কাশ্মীরে ৩২ দিনে ১৬ লাখ ছররা গুলি ব্যবহার!

fireভারতের আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফ বলেছে, কাশ্মীরে বিক্ষোভ প্রতিবাদ দমনে ৩২ দিনে তারা ১৬ লাখ ছররা গুলি ব্যবহার করেছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের হাইকোর্টকে এ তথ্য দিয়েছে সিআরপিএফ।

তিন হাজার কার্তুজ থেকে এসব ছররা ছোড়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সিআরপিএফ স্বীকার করেছে ছররা গুলি ছোড়ার যে নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে তা যে কাশ্মীরের মানুষের প্রচন্ড বিক্ষোভের মুখে সব সময় মানা যায় নি। ফলে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ছোঁড়া ছররায় কাশ্মীরের মানুষের চোখ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাশ্মীরে অন্তত চারশ’ মানুষের চোখে ছররা গুলি আঘাত করেছে বলে ধারণা করা হয়। এদের অনেকেই অন্ধ হয়ে গেছেন বা যাবেন।

ছররা বন্দুক ছাড়াও কাশ্মীরে বিক্ষোভ দমনে আরো ১৩ ধরণের অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। এ সব অস্ত্র কম প্রাণঘাতী হিসেবে পরিচিত বলে দাবি করেছে সিআরপিএফ। জুলাই মাসের ৮ থেকে আগস্টের ১১ তারিখ পর্যন্ত ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৮৬৫০ টি টিয়ার শেল ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া, সিআরপিএফ স্বীকার করেছে, প্রচন্ড শব্দ এবং আতংক সৃষ্টিকারী স্টান গ্রেনেড, মরিচ ছিটানোর অস্ত্র, স্নায়ু অবশকারী রাসায়নিক গ্রেনেডসহ আরো নানা অস্ত্রও কাশ্মীরের বিক্ষোভকারী মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে।

সেনা হেফাজতে শিক্ষকের মৃত্যু : ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় ৩০ বছর বয়সী এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। শাবির আহমেদ মুঙ্গা নামের ওই শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজনকে বুধবার কাশ্মীরের পুলওয়ামার খ্রিউ গ্রামে সেনা ও পুলিশের এক অভিযান শেষে আটক করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার শাবিরের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। স্থানীয়দের দাবির বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা খবরটি নিশ্চিত করেছে। শাবিরের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমননীতিকে কেন্দ্র করে নিহতের সংখ্যা ৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে।

শাবির মুঙ্গা নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করলেও পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আলাদা আলাদা দাবি করা হয়েছে। সেনা মুখপাত্র কর্নেল নিতিন এন জোশি দাবি করেছেন, শাবিরের মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত চলছে। আর পুলিশ বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী আর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় শাবির নিহত হয়েছেন। পুলিশ আরও জানায়, ‘পাতর নিক্ষেপকারী’ বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে উত্তরাঞ্চলীয় বান্দিপুর ও কুপওয়ারা এলাকায় সরকারি বাহিনী বুলেট, পেলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। আর প্রতিশোধমূলক হামলার আতঙ্কে নিজেদের নাম প্রকাশ না করে গ্রামবাসী বলেছেন, বুধবার ীক্রউ গ্রামে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে শাবিরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে তাদেরকে আহত অবস্থায় সেনা হেফাজতে রাখা হলে সেখানে শাবিরের মৃত্যু হয়।

শ্রীনগরের এসএমএইচএস হাসপাতালের চিকিৎসক নাজির চৌধুরী ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ২৪ জন গ্রামবাসী আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

উল্লেখ্য গত ৮ জুলাই কাশ্মীরের অনন্তনাগের কোকেরনাগ এলাকায় সেনা ও পুলিশের বিশেষ বাহিনীর যৌথ অভিযানে হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানিসহ তিন হিজবুল যোদ্ধা নিহত হওয়ার পর কাশ্মীরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ কাশ্মীরিদের দাবি, বুরহানকে ‘ভুয়া এনকাউন্টারে’ হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে পুলওয়ামা ও শ্রীনগরের কিছু অঞ্চলে কারফিউ জারি করা হয়। পরবর্তীতে বিক্ষোভের মাত্রা বেড়ে গেলে কাশ্মীরের দশটি জেলা, এমনকি দূরবর্তী গ্রামেও কারফিউ জারি করা হয়। সেই থেকে আজও পর্যন্ত কাশ্মীরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

কাশ্মীরে পাকিস্তানপন্থীদের তৎপরতা থাকলেও সেখানে সরাসরি কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবিতে লড়াইকারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে ভারতের দাবি, কাশ্মীরে যারা লড়াই করছেন তারা আসলে জঙ্গি। বিচ্ছিন্নতাবাদী। সূত্র : আলজাজিরা

কাশ্মীর প্রশ্নে সমগ্র ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিতেই সেখানকার সমস্যাকে ‘বিচ্ছিন্নতা আর জঙ্গিবাদের’ সমস্যা আকারে দেখা হয়ে থাকে। বিপরীতে কাশ্মীরিদের কাছে সেখানকার লড়াই আদতে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণের লড়াই। কাশ্মীরের স্বাধীনতার প্রশ্নে সরব খোদ ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরাও। ভূবনখ্যাত বুদ্ধিজীবী অরুন্ধতি রায় স্পষ্ট করে বলেন, সেখানে আসলে ভারতীয় বাহিনীর আগ্রাসন চলছে। অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে কাশ্মীরবাসীকে। কাশ্মীর সমস্যার একমাত্র সমাধান স্বাধীনতা। সূত্র: আল জাজিরা