চট্টগ্রাম : আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হতে হাতে-কলমে দুই মাস ১৩ দিন বাকি। তাতে কী? তার আগেই সরকার দলীয় সাংসদরা নিজ নিজ এলাকায় রীতিমত নির্বাচনী শোডাউনে ব্যস্ত।
পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম-১১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তাই ছেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় প্রকারান্তরে নির্বাচনী শোডাউন করেছেন তিনি। গতকাল (৫ অক্টোবর) রাত থেকে এমন কথা মুখে মুখে ফিরছে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে।
শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের বিমানবন্দর সড়কে অভিজাত চিটাগাং বোট ক্লাবে এমপি লতিফের দ্বিতীয় ছেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। বর ওমর খৈয়াম ও কনে স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের কন্যা মাইশা ফাহমিদা।
আদতে এমপি-পুত্রের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান হলেও বর নয়, অনুষ্ঠানের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন এমপি লতিফ নিজেই। এতে মন্ত্রী-এমপি, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রশাসনের সকলস্তরের ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে মন্ত্রীদের মধ্যে কেবল নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের উপস্থিতিই দেখা গেছে।
রাত ৮টা ৫০ এর দিকে মন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এসময় এমপি লতিফ মন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বর-কনের মঞ্চে নিয়ে যান।
এছাড়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বর-কনেকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, সীতাকুণ্ডের এমপি দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো: আবদুল মান্নান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) মাসুদ উল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ, ফটিকছড়ির প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
ভিআইপি অতিথি ছাড়াও আমন্ত্রণ জানানো হয় বন্দর-পতেঙ্গা নির্বাচনী এলাকার দশ ওয়ার্ডের ৮ হাজার নেতাকর্মীকে। তাদের যাতায়াতে ব্যবস্থা করা হয় ১০০টি বাস।
ছেলের বিয়ের আড়ালে নির্বাচনী এই শোডাউনে অতিথি আপ্যায়নেও ছিল এলাহী কারবার। প্রায় ৩০ হাজার অতিথির জন্যে বোট ক্লাব প্রাঙ্গণ জুড়ে টাঙানো হয় বিশাল সামিয়ানা। যেখানে ১০০টি টেবিলে একসাথে ১২শ’ মানুষের খাবার আয়োজন ছিল।
এই বিপুল পরিমাণ অতিথি আপ্যায়নে ৬ হাজার ১০০টি মুরগী, প্রায় ১০ মণ ওজনের ৩ টি গরু, ১২০ টি খাসির ব্যবস্থা করা হয়। খাবারের মেন্যু ছিল- মোরগ পোলাও, কালা ভুনা, খাসির রেজালা, চিকেন রোস্ট, চিংড়ি, চিকেন কিমা, বোরহানি, আইসক্রীম। তবে ভিআইপি ও সাধারণ অতিথি ভেদে খাবার তালিকায় ছিল ভিন্নতা। সাধারণ অতিথিদের জন্য বোট ক্লাব প্রাঙ্গণে খাবার ব্যবস্থা থাকলেও ভিআইপিদের জন্য বিমান বাহিনীর ফ্লাই ভিউ রেস্টুরেন্ট ও গলফ ক্লাবে খাবারের আয়োজন করা হয়।
এদিকে বাহারি পদের খাবার তৈরির দায়িত্ব পালন করেন ঢাকার শাহ আলম বাবুর্চি। তার নেতৃত্বে ৫৫ জন কর্মচারী দুইদিন ধরে রান্নার কাজে যুক্ত ছিলেন। এত সব আয়োজনের পরেও শেষ দিকে খাবারে সংকট দেখা দেয়। এসময় অনেক অতিথিকে খোলা মাঠে সামিয়ানার নিচে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অনেকে খাবার না পেয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কির মুখেও পড়তে হয় অনেক অতিথিকে।
৩৮ নং ওয়ার্ডের অনেক নেতাকর্মী পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা যায়। এজন্য তারা অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেছেন। অবশ্য খাবার স্বল্পতার কারণে যারা খেতে পারেননি রাত ১১ টার দিকে তাদের জন্য ফের রান্না করার তৎপরতা শুরু করতে দেখা যায়।
বিবাহোত্তর সংবর্ধনার অনুষ্ঠানস্থল বিমানবন্দর সড়কের পাশেই অবস্থিত। ফলে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দর ও আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েতে হয় শতাধিক বিমান যাত্রীকে। অতিথিদের শত শত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পাজেরো প্রবেশ ও বের হতে গিয়ে সড়কে দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। এতে সড়কে থাকা অন্যান্য গাড়িগুলোও আটকে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে যানচলাচল।
যানজট দূর করতে অর্ধ-শতাধিক ট্রাফিক ও থানা পুলিশের সদস্যকে হিমশিম খেতে হয়। তবে রাত সাড়ে ১১ টার পর সড়কের যানজট কিছুটা কমতে থাকে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়াকে ফোন করে যানজটের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ভাই এমপি স্যারের ছেলের বিয়ে উপলক্ষে খুব দৌড়ের উপর আছি। একদিকে যানজট, আরেকদিকে ভিআইপিদের প্রটোকল-সবমিলিয়ে আমাদের ত্রাহি অবস্থা। এরপর অন্যসময় কথা বলবেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন তিনি।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত একাধিকবার ফোন করেও সংসদ সদস্য এমএ লতিফের মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। প্রতিবারই তাঁর সেলফোনের সুইচ অফ পাওয়া যায়। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারি (পিএ) মো. ইকবাল একুশে পত্রিকাকে জানান, এমপি সাহেব কালকের বিশাল অনুষ্ঠান সামাল দিয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তাই মোবাইল ফোন বন্ধ করে তিনি বাসায় ঘুমাচ্ছেন।
একুশে/এটি
ছবি-ভিডিও : আকমাল হোসেন