মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১

প্রবাসীরা ভোটাধিকার চায়

| প্রকাশিতঃ ৫ নভেম্বর ২০১৮ | ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

ওমর ফারুক হিমেল : প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা। লাল সবুজের পতাকার জন্য তাদের মনের টান, ভালবাসা আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। প্রতিটি ক্ষণ বিভোর থাকে দেশ ভাবনায়। জাতীয় অর্থনীতির ১৩ শতাংশ যোগানদাতা এই রেমিটেন্স সৈনিকরা।

পোশাক শিল্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে এই খাত। বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ সৌদি আরব, দুবাই, কুয়েত, কাতারসহ, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। উল্লেখ্য বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা যা দেশের জিডিপির প্রায় ১৩ শতাংশ। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের অর্থে বেগবান বাংলাদেশের অর্থনীতি।

প্রবাসীরা দেশকে দেশের মানুষকে দিতে পেরে তৃপ্ত। প্রবাসীরা অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশের নির্বাচনে ভোটে অংশগ্রহন করতে চাই। প্রবাসী গোল্ডেন আর্থিক যোদ্ধাদের রেমিটেন্সের টাকায় আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে তেমনি প্রবাস থেকে ভোট প্রদান করে ইতিবাচক ভূমিকায় অংশগ্রহণ করতে চাই। বাংলাদেশ বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু বাংলাদেশী প্রবাসীদের ভোটাধিকার নেই। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের কয়েকটি প্রদেশে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাকিস্তানি প্রবাসীরা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট প্রদান করে।

বিষয় বাংলাদেশী নেপালী, ভারতীয় প্রবাসীদেরকে দারুণ নাড়া দেয়। ভোটাধিকারের বিনিময়ে ইমরান খান পাকিস্তানের বড় অর্থনৈতিক প্রকল্পে প্রবাসীদেরকে অনুদানের আহ্বান করছেন।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একই পথে হাটছেন। বলাবাহুল্য, দেশ দুইটি ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে দেশদুইটির প্রবাসীরা ভোটের প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। দূর প্রবাসে বসবাসরত উভয় দেশের নাগরিকরা ফেসবুক, টুইটার, নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকে।

তাছাড়া নির্বাচন আসলে দেখা যায় যেন ইন্টারনেটে ভোট যুদ্ধ চলছে। ভারত পাইলট প্রকল্প আকারে বিশাল জনগোষ্ঠীকে ভোটে আনার চেষ্টা করছে।একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় ভারতে প্রতি নির্বাচনী এলাকায় প্রায় বিশহাজার প্রবাসী রয়েছে। ভারতের চেয়ে উদ্বেগজনক বাংলাদেশের অবস্থান। ইন্টারনেটভিত্তিক কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৬, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৭২, কুয়েতে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬১২, ওমানে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৫১, কাতারে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ২৫, বাহরাইনে ৩ লাখ ১৫ হাজার ১২৪, ইরাকে ৩৬ হাজার ৭৯৫, লেবাননে ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৪২ ও জর্ডানে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক হিসেবে গেছেন৷ আফ্রিকার লিবিয়ায় ১ লাখ ২২ হাজার ১২৫, সুদানে ৮ হাজার ৫১২, মিশরে ২১ হাজার ৮৯০ ও মরিশাসে ৪৩ হাজার ৯৮৪ জন,দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় ১৪ হাজার ছাত্র ব্যতীত , যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ৭০ ও ইটালি গেছেন ৫৫ হাজার ৫১৪ বাংলাদেশি রেমিটেন্স যোদ্ধা।

মালয়েশিয়ায় ৭ লাখ ১০ হাজার ১৮৮, সিঙ্গাপুরে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ২৩৯, জাপানে ১ হাজার ৩৬৬, ব্রুনাইয়ে ৫১ হাজার ৩৪ এবং অন্যান্য দেশে ১ লাখ ১০ হাজার ২০৩ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন কাজ নিয়ে গেছেন৷ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বাংলাদেশর ৫২লাখের বেশি কর্মী আছেন৷ কর্মী ছাড়াও বাংলাদেশের অনেক নাগরিক এশিয়া, ইউরোপ-আমেরিকা,অষ্ট্রেলিয়া সহ উন্নত বিশ্বে উচ্চ পদে কর্মে সংযুক্ত, কেউ ব্যবসা করছেন, কেউবা গবেষণা, উচ্চতর ডিগ্রী। মোট হিসেব করলে,১ কোটি ২০ লাখ প্রবাসী বাইরে বসবাস করছেন। জাতীয় সংসদের ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় গড়ে প্রায় ৩০ হাজার প্রবাসী রয়েছেন। পুরো জনসংখ্যার ৬-৭ শতাংশ। চট্রগ্রামের কিছু কিছু নির্বাচনী এলাকায় গড়ে ১৫-২০শতাংশ। নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা,ময়মনসিংহ, সহ কিছু জেলায় প্রবাসী ভোটারের সংখ্যা অধিকতর।

এই সমস্থ এলাকায় নির্বাচনকে জনমুখী, অধিকতর প্রতিনিধিত্বশীল করতে প্রবাসীদেরকে ভোটারে অন্তভূক্ত করা জরুরী হয়ে পড়েছে।নির্বাচনে এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে অংশগ্রহণে সুযোগ দিলে নির্বাচনী পরিবেশ আরো স্বচ্ছ,প্রীতিকর,প্রাণবন্ত আরো বেশি গ্রহণযোগ্য, জবাবদিহিমূলক হবে। প্রবাসীদের চাওয়াটা যৌক্তিক, গ্রহণযোগ্য। অনেকদিন ধরে ব্রিটেন, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইটালি প্রবাসীরান নিজেদের ভোটাধিকারের কথা বলে আসছে।আমরা অবগত আছি যে,বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য।

কিছুদিন পূর্বে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেছেন প্রবাসীরা দেশের গোল্ডেন বয়। এই গোল্ডেন বয়রা বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়েছে, পাশাপাশি দেশে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। করপ্রদানেও অগ্রগামী।সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, বিশাল এই সূর্যসন্তানদের বাদ দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কেমনে সম্ভব! প্রতিবার নতুন নির্বাচন কমিশনাররা এসে কয়েকটি সেমিনার সিম্পোজিয়াম করেন,প্রবাসীদের ভোটাধিকার বিষয়ে। কার্যত কার্যকরী কোন উদ্যোগ নেয়া হয়না। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে সুনির্দিষ্ট দাবি হচ্ছে কয়েকটি দেশে আপাতত এই কার্যক্রম চালু করলে প্রবাসীরা দেশের জন্য আরো গতিশীল অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

কিছুদিন পূর্বে কমিশনের একটি সূত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, প্রাথমিকভাবে বিশ্বের যেসব দেশে বাংলাদেশি নাগরিক বেশি রয়েছে, সে দেশগুলোকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত প্রবাসীদের আগে ভোটার করা হতে পারে। পর্যায়ক্রমে সক্ষমতার পরিধি বাড়িয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের ভোটার করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও এই উদ্যোগটি এখনো চোখে পড়ছে না। প্রবাসীদের দাবিটি সম্পূর্ণ ন্যায়সংগত ও সংবিধানসিদ্ধ। দেশের অর্থনীথির প্রাণভোমরা প্রবাসীদের সংবিধান সম্মত এই দাবিটি মেনে নেয়া হোক।