মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রভাবশালীর ভবন, নির্বিকার সিডিএ

প্রকাশিতঃ ৬ নভেম্বর ২০১৮ | ৮:০৪ অপরাহ্ন

                                     সড়কের উপর এভাবেই নির্মিত হচ্ছে বাণিজ্যিক ভবন। ছবি-সংগৃহীত

রাকীব হামিদ : চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ইমারত নির্মাণ বিধিমালার তোয়াক্কা না করেই নগরীর চকবাজারে নির্মিত হচ্ছে বাণিজ্যিক ভবন। নবাব ওয়ালী বেগ খাঁ জামে মসজিদ সংলগ্ন ৬০ ফুট প্রশস্থ হাটহাজারী সড়কের পাশেই ভবনটি ইমরাত নির্মাণের নকশা দিয়েছিল সিডিএ।

কিন্তু সেই নকশার প্রদত্ত শর্ত ভঙ্গ করে নালার ওপর হাটহাজারী সড়কের মধ্যেই নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন ভবন মালিকরা।

জনস্বার্থহানি করে ভবন নির্মাণ অব্যাহত রাখায় উচ্চ আদালতের দেয়া আদেশ বাস্তবায়ন করছে না সিডিএ। এক মাসের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা থাকলেও ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সিডিএ নীরব, নির্বিকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবনটির মালিক প্রফেসর ড. সেলিম উদ্দিন ও শওকত উল্ল্যাহ। প্রফেসর ড. সেলিম উদ্দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। তবে বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যন্স কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান পদে আছেন।

২০১৭ সালে তারা দুজন মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কাছ থেকে ১ হাজার ৯৮ বর্গফুটের জায়গাটি ক্রয় করেন। এর আগে পূর্বের মালিক ভবন-নির্মাণের জন্য সিডিএ থেকে নকশার অনুমতি নেন। সেই অনুমোদিত নকশার ওপর ভিত্তি করেই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন বর্তমান মালিকরা। সিডিএর অনুমোদিত সেই নকশায় শুধু অফিস ব্যবহারের জন্য পাঁচতলা ভবনের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে বর্তমানে ছয় তলা পর্যন্ত মার্কেটের নির্মাণের কাজ চলছে।

এদিকে, সড়কের আংশিক জায়গায় ভবন নির্মাণ করায় ৬০ ফুট প্রশস্থ সড়কের সুফল মিলছে না। যা চকবাজার এলাকার নিত্য যানজটে প্রভাব ফেলছে। দুর্ভোগ নিয়েই সাধারন মানুষদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। নকশা বহির্ভূতভাবে নির্মিত ভবনটি জনগণের ভোগান্তির কারণ হওয়ায় জনস্বার্থে রিটও দায়ের করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও নগর যুবলীগের সদস্য মোস্তাক আহমেদ গত মার্চ মাসে এই রিট আবেদন করেন। শুনানিশেষে গত ৪ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল আলম ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এক মাসের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা করতে সিডিএকে নির্দেশ দেয়। ইতোমধ্যে সে আদেশের মেয়াদও ৬ মাস পেরিয়ে গেছে। ফলে আদালত অবমাননা হচ্ছে বলে দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে উচ্চ আদালতে রিটের আগে একাধিকবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) বিষয়টি নিয়ে মৌখিক ও লিখিতভাবে অভিযোগ জানান স্থানীয়রা। সে অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে পরিদর্শন করে সংস্থাটির ইমারত নির্মাণ কমিটি।

সরেজমিন পরিদর্শনে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ভবন মালিকদের গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সিডিএ কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করে। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, নির্মাণাধীন ভবনটির পূর্বে ১ মিটার জায়গা রাখার পরিবর্তে ০.৮৪ মিটার রাখা হয়েছে। পশ্চিমে হাটহাজারী সড়ক এলাইনমেন্টসহ ৪.২৬ মিটার খালি জায়গা রাখার পরিবর্তে ১.৯৭ মিটার রাখা হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির জোরে সেই কারণ দর্শানো নোটিশও আমলে নে নি ভবন মালিকরা এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।

চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. শাহেদুল আজম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী সড়কটি সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে সড়ক সম্প্রসারণ হলেও অজানা কারণে সিডিএ ওয়ালী বেগ খাঁন মসজিদের বিপরীত পাশের মোড়টি সম্প্রসারণ করেনি। বরং সেখানে নালা ও রাস্তা দখল করে ভবননির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে এলাকাবাসী বারবার সিডিএ চেয়ারম্যানকে জানালেও তিনি কর্ণপাত না করে উল্টো দুর্ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে এ সংকান্ত আদালতের দেয়া নির্দেশও মানেনি সিডিএ। আগামি ডিসেম্বরে আমরা আদালত অবমাননার অভিযোগ জানাব। বলেন অ্যাডভোকেট শাহেদুল আজম।

এদিকে ভবন মালিকদের মধ্যে ড. সেলিম উদ্দিনের মুঠোফোনে দফায় দফায় চেষ্টা করেও তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের সঙ্গে একুশে পত্রিকা থেকে যোগাযোগ করা হয়। এসময় তিনি জানান, ‘এটা মানহানির ব্যাপার তো তাই এটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো। দুই পক্ষের মধ্যে এটা নিয়ে মামলা আছে। তাই সিডিএ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারছে না।’

একুশে/আরএইচ/এটি