চট্টগ্রাম : বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেঁনে হোলেনস্টাইন বলেছেন, মানবাধিকারের ধারণা শুধুমাত্র রাজনৈতিক অধিকার নয়, এখানে দৈনন্দিন চাহিদা ও মৌলিক অত্যাবশ্যকীয় সামাজিক সেবার অধিকারগুলো অর্ন্তভুক্ত। পৃথিবীর অনেক দেশে রাজনৈতিক অধিকার খর্ব হলে মানবাধিকার লংঘন বলে হৈ চৈ হয়।
প্রকৃতপক্ষে মানবাধিকারের পরিস্কার ধারণা পেতে হলে সকল মানুষের রাজনৈতিক অধিকারের পাশাপাশি সামাজিক, আর্থ-সামাজিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত হতে হবে। অন্যদিকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেই দেশ উন্নত হয় না, মানবিক গুণাবলীর উন্নয়ন, চিন্তা, বাকস্বাধীনতা ও অন্যের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজে মানবাধিকার সুরিক্ষত বলা যাবে না। তাই মানবিক উন্নয়ন বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ আরো জোরদার করার তাগিদ বিশ্বব্যাপী জোরালো হচ্ছে। জাতিসংঘ সর্বজনীন মানবাধিকারের ৭০ বৎসর পুর্তি হলেও এখনও ইউএনএইচসিআরের ঘোষণা সম্পর্কে সাধারণ জনগণ, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলরা সম্যক অবহিত নয়। সেকারণে মানবাধিকার বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তৃণমূল পর্যায়ে মানবাধিকার শিক্ষাকার্যক্রম জোরদার করা ও মানবাধিকার সুরক্ষায় নিয়োজিত নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে নেটওর্য়াকিং জোরদার করতে হবে।
রোববার (৭ অক্টোবর) নগরের চট্টগ্রামের জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে চিটাগাং সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম-সিএসডিএফ, স্টেপস টুয়ার্ডস্ ডেভেলপমেন্ট, সুইজারল্যান্ড দূতাবাস, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিস, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যান্ড ফোরাম অন হিউম্যান রাইটস্ জেনেভার উদ্যোগে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ৭০তম বার্ষিকী পালন উপলক্ষে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুইস রাষ্ট্রদূত উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
সিএসডিএফ’র চেয়ারপার্সন ও ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং স্টেপস্ টুয়ার্ডস্ ডেভেলপমেন্ট’র নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার ও সিএসডিএফ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিসের সিনিয়র হিউম্যান রাইটস্ অ্যাডভাইজার হেইকে আলেফসন। প্যানেল আলোচক ছিলেন নাগরিক উদ্যোগ’র প্রধান নিবাহী জাকির হোসেন, মানবাধিকার কর্মী জেসমিন সুলতানা পারু এবং তরুণদের প্রতিনিধি ইসমাইল মিন্টু ও সুবর্ণা সেলিম।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের প্রতিনিধি সাবিনা ইয়াছমিন লুবনা, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিস’র জাহিদ হোসেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সরকারি সিটি কলেজের অধ্যাপক আলেক্স আলীম, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানু, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আঞ্জুমান আরা বেগম, আবিদা আজাদ, কাপাসগোলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী অর্পিতা পাল, পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুমিনুল, উন্নয়নকর্মী এম এ সেলিম, মো. ওবায়েদুর রহমান, আলাউদ্দীন, সমাজকর্মী নিশি আকতার, রুখসানা আখতারুন্নবী, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, হারুন গফুর ভুইয়া, আলমগীর বাদসা, নুরী মাহফুজা প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৪৮ সালে সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা প্রণীত হলেও, দেশের সংবিধানে রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি মিললেও সামাজিক মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলোর পুরোপুরি প্রতিফলন ঘটেনি। প্রতি চারবছর পর পর বিশ্বমানবাধিকার পরিস্থিতির প্রতিবেদন জাতিসংঘ মানবাধিকার ফোরামে উপস্থাপন করা হয়। অবকাঠামো, শিল্পোন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও মানবিক উন্নয়ন, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় সত্যিকারের উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর সহজ হবে না। সে কারণে মানবিক উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান বাড়ানোর খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। তা নাহলে ইয়াবা, জঙ্গিবাদ, ইন্টারনেটের অপব্যবহারসহ নানা সামাজিক ব্যাধির বিস্তার রোধ কঠিন হবে। সে কারণে মানবিক শিক্ষায় তরুণদের বেশি করে সম্পৃক্ত করা, মানবাধিকার সুরক্ষায় নাগরিক উদ্যোগ জোরদার করা, সামাজিক শক্তিগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।
সভায় বলা হয়, মানবাধিকারের নামে হাজার হাজার সংগঠন কাজ করলেও প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লংঘন ঘটেই চলেছে। অনেকেই মানবাধিকারের নামে নানা ধরনের অপকর্মেও যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনায় কী আছে তা সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। অথচ মানবাধিকার পদক ও সনদ বিতরণ করে যাচ্ছে। এতে প্রকৃত মানবাধিকারকর্মীদের ত্যাগের অবমুল্যায়ন হচ্ছে।
এর আগে কন্যাশিশুর নির্যাতনের মুক্তির সংগ্রাম নিয়ে প্রণীত স্বল্পদৈর্ঘ ডকুমেন্টারি ‘সুনিতা’ প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, জনপ্রতিনিধি, উন্নয়নপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম, মানবাধিকার, নারীঅধিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
একুশে/প্রেসবিজ্ঞপ্তি/এটি