চট্টগ্রাম : উত্তরাধিকার-যোগ্যতাকে অন্যতম পুঁজি ধরে চট্টগ্রাম থেকে মনোনয়ন দাবিতে মাঠে সরব আছেন আওয়ামী পরিবারের ৬ সন্তান। এরা হলেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আবদুল লতিফ টিপু, হেলালউদ্দিন চৌধুরী তুফান, জসিম উদ্দিন, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার এবং মুজিবুর রহমান।
মনোনয়নের আশায় প্রায় প্রতিদিনই নানা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে হাজির হচ্ছেন তাঁরা। অংশ নিচ্ছেন দলীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে। নগরজুড়ে ব্যানার-ফেস্টুন, পোস্টার সেঁটে তুলে ধরছেন বাবার কীর্তি, অবদান। সেই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান, হতে চান এমপি।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া-চকবাজার) আসন থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান। সেই পরিচয়েই দেড় বছর আগে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নিযুক্ত হন তিনি। আর এখন চাইছেন মনোনয়ন। অন্যদের মতো ব্যানার-পোস্টারে মনোয়ন না চাইলেও এলাকায় এলাকায় মতবিনিময়, ঈদপুনর্মিলনী, মেজবান-ইত্যকার আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছেন নওফেল-এমনটা মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
একই আসনে মনোনয়ন চান চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নানের জ্যেষ্ঠ সন্তান আবদুল লতিফ টিপু। তিনি নগর আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য। তার প্রয়াত পিতা এম এ মান্নান এ আসন থেকে ১৯৯৬ সালে এমপি হয়ে শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রথমে প্রতিমন্ত্রী এবং পরে পূর্ণমন্ত্রী হন। শুধু এ আসন নয়, সমগ্র চট্টগ্রামের উন্নয়নে এম এ মান্নানের অবদান আছে। আছে অসীম ত্যাগ-বাবার এমনসব কীর্তি, কর্মযজ্ঞ সঙ্গী করে মানুষের কাছে হাজির হচ্ছেন টিপু। সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থাকছেন সরব, সক্রিয়। চট্টগ্রাম-৯ আসনের সর্বস্তরের মানুষের ব্যানারে নৌকার প্রার্থী মর্মে নগরে সেঁটেছেন পোস্টার।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, সাবেক মন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরীর পরিবার থেকে মনোনয়ন চান তাঁর দুই পুত্র। একজন হেলালউদ্দিন চৌধুরী তুফান, অন্যজন কানাডা প্রবাসী জসিম উদ্দিন।
হেলালউদ্দিন চৌধুরী তুফান চান চট্টগ্রাম-১০ আসনে মনোনয়ন। চট্টগ্রাম-১০ আসনের জনগণের ব্যানারে ’নৌকা প্রতীকে হেলালউদ্দিন চৌধুরী তুফানকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই’ মর্মে রঙিন পোস্টারে চেয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগর। ফিশিং ও গার্মেন্টস ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত তুফানকে বিভিন্ন সামাজিক, সাংগঠনিক অনুষ্ঠানেও ইদানীং সরব দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম ১৪ দলের প্রোগ্রামসহ নানা অনুষ্ঠানে।
জহুর আহমদ চৌধুরীর আরেক সন্তান কানাডা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মনোনয়ন চান চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে। একবছর ধরে মনোনয়ন-দাবিতে সরব আছেন তিনি। তার এ সংক্রান্ত পোস্টার-ব্যানারে চেয়ে গেছে চট্টগ্রাম। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তিনি। ক’দিন আগেও চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাকোটা পুনর্বহালের দাবিতে নগরের সিটি গেট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল এবং টায়ার পুড়িয়ে সড়ক-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে এই সংগঠনটি। সেখানে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে জসিম উদ্দিনকে।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে মনোয়ন-দাবিতে মাঠে সরব বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা এম এ আজিজের সন্তান সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে। ঈদ-পূজা-পার্বণ ইত্যাদি ইস্যুতে পোস্টার ছাপিয়ে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন গত একবছর ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে ছেপেছেন নৌকা প্রতীকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই মর্মে চোখধাঁধানো পোস্টার। পোস্টারে চট্টলশার্দুল, একদফার প্রবক্তা, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এম এ আজিজের সুযোগ্য সন্তান উল্লেখ করে নিজ আসনের সর্বস্তরের মানুষের উদ্ধৃতি দিয়ে চাইছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।
বৈদেশিক, কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বি.এসসির পুত্র মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকলেও মনোনয়ন চাইছেন চট্টগ্রাম-৮ এবং চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে। এজন্য তিনি চট্টগ্রামের শিক্ষার প্রসারে বাবা নুরুল ইসলাম বি.এসসির ব্যক্তিগত অবদান, দান-অনুদানের বিষয়গুলোকে সামনে আনছেন। পোস্টার ছাপিয়ে, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। বলছেন, রাজনীতির পদে না থাকলেও তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। ছোটকাল থেকে বাবার হাত ধরে সমাজবদলের সারথী হয়েছেন। সেই কারণে চট্টগ্রাম-৮ অথবা ৯ আসন থেকে এমপি হয়ে বৃহত্তম পরিসর থেকে সমাজবদলে কাজ করতে চান।
মনোনয়নের জন্য উত্তরাধিকার ‘তকমা’ ছাড়া আর কী যোগ্যতা আছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-৯ আসনে মনোনয়ন-প্রত্যাশী আবদুল লতিফ টিপু একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমি ছোটকাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ওয়ার্ড, থানা এবং মহানগর পর্যায়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগের রাজনীতি করে এ পর্যায়ে এসেছি। একদিনও রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম না। সঙ্গে আমার প্রয়াত পিতা এম এ মান্নানের নিষ্কলুষ ‘নেম অ্যান্ড ফেম’।’
এছাড়া আমার সমস্ত আত্মীয়স্বজন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, দলের সচেতন শক্তি। কোতোয়ালী আসনের ভোটব্যাংক খ্যাত বৃহত্তর বাকলিয়ায় আমার নানার বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি, খালার বাড়ি, ফুফুর বাড়ি। তাদের সেখানে যথেষ্ট প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং অবস্থান আছে। ‘৯১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হলেও আমাদের আত্মীয়স্বজনের অবস্থানের কারণে ‘৯৬ সালে আমার প্রয়াত পিতা এম এ মান্নান প্রায় ২০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এসব কারণে আমি কোতোয়ালী আসনে নিজেকে উপযুক্ত মনে করছি, মনোনয়ন চাইছি।-বলেন টিপু।
একুশে/এটি