ্যারেজ।
অবৈধ এই সুবিধা নেয়ার পেছনে কাজ করছে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের প্রভাব প্রতিপত্তি। কারণ পেনিনসুলা হোটেলের মালিকানাও আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্যের। মন্ত্রী হবার সুবাধে ২০১৫ সাল থেকেই সরকারি জায়গায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পেনিনসুলার গাড়ি স্থায়ীভাবে রাখা হচ্ছে। শুধু গাড়ি পার্কিং নয়। সেখানে পেনিসুলার নিজস্ব গাড়িগুলোর মেরামতের কাজও করা হয়। এখানেই শেষ নয়। গাড়ির নিরাপত্তার জন্য ২৪ ঘণ্টা পেনিনসুলার দুজন নিরাপত্তাকর্মী পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। একুশে পত্রিকার অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জিইসি এলাকার সিডিএ এভিনিউয়ের ও আর নিজাম সড়কে হোটেল পেনিনসুলা অবস্থিত। হোটেলটি থেকে ১০০ গজ দূরত্বেই জাকির হোসেন সড়কের পাশেই অবস্থিত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়। মূল ফটক পেরিয়ে কিছু দূর যেতেই এস্টেট কর্মকর্তার কার্যালয়ের পিছনেই দেখা মিলল পেনিনসুলার পার্কিং ও গ্যারেজের সাম্রাজ্য। এসময় সেখানে ৫টি গাড়ি পার্কিং অবস্থায় দেখা যায়। এর মধ্যে দুটি মাইক্রো, একটি মিনিবাস, একটি কার ও একটি ক্যাটারিং পিকাপ। সবগুলো গাড়িই পেনিনসুলার লোগো সম্বলিত। গাড়িগুলোর অদূরে কথা হয় সেখানে দায়িত্বে থাকা পেনিনসুলার নিরাপত্তাকর্মীর সাথে।
নাম প্রকাশ না করে তিনি একুশে পত্রিকাকে জানান, এখানে রাতে একসাথে ১৫টি গাড়ি রাখার সুব্যবস্থা আছে। হোটেলে পার্কিং সুবিধা পর্যাপ্ত নয় তাই এখানে রাখা হয়। পাশাপাশি এখানে গাড়িগুলো মেরামতেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন এক কর্মচারী। একুশে পত্রিকার এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, তিনি জানান, মন্ত্রীর দাপটেই এখানেই পেনিনসুলার গাড়ি রাখা হয়। অফিসারদেরও কথা বলার সুযোগ নেই। যেখানে গাড়ি রাখা হচ্ছে সেখানে আগে কর্মকর্তা কর্মচারীর সন্তানেরা খেলাধূলা করতো। কিন্তু গাড়ি রাখার ফলে তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
সরকারি জায়গায় কীভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পেনিনসুলার গাড়ি রাখা হচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কাওসার মোরশেদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, সব সময় থাকে না। রাতে থাকে। পেনিনসুলার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। জায়গা নেই। এজন্যে তাদের ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা বলে রাতে ৬-৭ টা গাড়ি রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কোনো রাজস্ব আসে না জানিয়ে সরকারি জায়গায় এভাবে গাড়ি রাখার নিয়ম নেই বলে স্বীকার করেন এ কর্মকর্তা। এসময় তিনি মন্ত্রীর কোনো প্রভাব আছে কিনা এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
দি পেনিনসুলা চিটাগাং-এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ভারতীয় নাগরিক মুশতাক লুহার একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। যদি এমনটি হয় এখনই সরানোর ব্যবস্থা করবো।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্যে হোটেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে কথা বলতে অনুরোধ জানান তিনি।
ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে একুশে পত্রিকার পক্ষ থেকে হোটেলটির চেয়ারম্যান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মোবাইল ফোনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
একুশে/আরএইচ/এটি