ঢাকা : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের ঘুষ না দেওয়ায় বরাদ্দ কম পাওয়া এবং পাজেরো চাওয়ার অভিযোগের প্রমাণ ৭ দিনের মধ্যে দিতে বলেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার ‘পত্রিকায় প্রকাশিত বক্তব্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান’ শিরোনামের এক চিঠিতে মেয়র নাছিরের কাছে তার উত্থাপিত অভিযোগগুলোর প্রমাণ চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জ্যোতির্ময় দত্তের স্বাক্ষর রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প অনুমোদন এবং বরাদ্দ পেতে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘুষ চান; মন্ত্রণালয়ের জনৈক যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা আপনার কাছে একটি নতুন পাজেরো জিপ চেয়েছেন, ৫ শতাংশ ঘুষ দিলে আপনি ৮০ কোটির পরিবর্তে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতেন ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করে গত ১০ আগস্ট চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মর্মে ১১ আগস্ট বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার আনীত এ অভিযোগসমূহ গুরুতর। এতে মন্ত্রণালয় তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে- যার প্রমাণ প্রদান আবশ্যক।’
এতে আরও বলা হয়, ‘এ পরিপ্রেক্ষিতে কোন কর্মকর্তা, কোথায়, কখন আপনার কাছে ঘুষ দাবি করেছেন, কে, কোথায়, কখন পাজেরো জিপ চেয়েছেন, কোন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে কোন কর্মকর্তা জটিলতার সৃষ্টি করেছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক উপযুক্ত প্রমাণ আগামী সাতদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এর আগে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় সরকার সচিব আবদুল মালেক বলেন, ‘তাকে (নাছির) ব্যাখ্যা দিতে হবে। হি মাস্ট গিভ এক্সপ্লানেশন, পরিষ্কার কথা। আমরা তার কাছে জানতে চাইব, প্রমাণ চাইব। তিনি প্রমাণ দেবেন যে, মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা তার কাছে জিপ চেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটার সত্যতা যা আছে, উনি যে কথাগুলো বলেছেন। উনি একজন রাজনৈতিক নেতাও। সুতরাং উনার বক্তব্য উনিই সেটেল করুক। আমরা উনার কাছে ব্যাখ্যা চাচ্ছি আজকেই।’
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু জবাই ও দ্রুত বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সভায় যোগ দিতে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সঙ্গে আ জ ম নাছিরও এসেছিলেন।
আ জ ম নাছির উদ্দীনের উপস্থিতিতেই সাংবাদিকেরা পত্রিকায় প্রকাশিত মেয়র নাছির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ওনার (নাছির) কাছে কে ঘুষ চেয়েছেন ওনিই ভালো জানবেন। এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। তাই অভিযোগ তাকেই প্রমাণ করতেই হবে। কারণ এখানে সরকার ও মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি জড়িত।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ত্যাগ করার সময় সাংবাদিকরা বুধবারের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আ জ ম নাছির বলেন, ‘কথাবার্তা চলছে চলুক। আমার মত করে আমি বলব। আমি মিটিংয়ে আসছি, তাই এই বিষয়ে এখন কিছু বলতে চাই না।’
ব্যাখ্যা চাওয়ার চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র নাছির বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো চিঠি পাইনি। আমাকে কিছু বলা হয়নি।’
চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এধরনের কথা কখনো শুনিনি এটা বলতে পারি। মিনিস্ট্রির কাজ ডেভেলপমেন্ট (উন্নয়ন) করানো। ডেভেলপমেন্ট করাতে হলে টাকা দেবে সরকার। মিনিস্ট্রি তো তার নিজস্ব ডেভেলপমেন্টের স্বার্থে সরকারের কাছে এ সব ডিপিপিগুলো পাঠাবে। আমাদের চেয়ে অনেক সময় ওনাদের তাড়া বেশি থাকে। টাকাটা এনে দিতে পারলে ঢাকার কাজ বেশি হবে, রাজশাহীর কাজ তাড়াতাড়ি হবে।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি, এটা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। এ ধরনের অভিযোগ যদি তিনি (চট্টগ্রামের মেয়র) করে থাকেন তবে অবশ্যই এটির তদন্ত হওয়া উচিত।’