মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

ছয় মামলার আসামি, ইয়াবাব্যবসায়ীর সঙ্গে পুলিশের ভুড়িভোজ!

প্রকাশিতঃ ২৩ অক্টোবর ২০১৮ | ৪:০২ অপরাহ্ন

ভুড়িভোজশেষে এসি আবদুল মাবুদের সঙ্গে সেলফি, পেছনে ইয়াবাব্যবসায়ী জালাল শাহ (লালশার্ট)। ছবি : সংগৃহীত

রাকিব হামিদ : তালিকাভুক্ত ইয়াবাব্যবসায়ী, পুলিশ মারধরের আসামি মো: জালাল শাহ। নগরীর পতেঙ্গা, কর্ণফুলী ও আনোয়ারা থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক, মারামারী, নারীনির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ছয়টি মামলা।

এসব মামলায় যেখানে পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খোঁজার কথা সেখানে তার সাথে পারকি রিসোর্টে ভুড়িভোজে লিপ্ত হয়েছেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবদুল মাবুদ। তিনি সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (অপরাধ)।

একুশে পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা যায়, আনোয়ারার পারকি বিচে ‘পারকি’ নামে একটি রিসোর্ট আছে। যেটি শীর্ষ ইয়াবাব্যাবসায়ী ও একাধিক মামলার আসামী জালাল শাহের মালিকানাধীন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে এই রিসোর্টটিতে দিনে-রাতে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। এছাড়া প্রায় সময় বসে ইয়াবা ও মদের আসর। আর সেই রিসোর্টেই গত শুক্রবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে সিএমপির সহকারী কমিশনার আবদুল মাবুদসহ কয়েকজন পুলিশকে ভূড়িভোজের আমন্ত্রণ জানান জালাল শাহ। ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মামলার আসামী জেনেও সেই আমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারেননি। সাদরে তা গ্রহণ করে অংশ নেন সেই ভূড়িভোজে।

একুশে পত্রিকার হাতে আসা দুটি ছবিতে দেখা যায়, ভোজশেষে ইয়াবাব্যবসায়ী জালালের তোলা সেলফিতে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায় পুলিশ কর্মকর্তাকে। এসময় পুলিশের পোশাকে থাকা সহকারী কমিশনার আবদুল মাবুদের ব্যাজ ঝুলে থাকতেও দেখা যায়।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে শীর্ষ ইয়াবাব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন শাহকে (৩৭) ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর পারকি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেদিন দু’শতাধিক পুলিশ সদস্য এ অভিযানে অংশ নেন।

পারকি এলাকার শেখ মোহাম্মদ শাহ’র পুত্র জালাল শাহ সেযাত্রায় কিছুদিনের মধ্যে জেল থেকে বেরিয়ে আরো বেশি করে জড়িয়ে পড়ে ইয়াবাব্যবসায়। আনোয়ারা-কর্ণফুলী জোনে গড়ে তোলেন ইয়াবার সাম্রাজ্য। পরিচিতি পান ইয়াবাসম্রাট হিসেবে। এমন একজন ইয়াবাসম্রাটের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে ভুড়িভোজ, হাস্যোজ্জ্বল ফটোসেশন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে সাধারণ্যে। সাধারণ মানুষের অভিমত, পুলিশ-অপরাধী যদি এক হয়ে যায় তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএমপির সহকারি কমিশনার (অপরাধ) আবদুল মাবুদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘সেদিন পারকি বিচে প্রতিমা বিসর্জনের ডিউটি ছিল। আমরা সিইউএফএল’র রেস্ট হাউজে দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা ছিল। আমার সঙ্গে থাকা কর্ণফুলী থানার অফিসাররা বললেন- রেস্ট হাউজে নয়, পারকি রিসোর্টে খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। তাদের কথামতো সেখানে খেতে যাই। খাবারশেষে অনেকেই আমাদের সঙ্গে ছবি, সেলফি তুলেছে। জালাল শাহকে আমি চিনি না। না চেনার সুযোগে সে হয়তো ছবিতে ঢুকে গেছে। যদি চিনতাম, জানতাম তাহলে জালাল শাহ’র রিসোটে খেতে যেতাম না, ছবিও তুলতাম না। যা হয়েছে আমার অজান্তে, সরলতার সুযোগে হয়েছে। এজন্য আমি দুঃখিত ভাই।’

একুশে/আরএইচ/এটি