সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

‌’স্বাস্থ্যবান মুরগী পেয়েছি, ভালো ধান্ধা হবে’

প্রকাশিতঃ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ৬:১১ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : অভিযোগকারিকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে অপহরণ করে এবং গাড়িটি ১০-১৫ মিনিট চলার পর ১ নং আসামি অভিযোগকারির ডান পকেটে হাত ঢুকিয়ে প্যান্টে রক্ষিত নগদ সাড়ে ৮ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। এসময় ১ নং আসামী ২ নং আসামিকে উদ্দেশ্য করে বলে যে, ‘আজকে স্বাস্থ্যবান মুরগী পেয়েছি, ভালো ধান্ধা হবে’।

তখন ২ নং আসামী অভিযোগকারিকে উদ্দেশ্য করে বলে যে, বাঁচতে হলে তোর পরিবারের লোকদেরকে ফোন দিয়ে ১ লাখ টাকা নিয়ে একঘণ্টার মধ্যে পটিয়া থানার মোড়ে আসতে বল। অভিযোগকারির মনে ভয় সৃষ্টির লক্ষ্যে অভিযোগকারিকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে উক্ত গাড়ি নিয়ে লক্ষ্যহীনভাবে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকে আসামিরা।

পটিয়া থানার ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতের এক আইনজীবীকে এভাবেই হয়রানি করার তথ্য উঠেছে এসেছে ভুক্তভোগী আইনজীবী রিগ্যান আচার্য্যের আদালতে দায়ের করা মামলায়।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ ইসমাইল হোসেনের আদালতে ভিকটিম রিগ্যান আচার্য্য মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি গ্রহণ করে দুদকের ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার আসামিরা হলেন পটিয়া থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) খাজু মিয়া (১ নং), সহকারি উপ পুলিশ পরিদর্শ (এএসআই) মো: মাসুম (২ নং), মো: বশির (৩ নং), কনস্টেবল হুমায়ুন (৪ নং) ও মো: খোরশেদ (৫ নং)।

বাদিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সেলিম উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

অ্যাডভোকেট সেলিম উদ্দিন চৌধুরীর এজাহারের উদ্ধৃতি দিয়ে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘পটিয়ার ধলঘাটস্থ শ্বশুরবাড়ি থেকে বিশ্বকর্মাপূজা শেষ করে শহরে আসার উদ্দেশ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ১টায় পটিয়া ধলঘাট ক্যাম্পের কাছে একটি গাড়িকে সিগন্যাল দেন ভিকটিম রিগ্যা আচার্য্য। সামনে থামলে দেখতে পান সেটি পুলিশের গাড়ি। এসময় পুলিশ অ্যাডভোকেট রিগ্যঅনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এর প্রতিবাদ জানালে অভিযুক্ত পুলিশের সদস্যরা রিগ্যানকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নিয়ে তার পকেট থেকে ৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় পরিবারের সদস্যদেরকে ফোন করে ১ লাখ টাকা নিয়ে পটিয়া থানার সামনে আসতে বলার জন্য চাপ দিতে থাকে। বাদি পরিবারের সঙ্গে কথা বলার ভান করে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে সেই ফোন থেকে পুলিশের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। পরিচয় পাওয়ার পর বাদিকে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দেয় পুলিশ।’

‘কিন্তু পরক্ষণে তারা আবার সিদ্ধান্ত নেয় যে, বাদিকে মাতাল সাজিয়ে ছাড়বে। এজন্য পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় অাইনজীবী রিগ্যানকে। এরপর ভোরে থানায় নিয়ে গিয়ে ডিউটি অফিসারের কক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে জোরপূর্বক দুটি সাদাকাগজে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করে। এতে বাদি অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যলা মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করে। আইনজীবীর সমিতির সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ওসির ফোনালাপের পর ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় রিগ্যান আচার্যকে ছাড়ে পুলিশ।’ বলেন আইনজীবী সেলিম উদ্দিন চৌধুরী।

মামলায় দুর্নীতি দমন আইন ১৯৪৭ এর (৫) ২ ধারা সাথে দন্ডবিধির ১৬১ ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।

একুশে/এটি