চট্টগ্রাম : আড়াই বছরের শিশুকন্যা ফয়জুন্নেছা। স্বাভাবিকভাবেই মায়ের বুক তার কাছে আরামের বিছানা, নিরাপত্তার বড় চাদর। শনিবার মধ্যরাতে মুহূর্মূহু বজ্রপাতের শব্দে ভীতসন্ত্রস্থ শিশুটি পরম ভরসায় মাকে জড়িয়ে ধরে।
যতই ঝড়-তুফান, দুর্যোগ-দুর্বিপাক আসুক, নিজে মরবে কিন্তু মেয়েক মরতে দেবে না। সেই পণ নিয়ে পরম মমতায় নূরজাহান বেগম বুকে শক্ত করে আগলে রাখেন মেয়েকে। টানা বর্ষণ, বজ্রপাতের মাঝেই বুকের ধন বুকে নিয়েই ঘুমাতে যান।
সেখানেই দেয়াল ধসে পড়ে, হানা দেয় মৃত্যুদূত। একসঙ্গে মা-মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিল ঠিকই; কিন্তু মা’র বুক থেকে মেয়েকে একটুও আলাদা করতে পারেনি। বরং মৃত্যুদূতের থাবায় শিশুটি আরও শক্ত করে যেন জড়িয়ে ধরল বুকের আশ্রয়টিকে। মেয়েকে জড়ানো হাতের বাধনটিও মজবুত করলেন মা। তবুও শেষরক্ষা হল না তাদের।
নগরের ফিরোজ শাহ এলাকায় দেয়াল ধসে নিহতদের যখন উদ্ধার করা হচ্ছিল তখনো মার বুকে শিশু ফয়জুন্নেছার শক্ত আশ্রয়, প্রশান্তির ঘুম! রাত পোহালেই জাগবে তারা। কিন্তু না, তারা আর কখনো জাগবে না। চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেছে মা-মেয়ে।
এভাবে উদ্ধারের পর মায়ের বুক থেকে শিশুটিকে আলাদা করতে যেন বুক কাঁপছিল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। তবুও একটা সময় তাদের আলাদা করতে হলো। গোসল হল, সাদা কাপড়ে শবযাত্রা হল। এরপর মা-মেয়ের ঠিকানা হলো আলাদা আলাদা কবরে। তবে তা অনেককে কাঁদিয়ে, চোখের পানি ঝরিয়ে।
একুশে/এসসি/এটি