ব্যবসায়ী সামশুলের ‘রাজনীতিক’ হতে গিয়ে…

shamsul alam

চট্টগ্রাম : কেন্দ্রীয় বিএনপিতে ’বাণিজ্য’ অথবা ‘শিল্প’ বিষয়ক পদ চেয়েছিলেন তিনি। এ জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে চেষ্টা তদবিরও কম করেননি। আশ্বাসও মেলে সেখান থেকে। কিন্তু শনিবার ঘোষিত ৫০২ সদস্যের কমিটিতে শিল্প, বাণিজ্য কোনোটাতে নেই তিনি। আছেন পুরোনো সেই ‘সদস্য’ পদে। এই অবস্থা দেখে রীতিমতো হতবাক তিনি। মানসিক বিপর্যস্ততায় দাঁড়িয়ে স্বজন-শুভার্থীদের বলছেন, রাজনীতি করতে গিয়ে সব হারালাম আমি। বলছিলাম চট্টগ্রামের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ ইলিয়াস ব্রাদার্সের কর্ণধার মো. সামশুল আলমের কথা।

২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে কোতোয়ালী আসনে এমপি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন সামশুল আলম। এ কারণে আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতাদের কাছে টানার চেষ্টা করেন। মনোনয়নের জন্য নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরামর্শে আওয়ামী লীগের তৃনমূলের ভোটে অংশ নেন। সেই ভোটে তাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভোটবাক্স নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়াসহ নানা নাটকীয় ঘটনাও ঘটে। শেষমেষ আওয়ামী লীগে জায়গা হয়নি তার। কিন্তু বসে থাকেননি সামশুল। কোতোয়ালী আসনে রাতারাতি বিএনপির মনোনয়ন বাগিয়ে আনেন। খালেদা জিয়ার নির্দেশে তাকে জায়গা করে দিতে দীর্ঘদিনের পুরনো আসন ছেড়ে বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানকে চট্টগ্রাম-৯ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে অনেকটা ‘এতিম’-এর মতো নির্বাচন করতে হয়।

নির্বাচনের আগের রাতে ৫৫ লাখ টাকার বস্তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন সামশুল আলমের সমর্থকরা। ৪৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুল ইসলাম বি.এসসি’র কাছে পরাজিত হয়েও ঘরে ফিরে যাননি সামশুল। দুইবছরের মধ্যে একে একে বিএনপির শীর্ষসব পদ কব্জায় নিয়ে আসেন। ২০১০ সালে নগর বিএনপির ৫ সদস্যের কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হন। এরপর কোতোয়ালী থানা বিএনপির সভাপতি এবং কিছুদিনের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য।

বিএনপির সুদিন আসবে, এমপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন-এই আশায় সরব থাকেন বিএনপির রাজনীতিতে। এসময় বিএনপির অন্যতম ‘ডোনার’ হিসেবেও নিজেকে মেলে ধরেন। কিন্তু রাজনীতিতে ‘ফুলটাইমার’ হতে গিয়ে লাঠে উঠে ব্যবসা। বন্ধ হয়ে যায় ‘দাদা’ মিনারেল ওয়াটার। সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে ‘দাদা’ সয়াবিন তেল এবং ‘বিটুমিন’ ব্যবসা। বাড়ে দেনা, কমে স্টাফ, ছোট হয়ে যায় ব্যবসার সামগ্রিক কলেবর। একপর্যায়ে চেক ডিজঅনার মামলারও আসামী হয়ে আদালতে যেতে হয় তাকে। এরমধ্যেই তিনটি রাজনৈতিক সহিংসতা মামলার আসামীও হয়ে যান। এসবের হিসাব মেলাতে পারেন না সামশু। পেছনে যাবারও সুযোগ নেই। তাই প্রাণপণ চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো একটি সম্পাদকীয় পদে থেকে ধীরে ধীরে এগোতে। কিন্তু সেই সুযোগ হলো না। ঠাঁই হলো না তিন সদস্যের ঘোষিত নগর কমিটিতেও।

তার ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, সামশুলের এখন অর্থনৈতিক ভাটা চলছে। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত পদ জোটেনি তার কপালে। যখন অঢেল অর্থ ছিল তখন পদ-নেতা সবই ছিল তার।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দুপুরে পদবঞ্চিত সামশুল আলমের কাছে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।

নগর বিএনপির নতুন সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি একুশেপত্রিকাডটকমকে বলেন, কোতোয়ালী থানা বিএনপির সভাপতি আমিই করেছিলাম তাকে (সামশু)। ‘আমার সঙ্গে যখন ছিলেন পদ-মিটিং সবটাতেই ছিলেন। আমাকে বাঁশ দিতে গিয়ে শেষপর্যন্ত বাঁশটা তিনিই খেলেন।

সামশুল আলমের সঙ্গে কথা বলতে না পেরে তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) এনামুল হককে ফোন করা হলে একুশেপত্রিকাডটকমকে তিনি বলেন, ২০১০ সালে স্যারের (সামশুল আলম) সহযোগিতা নিয়ে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন ডা. শাহাদাত সাহেব। এরপর নগর যুবদলের কমিটি নিয়ে একগুঁয়েমির কারণে তার বিরুদ্ধে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছিলেন বিএনপির ১১ থানার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। এসময় সামশুল আলম সাহেবই একমাত্র নেতা যিনি শাহাদাত সাহেবের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সেই অনাস্থা ঠেকিয়েছেন।

রাজনীতির কারণে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন দাবি করে সামশুল আলমের এই ব্যক্তিগত সহকারী আরো বলেন, গত সাড়ে সাত বছরে রাজনীতির জন্য তিনি অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। যখন-তখন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। একের পর এক মামলার আসামী হয়েছেন। এতকিছুর পরও তিনি অবহেলিত, অবমূল্যায়নের শিকার। তার বড় সমস্যা হলো তিনি এখন অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল। রাজনৈতিক কৌশল ও মারপ্যাঁচ জানেন না। রাজনীতিতে সরল ও ভালো মানুষগুলো উপেক্ষিত হন সেটা আরেকবার প্রমাণ হলো।