আহত কলেজছাত্রের মৃত্যু, চমেক থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় মুমূর্ষুকে!

চট্টগ্রাম : ৪৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শেষপর্যন্ত না ফেরার দেশে চলে গেলেন পটিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত আবির ইসলাম ফাহিম (১৯)। ফাহিম বোয়ালখালী সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।

বুধবার দিনগত রাত সোয়া ১টার দিকে ডাক্তাররা ফাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে নগরে ট্রিটমেন্ট মেডিকেল সেন্টারের আইসিইউতে রেখে তাকে বাঁচিয়ে তোলার সব চেষ্টাই করেছিলেন ডাক্তাররা।

ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ফাহিমের চিকিৎসার সার্বক্ষণিক তদারক করেন। ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন দুর্ঘটনার পরপরই ফাহিমের ব্রেন অকেজো হয়ে গিয়েছিল।

জানা যায়, সোমবার (১ অক্টোবর) রাত ১২ টার দিকে বন্ধু জুয়েলের ডাকে মোটর সাইকেল নিয়ে বোয়ালখালী থেকে পটিয়া শাকপুরা যাচ্ছিলেন ফাহিম। পরদিন শাকপুরায় জুয়েলদের একটি দোকান উদ্বোধনের কথা ছিল। এ উপলক্ষে অতিথি আপ্যায়নসহ নানা প্রস্তুতি তদারক করতেই মূলত শাকপুরা যাচ্ছিলেন ফাহিম। পথিমধ্যে পটিয়া ছন্দা সিনেমার সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা সিএনজি অটোরিক্সার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটর-সাইকেল আরোহী ফাহিম মাথায় গুরুতর আঘাত পান।

প্রত্যেক্ষদর্শীরা ফাহিমকে উদ্ধার করে রাত ২টার দিকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে আশঙ্কাজনক ফাহিমকে আইসিইউ খালি না থাকার অজুহাতে চমেক হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর রাত ৩টার দিকে ট্রিটমেন্ট সেন্টারের আইসিইউতে ফাহিমকে ভর্তি করান স্বজনেরা।

চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে বুধবার রাত সোয়া ১ টার দিকে ফাহিম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব ধোরলা গ্রামের ওমান প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম ভুট্টোর দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে ফাহিম সবার বড়।

বৃহস্পতিবার বাদ আছর স্থানীয় আব্বাস আলী ফকিরের মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে ফাহিমকে দাফন করা হয়। জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সম্ভাবনাময় তরুণ ফাহিমকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা পাগলের মতো হয়ে গেছেন। ফাহিমের মামা নুরুল আবছার একুশে পত্রিকাকে বলেন, চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে রাখতে পারলে আমার ভাগিনাকে হয়তো বাঁচানো যেত। দুর্ঘটনার পরপর আমরা পাগলের মতো ছুটে গিয়েছি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। কিন্তু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ আইসিইউতে সিট খালি না থাকার অজুহাতে আমাদেরকে নিষ্ঠুরভাবে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমাদের কোনো আহাজারিই তারা শোনেনি।

আবছার বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের নানা উন্নতি, অগ্রযাত্রার কথা শুনি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা, মুমূর্ষু রোগীকে সরকারি হাসপাতাল থেকে অমানিবকভাবে তাড়িয়ে দেয়াই কি স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নের নমুনা- প্রশ্ন রাখেন নুরুল আবছার।

একুশে/এটি